IQNA

রোমান সভ্যতার স্মৃতিবাহী সৌদি আরবের প্রাচীন শহর

20:46 - January 18, 2024
সংবাদ: 3474961
ইকনা: সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানায় অবস্থিত ঐতিহাসিক বন্দর নগরী জাজান। ইসলামের ইতিহাসে যা তিহামা নামে পরিচিত। লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত জাজানকে বলা হয় সৌদি আরবে রোমান সাম্রাজ্যের স্মৃতিবাহক। যদিও শুধু রোমান সাম্রাজ্য নয়, বরং জাজানের পথে-প্রান্তে ছড়িয়ে আছে বহু জাতি ও সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন।

একাধিক সাম্রাজ্য ও সভ্যতার স্পর্শ ও ভালোবাসায় সমৃদ্ধ হয়েছে জাজান। লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে বণিকরা জাজানে গমন করত এবং সেখান থেকে তারা আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন বাণিজ্যকেন্দ্রে ছড়িয়ে পড়ত। তাই জাজানকে বলা যায় সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রাচীন পাঠকেন্দ্র।
জাজান বাব আল-মানদিব প্রণালীর নিকটবর্তী হওয়ায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রহের কেন্দ্র ছিল।

প্রাচীন নুবিয়ান, মিসরীয়, রোমান ও পারসিয়ান সম্রাটরা জাজানে তাদের শিকড় মজবুত করার চেষ্টা করেছে। বিশ্বাস করা হয়, ফিনিশিয়ান রাজা হিরাম খ্রিস্টপূর্ব দশম শতকে জাজান অঞ্চলে বাণিজ্য পরিচালনা করেছিলেন। জাজান থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে আল সিহি প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল আবিষ্কৃত হয়েছে। যেখানে খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার বছর আগের সিরামিক ও মাটির পাত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।
রোমানরা লোহিত সাগরে নৌবাণিজ্য সম্প্রসারণ করলে জাজানেও তাদের যাতায়াত শুরু হয়। রোমান বাণিজ্য জাহাজগুলো রক্ষায় তারা ফারাসান দ্বীপুঞ্জে ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। তাদের শিলালিপি আল কাবির দ্বীপের স্থাপনায় রয়ে গেছে। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে ফারাসান দ্বীপপুঞ্জ ফেরেসানুস (লাতিন) নামে পরিচিত ছিল। রোমান ভূমি থেকে চার হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফারাসানই ছিল তাদের দূরতম সামরিক ঘাঁটি।

খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে জাজান অঞ্চল মুসলমানদের শাসনাধীন হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক পরিচালিত ‘হামরাউল আসাদ’ অভিযান জাজান অঞ্চলেই পরিচালিত হয়েছিল মনে করা হয়। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপ উসমানীয়দের শাসনাধীন হলে তারা জাজানে দুটি দুর্গ নির্মাণ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আরব উপদ্বীপের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে শক্তিশালী করা, লোহিত সাগরে মুসলিম বাণিজ্য জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা দেওয়া এবং গ্রিসসহ অন্য ইউরোপীয় শক্তিগুলো থেকে আরব উপদ্বীপকে নিরাপদ রাখা।

জাজানের একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হলো আল দোসারিয়াহ প্রাসাদ। প্রাসাদটি চতুর্ভুজ আকৃতির এবং এর আয়তন ৯০০ স্কয়ার ফিট। জাজানের উঁচু এলাকায় তা নির্মিত হওয়ায় এখান থেকে লোহিত সাগর দেখা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২৫০ মিটার। তুর্কি আমলে এটি জানান প্রশাসকের বাসভবন ছিল। পরবর্তী সময়ে প্রাসাদটি অন্য কাজেও ব্যবহৃত হয়েছে। শেখ আবদুল্লাহ আল-কারাভি দোসারিয়াহ প্রাসাদকে ইসলামী জ্ঞানকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেন। ১৯৩২ সালে বাদশাহ আবদুল আজিজ প্রাসাদটি পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেন এবং এখানে সৌদি সেনা বাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপন করেন। এটিই ছিল আধুনিক সৌদি আরবের প্রথম সেনাকেন্দ্র। বর্তমানে দোসারিয়াহ দুর্গ কেন্দ্র করে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

জাজানের কাছেই লোহিত সাগরে ফারাসান দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত। ১৭০টি ছোট-বড় দ্বীপ নিয়ে এটি গঠিত। ফারাসান পরিচ্ছন্ন সৈকত, নীলজল ও স্বচ্ছ জলের নিচের দৃশ্যমান সৌন্দর্য ও প্রবাল প্রাচীরের জন্য বিখ্যাত। এটি ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ফারাসান দ্বীপপুঞ্জে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনাও রয়েছে। যেমন মুক্তা ব্যবসায়ী আহমদ মুনাওয়ার রিফায়ির দৃষ্টিনন্দন বাড়ি, রোমান যুগে তৈরি আল কাসার গ্রাম, উসমানীয় যুগে তৈরি দুর্গ, আল নাজদি মসজিদ ইত্যাদি।

সূত্র : আরব নিউজ, সৌদি গেজেট ও ডেস্টিনেশন কেএসএ ডটকম

 

captcha