হাভানা কিউবার রাজধানী। কিউবার মোট আয়তন এক লাখ ৯ হাজার ৮৮৪ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা এক কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৯৭৪ জন। কিউবার বেশির ভাগ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী।
কিউবায় স্বল্পসংখ্যক মুসলিম বসবাস করে। তাদের আনুমানিক সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ হাজার।
মুসলিম আগমনের পর্যায়গুলো
ঐতিহাসিকরা কিউবায় মুসলিম আগমনের ইতিহাসকে তিন পর্যায়ে বিভক্ত করেন। তা হলো:
আমেরিকা আবিষ্কারের আগে : স্প্যানিশ ইতিহাসবিদ বার্তলোমে ডে লে কাসাসের বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয়, ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের আগেই সেখানে মুসলমানের আগমন ঘটেছে।
তিনি কলম্বাসের ‘প্রথম অভিযানের দিনলিপি’র উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে কলম্বাসের নৌকা কিউবার উপকূলে ভেড়ে। তিনি একটি পাহাড়ের চূড়ায় মসজিদের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পান, যাতে আজান দেওয়ার স্থানসহ আরো কিছু নিদর্শন টিকে ছিল। মসজিদের দেয়ালে আরবি ভাষায় কিছু লেখা ছিল। কিউবায় প্রথম উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পর কলম্বাস দেখতে পান রেড ইন্ডিয়ানদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাসের মিল আছে। বিষয়টি তাঁকে বিস্মিত করেছিল এবং তিনি ভেবেছিলেন এরা আগে মুহাম্মাদি (মুসলিম) ছিল।
এ ছাড়া কিউবাসহ আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেছে।
কলম্বাসের আগে মুসলমানরা আমেরিকা মহাদেশে কিভাবে পৌঁছেছিল তা স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হয়, হয়তো কোনো মুসলিম বণিক পথ হারিয়ে সেখানে পৌঁছান। অথবা উসমানীয় নৌবহরের প্রতিষ্ঠাতা খাইরুদ্দিন বারবোরোস এবং মালির শাসক মানসা মুসার পাঠানো অনুসন্ধানী নৌবহর হয়তো পথ হারিয়ে আমেরিকা মহাদেশে পৌঁছেছিল, যারা কখনো নিজ দেশে ফিরে আসতে পারেনি।
ঔপনিবেশিক আমলে : সংরক্ষিত ইতিহাস থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার এবং সেখানে স্প্যানিশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে মুসলমানদের আগমন ঘটে। স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসানের পর স্থানীয় শাসকরা বহু মুসলমানকে বন্দি করেন এবং তাদের নতুন পৃথিবীতে (আমেরিকা মহাদেশ) দেশান্তরিত করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকা মহাদেশের বিপুল পরিমাণ কৃষি ভূমি আবাদ করা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট করা। পরবর্তী সময়ে আমেরিকা মহাদেশে আগমনকারী ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো আফ্রিকার প্রায় এক কোটি নিরাপদ মানুষকে দাস বানিয়ে এখানে নিয়ে আসে। যাদের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখই ছিল মুসলিম। তাদের বেশির ভাগকে ধর্মান্তরে বাধ্য করা হয়েছিল। যদিও আফ্রিকান মুসলিমদের কেউ কেউ ধর্মান্তর প্রক্রিয়া প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল। যেমন মাকান্ডাল সম্প্রদায়। তারাই ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ আমেরিকায় বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিল।
আধুনিক কালে : উনিশ শতকের শেষ ভাগে আরব বিশ্বে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে বহুসংখ্যক আরব খ্রিস্টান আমেরিকা মহাদেশে পাড়ি জমায়। তাদের সঙ্গে স্বল্পসংখ্যক আরব মুসলমানও কিউবাসহ অন্যান্য দেশে বসতি স্থাপন করে। তবে এদের পরিমাণ খুবই কম। এ ছাড়া বর্তমানে পাকিস্তানসহ এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য কিউবা আসে। যাদের কেউ কেউ এখানে স্থায়ীভাবে থেকে যায়।
কিউবায় কেমন আছে মুসলিমরা
১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হয়। এরপর মুসলমানদের জন্য ধর্মপালন, ধর্মীয় শিক্ষার প্রচার এবং মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ নিষিদ্ধ করা হয়। মসজিদসহ বিদ্যমান সব ধর্মীয় উপাসনালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। সপ্তদশ শতকে নির্মিত ‘আরব হাউস’ ছিল এর বাইরে। পুরনো হাভানায় অবস্থিত এই ভবনে শুধু শুক্রবার আরব কূটনৈতিক ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের জুমা আদায়ের অনুমতি দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে সৌদি সরকারের উদ্যোগে হাভানায় মসজিদ স্থাপন করা হয়েছে। মূলত একটি পুরনো জাদুঘরকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়। এ ছাড়া কাতার সরকারের অনুদানে একটি পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে, যাতে এক হাজার ২০০ বই ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী নিদর্শন রাখা হয়েছে। তবে ধারণা করা হয়, কিউবার মুসলিমরা নিজ বাড়িতে প্রার্থনাকক্ষ নির্মাণ করেন। যেখানে পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের নিয়ে নামাজ পড়েন। দ্য কিউবান ইসলামিক ইউনিয়ন ও দ্য ডিফিউশন অব ইসলাম কিউবায় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বকারী দুটি সংগঠন।
তথ্যঋণ : আলজাজিরা, টিআরটি ওয়ার্ল্ড
ও সিরু অনলাইন