এমিলি ক্যালাহান গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ২৬ দিন অবস্থান করেছেন এবং ডক্টরস উইদাউট বর্ডারের অ্যাক্টিভিটি ম্যানেজার হিসেবে গাজায় কাজ করেছেন। গত ১ নভেম্বর আমেরিকান দাতব্যকর্মীদের সঙ্গে তিনিও গাজা ছেড়ে মিসরের রাফাহ সীমান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। এরপর গত সোমবার সিএনএনের সাংবাদিক অ্যান্ডারসন কুপারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সাক্ষাৎকারে মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা ও গাজাবাসীর দুর্দশার করুণ চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
ফিলিস্তিনি চিকিৎসকদের আত্মত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গাজার চিকিৎসক ও নার্সরা নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি আনুগত্যের কারণে তাদের ছেড়ে যায়নি।
আমি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, রোগীদের পেছনে থাকা এই মানুষগুলো সত্যিকারের বীর। তারা যে মারা যাবে তা তারা জানে। এর পরও তারা যেভাবেই হোক সেবা দিয়ে যাচ্ছে।’
নিজ দেশে ফিরেও ক্যালাহান এখন প্রতিদিন সহকর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি মেসেজ পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করি, তুমি কি বেঁচে আছো? আবার প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞাসা করি, তুমি কি বেঁচে আছো?’
গাজা ছাড়ার মুহূর্তে সহকর্মী নার্সদের কেউ কি তাঁর সঙ্গে যাবে কি না জানতে চেয়েছেন এমিলি ক্যালাহান। তিনি বলেন, ‘আমার জিজ্ঞাসার জবাবে তাদের উত্তর ছিল, এটা আমাদের সম্প্রদায়। এটা আমাদের পরিবার। তারা আমাদের বন্ধু। তারা আমাদের হত্যা করতে এলে আমরা যতুটুকু সম্ভব মানুষকে বাঁচিয়ে মারা যাব।
’
সহকর্মীদের আন্তরিকতা ও গভীর ভালোবাসা বর্ণনা তুলে ধরে ক্যালাহান বলেন, ‘আমি সেখানে সত্যিকার অর্থে স্বস্তির সঙ্গে ছিলাম। আমি যেন আমার বাড়িতে আমার পরিবারের সঙ্গে ছিলাম। এই ২৬ দিনে প্রথমবার নিরাপদ বোধ করেছি। এর মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন ছিল, যখন আমাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আর অন্যদের পেছনে রেখে আসতে হয়েছে।’
শিশুদের বিমর্ষ চেহারার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নিয়মিত শিশুদের বিমর্ষ চেহারা দেখেছি। তাদের মুখ, ঘাড়সহ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রচণ্ডভাবে জ্বলছে। কারণ হাসপাতালেও তাদের বিনা চিকিৎসায় ছেড়ে দিতে হচ্ছিল। তাদের এমন শরণার্থীশিবিরে রাখা হচ্ছিল, যেখানে ৫০ হাজার মানুষের জন্য মাত্র চারটি টয়লেট রয়েছে এবং সেখানে তাদের জন্য খুবই সীমিত উপকরণ রয়েছে। মাতা-পিতারা শিশুদের আমাদের কাছে নিয়ে এসে বলছে, অনুগ্রহ করে আমাকে সাহায্য করতে পারবেন? অথচ আমাদের কোনো সাপ্লাই নেই।’
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে গাজায় প্রায় ১১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে চার হাজার ২৩৭টি শিশু ও দুই হাজার ৭১৯ জন নারী রয়েছেন। এতে ইসরায়েলের এক হাজার ৪০০ জনের বেশি লোক নিহত হয়। নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে প্রায় সব দেশ সরব হলেও আমেরিকা ও ব্রিটেনের প্রশ্রয়ে যুদ্ধবিরতিতে সাড়া দেয়নি ইসরায়েল। আগামী ১২ নভেম্বর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে জরুরি সম্মেলন আয়োজন করছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)।
সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার