তিনি বলেন, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আন্দোলনের অন্যতম দিক হলো দ্বীনি মারেফতের পুনর্জাগরণ—যার মধ্যে ‘আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকার’ (সত্কাজে উৎসাহ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান) অন্যতম, যা দ্বীনের স্তম্ভ এবং ইয়াজিদের যুগের বিকৃতি ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অবস্থান।
তিনি বলেন, মানুষের পরিচয়-বিষয়ক মারেফতও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—এটি হলো আল্লাহভীরু মানুষের মডেল উপস্থাপন, যার পাঁচটি গুণ থাকা উচিত: এবাদতকারী, দুনিয়াবিমুখ, সাহসী, মুক্তচেতা ও দায়িত্ববান। এমন মানুষ কখনোই দুনিয়ার দাসত্ব গ্রহণ করে না এবং প্রয়োজনে নিজের জীবন ত্যাগ করতেও দ্বিধা করে না।
আরেকটি মারেফত হলো আখিরাতচেতনা—এতে বলা হয়, আল্লাহর সন্তুষ্টিকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে করে মানুষ দুনিয়ার লোভ ছেড়ে আখিরাতের কল্যাণ অর্জনে সচেষ্ট হয়।
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর রাজনৈতিক মারেফতের দিকটি হলো, ইয়াজিদের মতো অইসলামিক শাসনের মুখোশ উন্মোচন করা এবং ইসলামি শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো—যেমন ন্যায়বিচার, তাকওয়া, যোগ্য নেতৃত্ব ও নফসী দুর্নীতি থেকে মুক্তি—উপস্থাপন করা।
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আন্দোলনের তাওহিদী দিকসমূহ
আয়াত পেইমান বলেন, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আন্দোলনের মূলেই ছিল খালিসভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য। তাঁর বিখ্যাত উক্তি—"আমি অহংকার, বিদ্রোহ বা দুর্নীতির জন্য বের হইনি, বরং আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি চাই।"
• তাওহিদ ফিল ইবাদাহ: ইবাদতের বিশুদ্ধতা রক্ষা এবং বেদআত ও বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন।
• তাওহিদ ফিত তা’আহ: কেবল আল্লাহর আনুগত্য—অন্য কারো, বিশেষ করে তাগুতি শক্তির (ইয়াজিদ) আনুগত্য না করা।
• তাওহিদ ফিত তাওাক্কুল: প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা করা। করবালার প্রেক্ষাপটে, ৭২ জন নিয়ে হাজার হাজার সৈন্যের মোকাবিলা তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
• তাওহিদ ফিশ শাহাদাহ: আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস রেখে শহীদ হওয়া—এটি হলো তাওহিদি জীবনের চূড়ান্ত প্রকাশ।
তাওহিদে পৌঁছার পথ: ইমাম হুসাইন (আ.)-এর দৃষ্টিভঙ্গি
• নবী (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ।
• ইমাম মাসুম (আ.)-এর নির্ভেজাল আনুগত্য।
• নিজের প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে ‘জিহাদে আকবর’ করে পরিশুদ্ধ হওয়া।
• দুনিয়ার মোহ ছেড়ে আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া (যেমন কربালায় সাহাবারা করেছিলেন)।
• খালিস ইবাদতে মগ্ন থাকা।
• আল্লাহর পথে জান কোরবান করার চেতনা (শহীদ হওয়া)।
• সর্বদা আল্লাহর জিকির ও দোয়ায় ডুবে থাকা—যেমন ইমাম করবালার প্রতিটি মুহূর্তে করে গেছেন।
তাওহিদের প্রমাণসমূহ ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বক্তব্যে:
• "اللَّهُمَّ أَنْتَ ثِقَتِی فِی كُلِّ كُرْبَةٍ": “হে আল্লাহ, তুমি সকল দুঃখ-কষ্টে আমার একমাত্র ভরসা।”
• "وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ" (ফুরকান, ৫৮): “আমি ভরসা করছি সেই চিরঞ্জীব সত্তার ওপর, যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করেন না।”
• শাহাদাতের মুহূর্তে উচ্চারণ:
"بِسْمِ اللّٰهِ وَ بِاللّٰهِ..." ইত্যাদি।
• দুয়া আরাফা: ইমামের দিক থেকে তাওহিদের এক অপূর্ব ব্যাখ্যা ও উপলব্ধির সাগর।
আধুনিক সমাজের জন্য শিক্ষনীয় বিষয়
• জ্ঞান ও সত্য বিকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো: সমাজের বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব।
• জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ: ইমামের শিক্ষা অনুসারে বর্তমান সমাজে সচেতন ও সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
• সামাজিক দায়িত্ববোধ: সমাজ ও উম্মাহর প্রতি প্রত্যেকের দায়িত্ববোধ।
• আধ্যাত্মিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেওয়া: ব্যক্তি ও জাতির স্বার্থের আগে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার।
• ঐক্য: সত্যের ভিত্তিতে, নেতৃত্বের অনুসরণে।
• আশা ও ইতিবাচক গঠনমূলক পদক্ষেপ: হতাশার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা।
আত্মগঠনের সুযোগ: ইমাম হুসাইন (আ.)-এর দৃষ্টিতে
• আত্মশুদ্ধি (তাযকিয়াহ): ইমামের মুসিবতের প্রতি আবেগ ও অশ্রু, হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে।
• আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকার: এটি শুধুই সামাজিক নয়, আত্মশুদ্ধির মাধ্যমও বটে।
• মৃত্যু-সচেতনতা ও আখিরাত-চেতনা: দুনিয়া ফানী, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী—এ চেতনা আত্মগঠনের চাবিকাঠি। 4293564#