IQNA

মায়ানমারে সন্ত্রাসী নিধনের নামে রোহিঙ্গা গণহত্যা অব্যাহত

21:50 - August 30, 2017
সংবাদ: 2603718
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর বর্বরতা চলছেই। একের পর এক গ্রামে ঘর-বাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের।
মায়ানমারে সন্ত্রাসী নিধনের নামে রোহিঙ্গা গণহত্যা অব্যাহত
বার্তা সংস্থা ইকনা: হেলিকপ্টার থেকে ফেলা হচ্ছে বোমা-মর্টালশেল। আর এ কারণে নিরীহ রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বংলাদেশের দিকে ছুটছেন। কিন্তু সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় তারা সহজেই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছেন না। তারপরও বিভিন্ন কৌশলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন রোহিঙ্গার।

এদের ৪৬৮ জনকে মঙ্গলবার ফেরত পাঠানো হয়েছে। বুধবারও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় ৮৫ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। এই কড়াকড়ির কারণে সীমান্তের ‘জিরো পয়েন্টে’ রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ছেই।

অনাহারী-অর্ধাহারী ওই মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচে এখন মানবেতর জীবন পার করছেন। কক্সবাজারের উখিয়া ও বান্দরবানের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

এছাড়া টেকনাফ পৌর এলাকার ট্রানজিট জেটি থেকে রাখাইনের বিভিন্ন গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।

এদিকে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া ছবি দেখে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে। সংস্থাটি এই নির্যাতন বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে ঘুমধুম রেজু মৌজার চিকনছড়া, মনজয়পাড়া, ফাত্রাঝিরি, লাকড়িছড়া বাজার দিয়ে শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। জিরো পয়েন্টে খাবার ও পানীয় সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে তারা এদেশে ঢুকে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ক্যাম্প ও বাসাবাড়িতে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গারা।

কুতুপালং গ্রামের সাইফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন জানান, ডব্লিউএফপি ও ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় টমটম ও সিএনজিযোগে রেজু আমতলী থেকে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকছেন। অনেকে আহত হয়ে এমএসএফ হল্যান্ড হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।


নিজ দেশে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা জিরো পয়েন্টেও নিষ্পেষিত হচ্ছেন। তাদের গরু-ছাগলসহ নগদ টাকা-পয়সা দুর্বৃত্তরা লুট করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


সীমান্ত থেকে দেখা যায় মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আকাশে কিছুক্ষণ পরপর একটি হেলিকপ্টার চক্কর দিয়ে পুনরায় মংডু শহরের দিকে চলে যাচ্ছে। রাখাইনে সহিংসতার পর থেকেই এভাবে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা যায়। মঙ্গলবার দুপুরে একটি হেলিকপ্টার চক্কর দেয়ার পরপরই সীমান্তের কাছাকাছি রাখাইনের বিভিন্ন জায়গায় আগুনের ধোঁয়া দেখা যায়। শোনা যায় বিকট শব্দের গুলি ও মর্টারশেলের আওয়াজ।

বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) লে. কর্নেল আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘মঙ্গলবার রাখাইনের আকাশে একটি হেলিকপ্টার দেখা গেছে। এটি অবস্থান করে চলে যাওয়ার পর তাণ্ডবের বেশ কিছু আওয়াজ সীমান্তের এপারে এসেছে। এসব কারণে রোহিঙ্গারা সীমান্তের দিকে আসছেন।’

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গাকে আটকের পর মানবিক সহায়তা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’

রাখাইনে গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়েছে সেনারা। আকাশ থেকে হেলিকপ্টারে মর্টার ও মেশিনগানের গুলি ছুড়ে নিরীহ রোহিঙ্গাদের হত্যা করা হচ্ছে। মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে পাওয়া ভিডিওচিত্রে নির্যাতনের দৃশ্য দেখা গেছে।

মঙ্গলবার টেকনাফ পৌর এলাকার ট্রানজিট জেটি থেকে শত শত লোক রাখাইনের পেরামপুরু, নয়াপাড়া, মংডু কাইন্দাপাড়া, টামবাগান, দারোগাপাড়া গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার দৃশ্য দেখেছেন।

এ পরিস্থিতিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা স্বাধীনভাবে পর্যবেক্ষণ এবং মানবাধিকার হরণের অভিযোগ যাচাই করতে অবরুদ্ধ রাখাইনে প্রবেশাধিকার দিতে মায়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, ‘নতুন স্যাটেলাইট তথ্যের আলোকে দাতা ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর উদ্বিগ্ন হওয়া এবং মায়ানমার সরকার যেন রাখাইন রাজ্যে চলমান ধ্বংসের মাত্রা প্রকাশ করে তার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’

অত্যাচার-নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই এখন বিদ্রোহে নামছে। রাখাইন সম্প্রদায়ের আরসা নেতা শাহ আলম বলেন, ‘রাখাইনের তিনটি গ্রাম থেকে প্রায় ৩০ জন আরসা গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছেন। তাদের জীবনের অন্য কোনো চাওয়া নেই। হয় লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, নয়তো মরতে হবে।’
iqna

captcha