IQNA

উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশের উত্থান ও পতন

13:41 - November 29, 2017
সংবাদ: 2604430
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরাক ও সিরিয়ায় তৎপর উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএল বা দায়েশ চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়েছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র কুদস ব্রিগেডের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলায়মানি গত ২১ নভেম্বর সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীকে লেখা এক চিঠিতে দায়েশের চূড়ান্ত পরাজয়ের খবর দিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা ইকনা: ওই চিঠিতে তিনি বলেছেন, সিরিয়ার আল-বুকামাল শহর থেকে আমেরিকান-ইহুদিবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের পতাকা ভূলুণ্ঠিত করে সিরিয়ার পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সিরিয়া থেকে দায়েশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আজকের আসরে আমরা দায়েশের উত্থান এবং তিন বছরের মাথায় এই জঙ্গি গোষ্ঠীর চূড়ান্ত পরাজয় সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব।  

কীভাবে এবং কেন দায়েশের উত্থান হয়:

এটি এমন একটি প্রশ্ন যার উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিশ্বের নামকরা বিশ্লেষকরাও বিভ্রান্ত হয়েছেন। গত কয়েক বছরে নানা প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে দায়েশের উত্থানকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা হয়েছে। রাজনৈতিক, আদর্শগত, ঐতিহাসিক, এমনকি উপনিবেশবাদী প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে এই জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থানের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা হয়েছে। তবে উপযুক্ত দলিল ও প্রমাণ দিয়ে বেশিরভাগ বিশ্লেষক এটা প্রমাণ করেছেন যে, দায়েশের উত্থানে আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইল মূল ভূমিকা পালন করেছে।

তাদের মতে, দায়েশ উত্থানের বীজ বপন করা হয় ২০০৩ সালে ইরাকে ইঙ্গো-মার্কিন আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে। ওই আগ্রাসনের মাধ্যমে সাদ্দামের নেতৃত্বাধীন বাথ সরকারের পতন হলে ইরাকে বড় ধরনের নিরাপত্তাগত শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এই অরাজক পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক আল-কায়েদা ইরাকে তাদের নতুন শাখা খোলে।  সাদ্দামের বাথ সরকারের পদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবু মুসআব আল-জারকাভিকে এই শাখার প্রধান করা হয়। সাদ্দামের পতন পরবর্তী পরিস্থিতিতে ইরাকে যাতে একটি স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় বসতে না পরে সে দায়িত্ব দেয়া হয় জারকাভিকে। জারকাভিও বাধ্যগত ছাত্রের মতো ইরাকজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার তাণ্ডব চালিয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে। জারকাভির জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে প্রাণ হারায় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার শিয়া-সুন্নি মুসলমান।

পরবর্তীতে আবু ওমর আল-বাগদাদি এবং আবুবকর আল-বাগদাদিকে দিয়ে জারকাভির পালিত দায়িত্বকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে তারা তাদের গোষ্ঠীর নাম দেয় ‘দৌলাতে ইসলামিয়ে ইরাক’ বা ইসলামিক স্টেট অব ইরাক। পরবর্তীতে এর সঙ্গে শাম বা সিরিয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত করে ‘দৌলাতে ইসলামিয়ে ইরাক ওয়া শাম’ বা দায়েশ নামে আত্মপ্রকাশ করে এই জঙ্গি গোষ্ঠী। আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার কিছু মিত্র দেশের অর্থ, অস্ত্র ও গোয়েন্দা সাহায্য নিয়ে এই গোষ্ঠী রাতারাতি সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে ফেলে।

সৌদি আরব ও কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরো কিছু দেশের সমর্থন নিয়ে দায়েশ ২০১৪ সালের জুন মাসে হঠাৎ করে ইরাকের নেইনাভা, সালাউদ্দিন ও আল-আনবার প্রদেশের পুরোটা এবং দিয়ালা ও কিরকুক প্রদেশের একাংশ দখল করে নেয়। এমনকি এই জঙ্গি গোষ্ঠী ইরাকের রাজধানী বাগদাদের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। দায়েশ নামক বিষফোঁড়ার দিন দিন স্ফীত আকার ধারণের পেছনে আরব দেশগুলোর সরাসরি সমর্থন থাকলেও এর পেছনে ছিল ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলন দুর্বল করে ফেলার সুদূরপ্রসারি ষড়যন্ত্র। সিরিয়া ও লেবাননকে কেন্দ্র করে ইহুদিবাদী ইসরাইল বিরোধী যে প্রতিরোধ আন্দোলন চলছিল তাকে প্রতিহত করার জন্য ইসলামের বাহ্যিক বেশভুষা পরিয়ে এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে লেলিয়ে দেয়া হয়। অথচ বাস্তবে এই জঙ্গি গোষ্ঠীর আচরণের সঙ্গে ইসলামের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক ছিল না।

ইসলামের বাহ্যিক বেশভুষা দেখে প্রথমদিকে হাজার হাজার তরুণ বিভ্রান্ত হয় এবং এই জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দেয়। এই জনবলকে কাজে লাগিয়ে ইরাক ও সিরিয়ার লাখ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দায়েশ। দু’টি দেশের এসব এলাকার সব সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনার ওপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে তারা। এ কাজে তাদেরকে সামরিক পরামর্শ ও কমান্ড দিয়ে সহযোগিতা করে পতিত সাদ্দাম সরকারের বাথ পার্টির সামরিক কমান্ডাররা। উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশ তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞ চালায়। তারা সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, তেল ও গ্যাসের খনি, তেল শোধনাগার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর এগুলোর অনেক কিছু ধ্বংস করে দেয়। এমনকি তারা নির্মম হাতে ইরাক ও সিরিয়ার হাজার হাজার বছরের পুরনো প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস করে।  দু’টি মুসলিম দেশকে এভাবে ধ্বংস করে দেয়ার মার্কিন ও ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে মুসলিম নামধারী কিছু মানবতার দুশমন।

ইরাকে দায়েশের বর্বর জঙ্গিদের অগ্রাভিযানের ফলে দেশটিতে ভয়াবহ জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের আশঙ্কা তৈরি হয়। কারবালা, নাজাফ, সামেরা ও কাজেমাইনে অবস্থিত আহলে বাইতের পবিত্র ইমামদের মাজারগুলো হুমকির মুখে পড়ে। এ অবস্থায় ইরাকের প্রখ্যাত শিয়া আলেম আয়াতুল্লাহ সিস্তানি এক ঐতিহাসিক ফতোয়ায় দায়েশের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে জিহাদে কিফায়া হিসেবে ঘোষণা  করেন। এর মাধ্যমে ইরাক একটি ভয়াবহ ষড়যন্ত্র ও মহা দাঙ্গা থেকে রক্ষা পায়। আয়াতুল্লাহ সিস্তানির ফতোয়া অনুসরণ করে ইরাকে তৈরি হয় জনপ্রিয় গণবাহিনী ‘হাশদ আশ-শাবি’। এই স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান নিজের সীমান্তকে দায়েশের আগ্রাসন থেকে মুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দূরদর্শী দিক নির্দেশনা নিয়ে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশকে প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইরাক সরকারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশটিতে সামরিক উপদেষ্টা পাঠায় আইআরজিসি।

ওদিকে, উগ্র তাকফিরি জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশের অগ্রাভিযান রুখতে ইরাকের সেনাবাহিনী ও হাশদ আশ-শাবিকে প্রস্তুত করা হয়। এই সময়টিতে দায়েশ জঙ্গিরা বাগদাদের উপকণ্ঠে পৌঁছে গিয়েছিল এবং তারা বাগদাদের শহরতলীতে অবস্থিত কাজেমাইন এলাকা থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। কাজেমাইন এলাকায় ইমাম মুসা কাজেম (আ.) ও ইমাম মোহাম্মাদ তাকি (আ.)’র মাজার অবস্থিত।

কিন্তু এরপর আর এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে এক বিন্দু পরিমাণ অগ্রগতি অর্জন করতে দেয়নি ইরাকের সেনাবাহিনী ও হাশদ আশ-শাবি।  এই দুই বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী ইরানের সামরিক উপদেষ্টাদের পরামর্শ অনুযায়ী দায়েশের পশ্চাদ্ধাবন করে। তাদের ধাওয়া খেয়ে দায়েশ জঙ্গিরা বাগদাদ থেকে পিছু হটে যায় এবং বাগদাদ ও সামেরার মধ্যবর্তী এলাকা যৌথ বাহিনী পুনরুদ্ধার করে। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে সালাউদ্দিন প্রদেশের বেশিরভাগ এলাকা থেকে দায়েশকে হটিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আল-আনবার প্রদেশের রাজধানী রামাদিসহ আরো কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার হয়।

ইরাকের পাশাপাশি সিরিয়ায়ও একই ধরনের প্রতিরোধ সংগ্রামে একের পর এক সাফল্য আসতে থাকে। ২০১৬ সালের গোড়ার দিকে দায়েশ বিরোধী যৌথ বাহিনীর হামলায় ইরাকের ফালুজা শহর জঙ্গিমুক্ত হয়। এভাবে একের পর এক শহর ও এলাকা দায়েশমুক্ত হতে থাকে এবং চলতি মাসে ইরাকের আল-কায়েম শহর পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ইরাক থেকে দায়েশকে পুরোপুরি নির্মূল করে ফেলা হয়। ওদিকে সিরিয়ার সেনাবাহিনীও গত সপ্তাহে দায়েশের শেষ শক্ত ঘাঁটি বুকামালে জঙ্গিদের পতাকা নামিয়ে সিরিয়ার পতাকা উত্তোলন করে।

উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশের উত্থান হয়েছিল ইসলামকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে। বিশেষ করে তাদের লক্ষ্য ছিল ইরানের ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করানো। সেইসঙ্গে মাধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়াকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলাও ছিল দায়েশ প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য। এই ষড়যন্ত্রের  বিষয়টি প্রখ্যাত মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান র‍্যান্ডের এক প্রতিবেদনে ধরা পড়ে।  

র‍্যান্ড ২০১৬ সালের জুলাই মাসে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, "আমেরিকা, রাশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পদস্থ কর্মকর্তারা যখন ভিয়েনায় একত্রিত হয়ে সিরিয়া সংকট সমাধানের চেষ্টা করেন তখন এ বৈঠক থেকে ইতিবাচক কোনো কিছু আশা করা যায় না। ” র‍্যান্ডের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়: "এই যুদ্ধ হয়ত বহু বছর ধরে চলতে থাকবে। আর যতদিন যুদ্ধ চলবে ততদিন যে গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে যে এলাকা রয়েছে সেই গোষ্ঠী সেই এলাকা শাসন করবে।”

র‍্যান্ডের এই প্রতিবেদনে একটি বার্তা সুস্পষ্ট। আর তা হলো- অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও সিরিয়াকে খণ্ডবিখণ্ড করে রাখা।  বিশেষ করে গোটা সিরিয়ায় আবার কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করার আগ পর্যন্ত দায়েশের দখলে থাকা এলাকাগুলোকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়া। এই মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি সিরিয়াকে ১৯৪৫ পরবর্তী জার্মানির সঙ্গে তুলনা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানী চারটি অংশে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলার মাধ্যমে আবার অখণ্ড জার্মানী হতে ৪৪ বছর সময় লেগেছিল। র‍্যান্ড তার প্রতিবেদনে দাবি করে, সিরিয়ার ভাগ্যেও হয়ত তেমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে।

কিন্তু সিরিয়ার ভাগ্য মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারণ করতে পারেনি বরং যুদ্ধের ময়দানেই দেশটির ভাগ্য নির্ধারিত হয়। মার্কিন সরকার গত সাত বছরে সিরিয়ার সরকার বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর পেছনে প্রায় ২০০ কোটি ডলার খরচ করে। কিন্তু দেইর আজ-জোর ও বুকামাল থেকে দায়েশের শেষ চিহ্ন মুছে ফেলার মাধ্যমে আমেরিকার সে অর্থব্যয়কে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ করে দেয়া হয়।

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র কুদস ব্রিগেডের কমান্ডার মেজর জেনারেল সোলায়মানি এ সম্পর্কে তার চিঠিতে বলেছেন, ইরাক ও সিরিয়ার সেনাবাহিনী, দুই দেশের তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত গণবাহিনী এবং সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর নেতৃত্বাধীন লেবাননের হিজবুল্লাহ ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক গোষ্ঠী দায়েশ নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেনারেল সোলায়মানি  আরো বলেন, যখন একটি গোষ্ঠীর সামনে মানুষ হত্যা করার ক্ষেত্রে সামরিক ও বেসামরিক মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না এবং তারা নির্বিচারে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করতে থাকে তখন কোনো ধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই তাদেরকে নিরস্ত করতে পারে না। জিহাদ ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে এ ধরনের গোষ্ঠীকে নির্মূল করা সম্ভব নয়।

উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশের ভয়াবহ অপরাধ সম্পর্কে জেনারেল সোলায়মানি বলেন, "দায়েশ জঙ্গিরা এমন সব ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছে যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর কয়েকটি উদাহরণ হচ্ছে: শিশুদেরকে গলা কেটে হত্যা করা, পরিবারের সদস্যদের সামনে জীবন্ত পুরুষদের শরীরের চামড়া টেনে শরীর থেকে আলাদা করে ফেলা, নিরপরাধ নারী ও মেয়েদের অপহরণ করে তাদের ওপর বলাৎকার চালানো, মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা এবং গণহারে জবাই করে শত শত যুবককে হত্যা করা। যদিও এ ধরনের অপরাধযজ্ঞে আর্থিক ক্ষতির প্রকৃত পরিসংখ্যান বের করা সম্ভব নয় তারপরও প্রাথমিক হিসাবে এর আনুমানিক পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি ডলার। ”

ইরান কেন দায়েশ বিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তার উত্তর জানার জন্য এসব ঘটনা ও পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকারেক্তি অনুযায়ী, এই সব অপরাধযজ্ঞের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন হয়েছে আমেরিকার নিরাপত্তা সংস্থাগুলোরই হাতে।

জেনারেল সোলায়মানি ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে লেখা চিঠিতে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে উগ্র তাকফিরি জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশের বর্বরতা ও পাশবিক আচরণের প্রমাণ পাওয়া যায়। কাজেই দায়েশ নির্মূলের ফলে শুধু ইরান, সিরিয়া, ইরাক ও রাশিয়াই উপকৃত হয়নি সেইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বাকি সব দেশ এবং দায়েশের বর্বরতার শিকার প্রতিটি মানুষ উপকৃত হয়েছে। ইরাকে দায়েশ ছাড়া অন্য কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী তৎপর ছিল না বলে এই জঙ্গি গোষ্ঠী নির্মূলের ফলে দেশটি এখন বাগদাদের ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। অন্যদিকে সিরিয়া থেকে দায়েশ নির্মূলের পর এখন দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক সংলাপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। অচিরেই সিরিয়ায় পরিপূর্ণ শান্তি ফিরে আসবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। পার্সটুডে
captcha