IQNA

কুরআনের সূরাসমূহ/১৮

সূরা কাহফে আশ্চর্যজনক গল্পের বর্ণনা

18:13 - July 18, 2022
সংবাদ: 3472143
তেহরান (ইকনা): পবিত্র কুরআনের গল্পগুলির মধ্যে এমন কিছু বর্ণনা রয়েছে যা অন্যান্য ধর্মীয় বইতেও উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিক তেমনি গল্পগুলির মধ্যে গুহায় আশ্রয় নেওয়া খ্রিস্টান মুমিনদের কষ্টের কাহিনী এবং খিযরের সাথে হযরত মুসা (আ.)-এর সাহচর্যের কাহিনী সূরা কাহফে বর্ণিত আছে।
সূরা "কাহফ" হল পবিত্র কুরআনের  ১৮তম সূরা এবং এটি মাক্কী সূরাসমূহের মধ্যে একটি সূরা। এই সূরায় মোট ১১০টি আয়াত রয়েছে এবং এটি ১৫ এবং ১৬তম পারায় অবস্থিত। নাযিলের ক্রমানুসারে এই সূরটি ৬৯তম সূরা যা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর উপর নাযিল হয়েছে।
কাহফ মানে গুহা। এই সূরাটিকে গুহা নামকরণের কারণ হল খ্রিস্টান বিশ্বাসীদের একটি দলের গল্প এই সূরায় তুলে ধরা হয়েছে যাদেরকে যাদেরকে “আসহাবে কাহফ” বা "গুহার আসহাব"  বলা হয়।
ভয় ও আশা নিয়ে সূরা কাহফ মানুষকে সত্যে বিশ্বাস ও সৎকাজ করার আমন্ত্রণ জানায়। এই সূরায় জোর দেওয়া হয়েছে যে, মহান আল্লাহর কোন সন্তান নেই। এছাড়াও  সূরা কাহফে দ্বৈতবাদীদের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
সূরা কাহফে তিনটি আশ্চর্যজনক গল্প তুলে ধরা হয়েছে: আসহাবে কাহফ বা গুহার সাহাবীদের কাহিনী, হযরত মুসা (আ.) ও হযরত খিজর (আ.)এর সাহচর্যের কাহিনী এবং যুল কারনাইনের কাহিনী। খোদার সাথে কাউকে শিরক করার বিষয়টি অস্বীকার করার সাথে সাথে তাকওয়া ও খোদাভীতিকে উত্সাহিত করা এই গল্পগুলি থেকে শেখা যায়।
প্রথম গল্পটি আহসাবে কাহফের সাথে সম্পর্কিত; খ্রিস্টান বিশ্বাসীরা যারা দাকিয়ানাসের (201-251 খ্রিস্টাব্দ) অত্যাচার থেকে একটি গুহায় লুকিয়ে ছিলেন এবং প্রায় তিন শতাব্দী ধরে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
তারা তিনশত বছর পরে জেগে উঠেছিল এবং তারা গোপনে তাদের শহরে প্রবেশ করার পরে, তাদের চারপাশের পরিবর্তনগুলি দেখে অবাক হয়েছিল। সে সময়ে নিষ্ঠুর রাজার মৃত্যুর পর বহু বছর কেটে গেছে এবং খ্রিস্টান বিশ্বাসীরা সংখ্যালঘুর ছাড়িয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠে পরিণত হয়েছে।
এই সূরার আরেকটি অংশ একজন ধার্মিক ব্যক্তির সাথে হযরত মুসা (আ.)এর সাহচর্যের কাহিনীকে নির্দেশ করে যাকে মুফাসসিরগণ হযরত খিজর (আ.) হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এই সফরে হযরত খিজর (আ.) এমন কিছু করেন যা মুসার (আ.) কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং তাকে বিভ্রান্ত ও বিচলিত করে, কিন্তু যখন খিজর তার কাজের কারণ ব্যাখ্যা করেন, তখন তিনি গোপনীয়তা উপলব্ধি করেন এবং তার অধৈর্যতার জন্য অনুশোচনা করেন।
এই সূরার আরেকটি অংশে যুল-কারনাইনের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, কীভাবে তিনি পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমে ভ্রমণ করেছিলেন এবং বিভিন্ন গোত্রের সম্মুখীন হন এবং অবশেষে একদল লোকের সহায়তায় তিনি ইয়াজুজ ও মাজুজের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং তিনি তাদের পথে একটি লোহার বাধা স্থাপন করেন এবং তাদের অনুপ্রবেশে বাধা স্থাপন করেন
• যুল-কারনাইনের চরিত্র নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
কোন কোন মুফাসসির তাকে আল্লাহর প্রেরিত নবী এবং অন্যান্যরা একজন ধর্মীয় রাজা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। যাইহোক, পবিত্র কুরআনে যুলকারনাইনের চিত্রটি এমন একজন ব্যক্তি, যিনি মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন এবং বিচার দিবসে বিশ্বাস করেন।
পবিত্র কুরআন এবং ইহুদী ও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লিখিত গোত্র বা গোত্রসমূহের নাম ইয়াজুজ এবং মাজুজ। ধর্মীয় গ্রন্থে ইয়াজুজ ও মাজুজকে একটি নিষ্ঠুর গোষ্ঠী হিসেবে পরিচয় করা হয়েছে। অন্যের সম্পদ লুটপাটের কারণে যুলকারনাইন বাধ সৃষ্টি করেন এবং তাদের অনুপ্রবেশ রোধ করে। কুরআন এবং খ্রিস্টান ও ইহুদীদের ধর্মীয় গ্রন্থে ইয়াজুজ ও মাজুজের বিদ্রোহ শেষ জামানার অন্যতম নিদর্শন।
 
 
 
সংশ্লিষ্ট খবর
captcha