IQNA

কুরআনের সূরাসমূহ/৩৬

সূরা "ইয়াসিন"; কুরআনের হৃদয় ও সারাংশ

0:01 - October 19, 2022
সংবাদ: 3472673
তেহরান (ইকনা): পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন বিষয়বস্তু বর্ণিত আছে, তবে কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল বিষয়বস্তুকে ধর্মের তিনটি মূলনীতি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যেমন একেশ্বরবাদ তথা তৌহিদ, নবুওয়ত এবং পুনরুত্থান দিবস তথা মা’য়াদ। গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি বিষয় পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে সূরা “ইয়াসিন”-এ উল্লেখ করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনের ছত্রিশতম সূরার নাম "ইয়াসিন"। ৮৩টি আয়াত বিশিষ্ট এই সূরাটি কুরআনের ২২ ও ২৩ পারায় অবস্থিত। মক্কায় অবতীর্ণ হওয়ার কারণে এই সূরাকে মাক্কী সূরা বলা হয় এবং নাযিলের ক্রমানুসারে ৪১তম সূরা যা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর উপর নাযিল হয়েছে।
এই সূরাটি "ইয়া এবং সিন" হুরুফে মুকাত্তায়াত দিয়ে শুরু হয়েছে এবং এই নামে পরিচিত। রেওয়ায়ত অনুসারে, সূরা ইয়াসিন কুরআনের সবচেয়ে পুণ্যময় সূরাগুলির মধ্যে একটি। এই সূরার গুরুত্ব এতো অধিক যে সুরাটিকে "কুরআনের হৃদয়" বলে ডাকা হয়।
কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, সূরা ইয়াসিনকে কুরআনের হৃদয় বলা হয় কারণ সমগ্র পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সমস্ত বিষয়বস্তু এবং নীতিগুলি এই সূরায় উপস্থাপন করা হয়েছে এবং যদি কেউ এর আয়াতগুলিতে মনোযোগ দেয় তবে মনে হয় যে তিনি সম্পূর্ণ কুরআন বুঝেছেন।
সূরা "ইয়াসিন" ঠিক তখনই নাযিল হয়েছিল যখন মুশরিকরা মা’য়াদ বা কিয়ামত তথা পুনরুত্থানের বিষয়টি অস্বীকার করছিল। তাদের জবাবে মহান আল্লাহ এই সূরাটি নাযিল করেন।
সূরা ইয়াসিনে ধর্মের তিনটি নীতি, একেশ্বরবাদ, নবুয়ত এবং মা’য়াদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং মৃতদের পুনরুত্থান এবং পুনরুত্থানে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা বলে এবং এছাড়াও, এই সূরায় আসহাবে ক্বারিয়া ও আল-ইয়াসিনের মু’মিনদের কাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে।
এই সূরার প্রারম্ভিক আয়াতগুলি নবুওয়তের বিষয় এবং এর দর্শন এবং নবীদের আহ্বানের প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। নবীদের দাওয়াত গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে মানুষের অবস্থা বলে যে, নবীদের সঠিক দাওয়াতের ফল হল মানুষের পুনরুজ্জীবন এবং যারা এই দাওয়াত গ্রহণ করবে তারাই সৌভাগ্যের পথে থাকবে।
তারপর একেশ্বরবাদ সম্পর্কে আয়াত রয়েছে যা মহান আল্লাহর একত্বের লক্ষণগুলি তালিকাভুক্ত করে। এরপর বিচার দিবসে মৃতদের পুনরুত্থান ও কিয়ামদের কথা বলা হয়েছে। সেদিন সকলের পুনরুত্থান হবে এবং বিচারের মাধ্যমে পাপী এবং নেক বান্দাদের পৃথক করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, বিচার দিবসে প্রত্যেকের অঙ্গ তার কর্ম অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে এবং পক্ষে কথা বলবে।
পুনরুত্থান সম্পর্কিত বিভাগটি এই সূরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা পুনরুত্থানের বিভিন্ন কারণ এবং কেয়ামতের দিন সম্পর্কের প্রকৃতি এবং প্রশ্ন ও উত্তর, পৃথিবীর শেষ এবং জান্নাত ও জাহান্নাম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এসব আলোচনার শুরুতে গাফেল ও অজ্ঞদের জাগরণ ও সতর্কতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আয়াত রয়েছে।
পরিশেষে, সূরার শেষ আয়াতে সেদিন অপরাধী ও মুত্তাকীদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। সূরার শেষে, ধর্মের তিনটি মূলনীতি অর্থাৎ একেশ্বরবাদ, নবুওয়ত এবং মা’য়াদের সারসংক্ষেপ দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলির উপর যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে।
 
সংশ্লিষ্ট খবর
captcha