IQNA

জর্দানের যে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন লুত (আ.)

1:45 - January 01, 2024
সংবাদ: 3474858
ইকনা: কাহফে লুত (লুতের গুহা) আধুনিক জর্দানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যা মৃতসাগরের দক্ষিণের গোর আশ-শাফি গ্রামে অবস্থিত। ধারণা করা হয়, নবী লুত (আ.)-কে আল্লাহ নিজ শহর ত্যাগ করার নির্দেশ দিলে তিনি নিজ কন্যা ও অনুসারীদের নিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং লুতকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান এবং তাকে উদ্ধার করেছিলাম এমন এক জনপদ থেকে, যার অধিবাসীরা লিপ্ত ছিল অশ্লীল কাজে; তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়, সত্যত্যাগী।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৭৪)
বাইজেন্টাইন আমলে কাহফে লুত আবিষ্কৃত হয় এবং সামনে আশ্রম ও গির্জা তৈরি করা হয়।
 
বাইজেন্টাইন আমলের ঐতিহাসিক সূত্রগুলোতে কাহফে লুতের বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন মাদাবা মানচিত্র। ঐতিহাসিক গুহার মুখে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে বাইজেন্টাইন সম্রাটরা একটি গির্জা ও আশ্রম তৈরি করেছিল। যার ধ্বংসাবশেষ এখনো টিকে আছে।
কাহফে ‍লুত আশ-শাফির উত্তর-পূর্ব প্রান্তে একটি পাহাড়ি ঢালে অবস্থিত, যা এক সময় মৃতসাগরের দক্ষিণ প্রান্ত ছিল। কাহফে লুত মানবসৃষ্ট গুহাগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম। এটি ব্রোঞ্জ যুগে (খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০-২০০০ অব্দে) সৃষ্ট।
গুহায় পাওয়া একটি শিলালিপিতে লুত (আ.)-এর নাম পাওয়া গেছে।
 
গুহার নিকটবর্তী একটি পাথরের স্তম্ভের প্রতি বিশ্বাস করা হয় যে তা লুত (আ.)-এর অবাধ্য স্ত্রীর মন্দ পরিণতির সাক্ষ্য।
স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে লুত (আ.) আল্লাহর নির্দেশে নিজ শহর ত্যাগ করেছিলেন। তখন তাঁর অবাধ্য স্ত্রী পেছনে থেকে যায় এবং বারবার শহরের দিকে তাকাতে থাকে। একসময় আল্লাহর অভিশাপে সে লবণস্তম্ভে পরিণত হয় এবং ধীরে ধীরে যা পাথরে পরিণত হয়। কোরআনে তার মন্দ পরিণতির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তারা বলল, ভয় কোরো না, দুঃখও কোরো না; আমরা তোমাকে ও তোমার পরিবারবর্গকে রক্ষা করব, তোমার স্ত্রী ছাড়া; সে তো পেছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
 
’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৩৩)
গুহার প্রবেশমুখটি মূলত গির্জার উত্তর প্রান্ত। এই অংশটিই গির্জা-আশ্রম কমপ্লেক্সের মূল অংশ ছিল। গুহার প্রবেশমুখে দুটি দেয়াল চিত্র আছে। যার একটি স্থানীয় খ্রিস্টান নারীর। গ্রিক ভাষায় যার লেখা হয়েছে নেস্তাসিয়া জেনোবিয়ার এবং অন্যদিকে কুফিক বর্ণে আরবি ভাষায় ইসলামের পথে আহ্বান জানানো হয়েছে।
 
কাহফে লুত ২.২৫ মিটর লম্বা এবং দুই মিটার চওড়া। বাইজেন্টাইন আমলে গুহার মেঝেতে সাদা মার্বেল পাথর বসানে হয়েছিল। কাহফে লুত ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কয়েক ধাপে খনন করা হয়। প্রথম ধাপের খননে গুহার ভেতর খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক থেকে নবম শতক পর্যন্ত সময়ের একাধিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। যেমন বাইজেন্টাইন আমলের প্রথম ভাগ তথা খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতকের সিরামিকের পাত্র ও কাচের প্রদীপ।
 
কাহফে লুতের বাইরে পাহাড়ের পাদদেশে হেলেনিস্টিক-নাবাতাইয়ান যুগের (খ্রিস্টপূর্ব প্রথম থেকে প্রথম খ্রিস্টাব্দ) জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় ধাপে ব্রোঞ্জ যুগের শেষভাগের বাসস্থানের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর গভীরে ব্রোঞ্জ যুগের মধ্যভাগে (খ্রিস্টপূর্ব ১৯০০-১৫৫০) তৈরি সিরামিকের পানপাত্র ও তামার পাত্র পাওয়া গেছে।
 
আরো গভীরে খননকারীরা পাথরের প্রাচীরবেষ্টিত একাধিক সমাধি এবং এক ডজনের বেশি মাটির তৈরি জগ ও পেয়ালা পেয়েছে। যেগুলো ব্রোঞ্জ যুগের প্রথম ভাগের (খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০-২০০০ অব্দ) বলে মনে করা হচ্ছে। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে কাহফে লুতে পাঁচ হাজারের চেয়ে বেশি সময় ধরে মানুষের বসবাস ছিল।
 
তথ্যঋণ : মাদায়েন প্রজেক্ট ও জর্দান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস
ট্যাগ্সসমূহ: মৃত ، জর্ডান ، হযরত ، লুত ، গীর্জা
captcha