
প্রাতিষ্ঠানিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় ড্রেস কোড গুরুত্বপূর্ণ। এতে পেশাদারির পরিবেশ তৈরি এবং সবার মধ্যে সাম্য ও ঐক্য রক্ষা সহজতর হয়।
স্কুলে ড্রেস কোড শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষা, শিক্ষা পরিবেশের উন্নতি ও যুক্তিযুক্ততা নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখে।
দেশে দেশে ড্রেস কোডের ধরন ও ধারণা ভিন্ন ভিন্ন। কিছু দেশে আনুষ্ঠানিক কর্মপরিবেশে কঠোর ড্রেস কোড থাকে। কোনো কোনো দেশে ড্রেস কোড শিথিল।
মুসলিম বিশ্বে কঠোর ড্রেস কোড রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে, বিশেষ করে ব্যাবসায়িক পরিবেশে পুরুষদের জন্য স্যুট-টাই এবং মহিলাদের জন্য শালীন পোশাক পরা প্রচলিত।
কর্মপরিবেশে প্রফেশনাল লুক জরুরি। বাংলাদেশে ড্রেস কোড নিয়ে বিতর্ক জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।
অথচ আমেরিকা ও ফ্রান্সের ব্যাংকগুলোতেও ড্রেস কোড রয়েছে। ড্রেস কোড সাধারণ এবং মডেস্ট (সংযমী) হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ ও আমেরিকা এবং ফ্রান্সের ব্যাংকিং সেক্টরের তুলনা প্রাতিষ্ঠানিক ড্রেসিং মডেস্ট এবং প্রফেশনাল হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে নারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ সঙ্গে ওড়না প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ছোট হাতা বা ছোট পোশাক নিষেধ।
ছেলেদের জন্য ফর্মাল শার্ট, প্যান্ট, কিন্তু জিন্স বা টি-শার্ট নয়।
আমেরিকার ব্যাংক (গোল্ডম্যান স্যাক্স বা ইউএস ব্যাংক) : ছেলেদের স্যুট-টাই, ফর্মাল শার্ট এবং জুতা। মেয়েদের স্যুট, ব্লাউজ, স্কার্ট বা ড্রেস, কিন্তু ক্যাজুয়াল বা ছোট পোশাক নয়।
ব্যাংক দ্য ফ্রান্সসহ ফ্রান্সের ব্যাংকে ছেলেদের ডার্ক স্যুট, শার্ট, টাই। মেয়েদের কনজারভেটিভ পোশাক, ফ্ল্যাশি বা ছোট স্কার্ট নয়।
প্রতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রফেশনাল এবং এলিগ্যান্ট লুক প্রয়োজনীয়। যেমন খুশি তেমন পোশাক নয়! বরং ব্যক্তি স্বাধীনতা অফিসের বাইরে, অফিসে ব্যক্তিত্ববোধ খুব তাৎপর্যপূর্ণ।
ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়েরই পর্দা রক্ষা ‘দায়েমি ফরজ’ (সার্বক্ষণিক বাধ্যবাধকতা)। সুরা আহযাব, নুর ইত্যাদিতে পর্দার বিধানের বর্ণনা রয়েছে। উদ্দেশ্য, নারী পুরুষের পারস্পরিক শারীরিক ও মানসিক নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত হওয়া।
পর্দাকে আরবিতে বলে ‘হিজাব’। অর্থাৎ আবৃত করা, আড়াল করা, আচ্ছাদন, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি। একজন পুরুষের জন্য যেসব নারীকে বিয়ে করা হারাম (মাহরাম) শুধু তাদের সঙ্গেই পুরুষরা পর্দার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন। অতীব জরুরি প্রয়োজনে কথা বলা, দেখা-সাক্ষাতেও পর-পুরুষের সামনে পর্দা করতে হবে।
ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী, গায়ের মাহরামের (যাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ) সামনে পর্দা করা সর্বাবস্থায় ফরজ। তাদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশে বিরত থাকলেই পর্দার বিধান পালন হয়েছে ধরা যায়। তবে এমনভাবে পোশাক পরিধান করা, যেন বাইরের কারো দৃষ্টি আকৃষ্ট না হয় এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়। এ ক্ষেত্রে অস্বচ্ছ বোরকা, হিজাব, নিকাব, গ্লাভস, মোজা, জিলবাব আবায়া খিমার ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। রংবেরঙের পোশাকে পর্দার বিধান পালিত হলেও এতে মূল উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল! মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যা প্রকাশ করো ও গোপন করো আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত আছেন।’
(সুরা : আন-নুর, আয়াত : ২৯)
পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামী মূল্যবোধের শর্ত—
* অস্বচ্ছ (শরীর কাপড়ে ঢাকলে বাইরে থেকে শরীর দেখা যাবে না)।
* ঢিলেঢালা (আঁটসাঁট/ফিটিং নয়)।
* সম্পূর্ণ দেহ, মুখ, চুল, হাত, পা ঢেকে রাখা।
* নারীদের পোশাক যেন পুরুষের সাদৃশ্যপূর্ণ না হয়।
* জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরিহার করে সহজ-সরলভাবে চলা।
* আন্তরিকভাবে দুষ্টচিন্তামুক্ত থাকা।
লেখক : মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ, সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ
কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর