ঘটনার পর জরুরি উদ্ধারকারী দল ও পুলিশ সেখানে পৌঁছে আগুন নেভানোর ও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
পুলিশ জানিয়েছে, আগুন নেভানোর সময় বাসের ভিতরে একজন ইসরায়েলির দগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো তার পরিচয় জানা যায়নি এবং নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনার উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখছে।
ইসরায়েলি মিডিয়া এই ঘটনার প্রকৃত কারণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে এবং এটিকে সম্ভাব্য নাশকতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, অপরাধ তদন্ত ও নিরাপত্তা ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করছে।
এই বিস্ফোরণের ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটেছে যখন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এবং কর্মকর্তারা একক হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
গাজায় একজন ইসরায়েলি সেনা নিহত
ইসরায়েলি মিডিয়া জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় একটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস হওয়ার ঘটনায় একজন সেনা নিহত ও আরও দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
চরমপন্থী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওয়েবসাইটেও জানানো হয়েছে, গাজায় সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট বড় ধরনের নিরাপত্তা হামলার শিকার হয়েছে। একটি ট্যাঙ্ককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং এর আরোহীরা আহত হয়েছে।
‘হাদশোত বেজমান’ নামক একটি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গাজায় বিস্ফোরক ডিভাইস ব্যবহারে এই নিরাপত্তা বিপর্যয় ঘটেছে।
‘লাইভ’ নামক ইসরায়েলি নিউজ সাইট জানিয়েছে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এই ঘটনায় সেনা হতাহতের সংবাদ প্রচারে সেন্সর আরোপ করেছে।
এর আগে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছিলেন যে, গাজার শুজাইয়া এলাকায় সংঘর্ষে পাঁচজন ইসরায়েলি সেনা আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার রাতে আরও একাধিক হামলায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আঘাত হানার খবরও প্রকাশিত হয়।
হামাস নেতার বক্তব্য: গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করাই মূল লক্ষ্য
ফিলিস্তিনি ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস-এর এক সিনিয়র নেতা গাজী হামাদ বলেন, ইসরায়েলের গাজা ত্যাগে চাপ সৃষ্টি করার চক্রান্ত ব্যর্থ করতে পারাটাই ছিল এই আলোচনার মূল অর্জন।
তিনি বলেন, দুইটি বিকল্প ছিল: দ্রুত একটি চুক্তি করে সব নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে তুলে দেওয়া, অথবা একটি গ্রহণযোগ্য ও সঠিক চুক্তি।
গাজী হামাদ বলেন, হামাস কখনো যুদ্ধবিরতির পথে বাধা সৃষ্টি করেনি এবং আলোচনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দখলদারদের চাপিয়ে দেওয়া শর্তগুলো মোকাবিলা করেছে।
তিনি জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্ত করতে যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হবে।
তাঁর ভাষায়, দখলদাররা এমন সব শর্ত দিচ্ছিল যা ফিলিস্তিনি জাতির আদর্শের বিরুদ্ধে, তাই সেগুলো প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আলোচনাগুলো এমন হওয়া উচিত যা গাজার সাহসী, ধৈর্যশীল ও ক্ষুধার্ত জনগণের মুক্তির প্রত্যাশা পূরণ করে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ইসরায়েল মানবিক সাহায্যের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চাচ্ছিল, অথচ আমরা ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে সকল মানুষের কাছে যথাযথ সাহায্য পৌঁছানোর দাবি জানিয়েছি।
তিনি বলেন, দখলদাররা গাজা ধ্বংসে সবরকম চাপ প্রয়োগ করছে এবং তাই আলোচনাগুলো একটি যুদ্ধের মতোই কঠিন ছিল, যাতে যুদ্ধের অবসান ঘটানো যায়।
গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে সুইডেনে বিক্ষোভ
শনিবার সুইডেনের স্টকহোম শহরের ওডেনপ্লান স্কয়ারে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা ও অবরোধের বিরুদ্ধে এবং সুইডিশ সরকারের নীরবতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে।
এই প্রতিবাদ মিছিলটি বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। তারা ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ বন্ধে সুইডিশ সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করে।
বিক্ষোভকারীরা পোস্টার বহন করে: ‘‘গাজায় শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে’’, ‘‘স্কুল ও হাসপাতালগুলোতে বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে’’, ‘‘ক্ষুধার অবসান ঘটান’’—এমন নানা স্লোগান।
তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে মিছিল করে এবং "ফিলিস্তিনের মুক্তি চাই", "নেতানিয়াহু-ট্রাম্প পরিকল্পনা বাতিল করো"—এই স্লোগান দেয়।
উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ম্যাথিয়াস গার্ডেল বলেন, ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে এবং সুইডিশ সরকার তার নীরবতার মাধ্যমে এ অপরাধে অংশগ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে দখল বজায় রেখেছে, খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং মানবিক সাহায্যের বিতরণ পয়েন্টে মৃত্যুফাঁদ পেতে রেখেছে। 4296431#