IQNA

ইতিহাসের সঠিক পক্ষে অবস্থান নেয়া এবং ইমাম খামেনেয়ীর চিঠি/ সত্য দীর্ঘজীবী হোক

10:01 - June 15, 2024
সংবাদ: 3475607
ইকনা: ইতিহাসের সঠিক পক্ষে অবস্থান নেয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ইতিহাসজুড়ে এ বিষয়টির সম্মুখিন হয়েছে মানুষ। এরই মধ্যে মার্কিন ছাত্রদের উদ্দেশে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর সহৃদয় দরদমাখা চিঠি প্রতিবাদী ছাত্রদের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করেছে।
ফিলিস্তিন, যে শব্দ থেকে এবং যার জলপাই গাছের পাতা থেকে শিশু ও নারীর রক্ত ​​ঝরছে, মানবতার চোখের সামনে নিপীড়নের পুরো চেহারা ভেসে উঠেছে । আপনি পার্সটুডের এই ম্যাগাজিন থেকে আপনি যে লেখাটি পড়বেন তাতে সম্প্রতি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা যে বিখ্যাত কাজটি করেছেন সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে। সেটা হলো  "ইতিহাসের সঠিক পক্ষ"।
 
বিশ্বের সকল শ্রেণী, বর্ণ ও ভাষার মানুষ ফিলিস্তিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা অপেক্ষা করছে কবে এই জঘণ্যতম নিষ্ঠুরতা ও শিশু হত্যার অবসান হচ্ছে-তা দেখার! তারা আরও দেখতে চায় কখন বিশ্বমানবতা ‌ইহিুদিবাদী অত্যাচারী এবং তাদের মদদদাতাদের সুস্পষ্ট নিপীড়নের সামনে জেগে ওঠে। সইসঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে: "শিশু হত্যা বন্ধ কর!"।
 
অবশ্য অভিজাত শব্দ "মানবতা" থেকে অপরাধী ইহুদিবাদীদের অবস্থান যোজন যোজন দূরে। গাজার নিষ্পাপ শিশুদের রক্ত ​​ঝরানো তাদের জন্য তাই বিনোদন বলে বিবেচিত। যদিও গাজার এই ট্র্যাজেডি, যন্ত্রণা এবং গণহত্যা পশ্চিমা ও ইউরোপীয়দের বিবেককে জাগ্রত করতে পারেনি। তবে বিশ্বের যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষের একটা বিশাল অংশের বিবেককে জাগ্রত করতে পেরেছে। তাদের মানবতাবোধ তাদেরকে ঘর থেকে রাস্তায় নিয়ে এসেছে। তারা তাই শ্লোগান দিচ্ছে: ফিলিস্তিন স্বাধীন করো, শিশু হত্যা বন্ধ করো, এবং ইসরাইল নিপাত যাক।
 
ইতোমধ্যে, আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা-যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা বিশ্বের মেধাবীরা পড়ালেখা বা গবেষণা করার সুযোগ পান-তারা ইসরাইলের জঘণ্য অপরাধের সামনে চুপচাপ বসে থাকতে পারেন নি। তারা নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের প্রতিরক্ষায় প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। তাদের ওই আন্দোলন একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠেছে।
 
আমেরিকার কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে এই বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং একাডেমিক কাউন্সিলের মেম্বার তাঁবু গেড়ে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আহ্বান জানান তারা যেন ইসরাইলের স্বার্থে বিনিয়োগ বন্ধ করে দেয়। ওই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে পুলিশি হস্তক্ষেপ এবং কিছু ছাত্র ও অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করার ঘটনায় সমগ্র আমেরিকাজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ এমনকি অন্যান্য পশ্চিমা দেশেও ছড়িয়ে যায়।
 
এরকম পরিস্থিতিতে আমেরিকার ছাত্রদের উদ্দেশে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর দরদমাখা চিঠি প্রতিবাদী ছাত্রদের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করে। বিশেষ করে যখন তিনি তাদের লিখেছেন:
 
আমেরিকার প্রিয় তরুণ ছাত্রছাত্রীরা! এটি তোমাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি এবং সংহতির বার্তা। তোমরা এখন ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে সঠিক পক্ষে অবস্থান নিয়েছো। এই ইতিহাস নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
 
দুরূহ পরিস্থিতিতে সঠিক পথ বেছে নেওয়া খুবই কঠিন। তবে এ ধরনের পরিস্থিতিতে সঠিক থেকে ভুলের পার্থক্য করার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হল জাগ্রত ও সচেতন বিবেক।
 
এসব ছাত্র পাশ্চাত্যের উদার গণতন্ত্রের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। তারা স্বাধীনতা, সাম্য ও ন্যায়বিচারের স্লোগানই প্রতিনিয়ত শুনে এসেছে। কিন্তু যখন তারা তাদের দেশের শাসকদের আচরণে এসব শ্লোগান পরিপন্থি কাজ লক্ষ্য করেছে, তখন তারা বুঝতে পেরেছে যে মানবতাবাদী স্লোগানগুলো তাদের ভান আর প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমেরিকান ও ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ইসরাইলি শাসকদের হাতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র ও বোমা পাঠানোর ঘটনায় তাদের বুঝতে বাকি ছিল না যে পশ্চিমের উদার গণতন্ত্রের শ্লোগান আধিপত্যের হাতিয়ার ছাড়া আর কিছুই নয়।
 
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী তার চিঠিতে দেখিয়েছেন যে পশ্চিমারা মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে, আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে এবং বলপ্রয়োগের হাতিয়ার ব্যবহার করেও সত্যকে আর আড়াল করে রাখতে পারবে না। ছাত্র আন্দোলনের জাগরণ শক্তিমত্তার সাথেই এগিয়ে যাচ্ছে।
 
সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্যের 'তোমরা ইতিহাসের সঠিক পক্ষে অবস্থান নিয়েছো'-এটি ছিল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বক্তব্যের মাধ্যমে পশ্চিমা তরুণ সমাজসহ বিশ্বের সাধারণ জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে: তোমাদের ভেতর যখন মানবতাবোধ জেগে উঠেছে এবং নির্যাতিতদের প্রতিরক্ষাকে নিজের স্বার্থের উর্ধ্বে ভাবতে শিখেছো তখন বুঝতে হবে সঠিক অবস্থানে মানে আল্লাহর সন্তোষজনক পথে রয়েছো তোমরা। সুতরাং সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে অবশ্যই আল্লাহর অনুগ্রহ ধন্য হবে তোমরা।
 
আমেরিকার ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্রদের উদ্দেশে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর চিঠিতে প্রকৃতপক্ষে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। সুসংবাদটা হলো ভবিষ্যৎ ইতিহাসের পরিবর্তন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত পশ্চিমাদের বলদর্পী নীতির পতন। সেইসঙ্গে মানুষের রাজনৈতিক ও মানবিক জীবনেও নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা ঘটতে যাচ্ছে। পার্সটুডে
captcha