
স্থানীয় সময় গত সোমবার ইসলামের পবিত্রতম শহর মক্কায় তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২৫ফারেনহাইট) পৌঁছে। সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন মানুষ এবারের হজে অংশগ্রহন করেছে। এদের মধ্যে অনেক বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তিও ছিলেন এবং তারা এই বছর সৌদি গ্রীষ্মের কবলে পড়েছিলেন।
একজন আরব কূটনীতিক এএফপিকে বলেছেন, শুধুমাত্র মিসরীয়দের মৃত্যু লাফিয়ে বেড়েছে।
এবার কমপক্ষে ৬০০ মিসরীর মৃত্যু হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ প্রচণ্ড গরমের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। ওই কূটনীতিক পরে আরো বলেছেন, ‘সৌদি আরবে মিসরীয় কর্মকর্তারা ৬০০ জন নিহত এবং আরো ১ হাজার ৪০০ হজযাত্রীর নিখোঁজের খবর জানিয়েছেন।’
তিউনিসিয়ার ৭০ বছর বয়সী মাবরুকা বিনতে সালেম শুশানা গত শনিবার আরাফাত পর্বতে হজের চূড়ান্ত পর্বের পর থেকে নিখোঁজ।
তার স্বামী মোহাম্মদ বুধবার এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, মাবরুকা অনিবন্ধিত ছিলেন এবং তার কাছে আনুষ্ঠানিক হজ পারমিট ছিল না। ফলে তিনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পথ দিয়ে যেতে পারেননি।
তার স্বামী আরো জানান, ‘তিনি একজন বৃদ্ধা এবং ক্লান্ত ছিলেন। খুব গরমে অস্থির হয়ে পড়েছিলেন তিনি এবং তার ঘুমানোর জায়গাও ছিল না।
আমি সব হাসপাতালে তার খোঁজ করেছি। এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাইনি।’ নিখোঁজদের ছবি এবং তথ্যের অনুরোধে ফেইসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভরে গেছে।
ঘাড়া মাহমুদ আহমেদ দাউদ নামের আরেক নারী হজযাত্রীও আরাফাত থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। তিনিও হজে এসেছিলেন বৈধ নথিপত্র ছাড়া। সৌদিতে বসবাসকারী তার এক পারিবারিক বন্ধু এএফপিকে বলেন, ‘মিসর থেকে তার মেয়ে প্রতিদিন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তার মায়ের খোঁজ জানার জন্য।’ নিখোঁজ হজযাত্রীদের পরিবার পরিজন ও আত্মীয়রা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছবি আপলোড করে সহায়তার আকুতি জানিয়েছেন।
ওই বন্ধু আরো জানান, ‘এখন পর্যন্ত সুসংবাদটি হলো, আমরা তাকে মৃত ব্যক্তির তালিকায় তাকে খুঁজে পাইনি। ফলে আমাদের আশা তিনি এখনও বেঁচে আছেন।’
মিসর ছাড়াও জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সেনেগাল, তিউনিসিয়া এবং ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলের নাগরিদের প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, যদিও অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর কারণ নির্দিষ্ট করেনি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এবার হজ করতে মক্কায় গিয়ে মারা গেছেন ২৭ জন বাংলাদেশি।
সৌদি আরব দাপ্তরিকভাবে হজে অসুস্থ, মৃত এবং নিখোঁজ যাত্রীদের কোনো তালিকা বা সংখ্যা প্রকাশ করছে না। মক্কার বিভিন্ন হাসপাতালের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, গরমের কারণে শুধু রবিবারই হিটস্ট্রোক ও অন্যান্য তাপজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৭০০ জনেরও বিশ হজযাত্রী।
গত বছর হজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন ২ শতাধিক হজযাত্রী। সেই তুলনায় এবার মৃতের সংখ্যা চারগুণেরও বেশি, যা সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়তে পারে।
দ্বিতীয় আরো একজন আরব কূটনীতিক বুধবার এএফপিকে বলেছেন, জর্ডানের কর্মকর্তারা ২০ নিখোঁজ হজযাত্রীকে খুঁজছেন, যদিও প্রাথমিকভাবে নিখোঁজ হওয়া আরো ৮০ জন হাসপাতালে অবস্থান করছেন।
একজন এশীয় কূটনীতিক এএফপিকে বলেছেন, ‘ভারতের প্রায় ৬৮ জন নিহত এবং অন্যরা নিখোঁজ রয়েছে। কিছু মৃত্যু প্রাকৃতিক কারণে হয়েছে এবং আমাদের অনেক বয়ষ্ক হজযাত্রী ছিল। তবে আমরা ধরে নিচ্ছি, কিছু মৃত্যু আবহাওয়ার কারণে হয়েছে।’
বিদেশি হজযাত্রীদের অনেকেই মক্কার তীব্র গরমে অভ্যস্ত নন। এ ছাড়া এই হজযাত্রীদের মধ্যে এমন হাজার হাজার যাত্রী রয়েছেন, যারা বিধি মেনে সৌদিতে আসেননি। ফলে প্রখর তাপপ্রবাহ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতে যাত্রীদের জন্য যেসব সুবিধা ও পরিষেবা বরাদ্দ করেছে সৌদির সরকার, সেসব তারা পাচ্ছেন না। অবৈধভাবে সৌদিতে প্রবেশ করা এই যাত্রীরা থাকা, খাওয়া এবং এয়ার কন্ডিশন সুবিধাও পাচ্ছেন না।
যেসব হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের একটি বড় অংশই অবৈধভাবে সৌদিতে প্রবেশ করেছিলেন বলে জানিয়েছে দেশটির প্রশাসন। এ ছাড়া হজের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন বহুসংখ্যক যাত্রী।
সূত্র : এএফপি