আধুনিক রণপোত শিল্প আরবরাই পত্তন করেছিল।
ইউরোপের অধিবাসীরা স্পেন, সিসিলি ও আফ্রিকায় আরবদের কাছ থেকে এই বিদ্যা শিক্ষা করেছিল।
আরবরাই সর্বপ্রথম নৌ দপ্তর প্রতিষ্ঠা করে। এই দপ্তরের নাম ছিল ‘দিওয়ানুল উসতুল’। এই দপ্তরের অধীনে বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।
তাঁরা রণতরির নতুন নতুন মডেল ও নকশা তৈরি করতেন।
মুসলমানরা তাদের সর্বপ্রথম ‘দারুস সানাআ’ প্রতিষ্ঠা করে হিজরি প্রথম শতাব্দীতে মিসরের ‘ফুসতাত’ নামক স্থানে। আহমদ ইবনে তুলুন এই কারখানার উন্নতি বিধানে প্রাণান্ত চেষ্টা করেন। আখশেদি খান্দানের শাসকরাও এর সবিশেষ উন্নতি সাধন করেন।
ফাতিমীয় শাসকরা এটি ‘ফুসতাত’ থেকে ‘মাকাসে’ স্থানান্তর করে আরো শ্রীবৃদ্ধি ও বিস্তৃতি দান করেন।
নদ-নদী ও সাগর-মহাসাগরেই ছিল তাঁদের প্রকৃত রাজস্ব। তাঁদের রণতরি যেমন দেশের প্রতিরক্ষা কাজে নিরত থাকত, তেমনি তাঁদের বাণিজ্যতরিগুলো প্রাচ্য দেশগুলোর পণ্যসম্ভার বহন করে পাশ্চাত্য দেশগুলোতে পৌঁছে দিত।
ফাতিমীয় আমলে দুই ধরনের জাহাজ নির্মিত হতো। এক. যুদ্ধ জাহাজ।
এগুলোকে উসতুল বলা হতো। শুধু যুদ্ধের কাজেই ব্যবহৃত হতো। দুই. তেজারতি জাহাজ। এগুলো দ্বারা শুধু এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করা হতো। এগুলোকে বলা হতো নিলি জাহাজ। নিলি জাহাজগুলো উসতুল থেকে আকারে ছোট হতো। এগুলো ছোট নদ-নদীতেও যাতায়াত করতে পারত।
দারুস সানাআয় ছোট-বড় অনেক রকম যুদ্ধ জাহাজ তৈরি হতো। নামও ছিল বিভিন্ন। আকার-আকৃতি ও গঠন-প্রকৃতিও ছিল
নানারূপ। এগুলোর সমষ্টিকে ‘উসতুল বলা হতো। এগুলোর নাম ছিল, ‘শূনা’, ‘হারবাকা’, ‘তা’বাদা’, ‘উশারিয়াত’, ‘শালান দিয়াত’, ‘মিসতাহাত’। একেকটার একেক রকম বৈশিষ্ট্য। আরবি জাহাজের আকার-আকৃতি গ্রিক ও রোমান জঙ্গি জাহাজের অনুরূপ ছিল। কারণ আরবরা এই বিদ্যা গ্রিক ও রোমকদের কাছ থেকে শিখেছিল।
আরবদের যুদ্ধ জাহাজে সাধারণত এসব রণসম্ভার মওজুদ থাকত : মিরাহ (লৌহ বর্ম), খোদ (শিরস্ত্রাণ), ঢাল, নেযা, কামান, লৌহ জিঞ্জির ও মিনজানিক। মিনজানিক দ্বারা শত্রু জাহাজের ওপর প্রস্তর নিক্ষেপ করা হতো। এ ছাড়া জাহাজে থাকত যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি। থাকত বেশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
মুসলমানরা জাহাজ নির্মাণের নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করেন। এসব কৌশল গ্রিক ও রোমানদের মধ্যে প্রচলিত ছিল না। ইউরোপের লোকেরা মুসলমানদের কাছ থেকে এগুলো লুফে নেয়। পরে তারা এর আরো উন্নতি সাধন করে।
সূত্র : সোনালী যুগের মুসলিম নৌশক্তি