IQNA

মামৌস্তা মোল্লা কাদের কাদেরী:

জ্ঞানী ও সাহসী নেতাকে অনুসরণ করার মাধ্যমে ইসলামী দেশসমূহের মধ্যে ঐক্য গঠন সম্ভব

23:53 - November 13, 2019
সংবাদ: 2609629
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আহলে সুন্নতের ধর্মীয় পরিকল্পনা কাউন্সিলের সদস্য বলেছেন: যখন ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতার বার্তা জনগণের নিকটে পৌছায়, তখন তাদের বুঝতে হবে যে, এ বার্তা তাদের ধর্মের পক্ষে প্রদান করা হয়েছে এবং এই বার্তা অনুযায়ী চললে তারাই লাভবান হবে। ইসলামী দেশসমূহের ঐক্য তখনই গঠন করা সম্ভব, যখন তাদের সংশোধনমূলক কর্ম শুধুমাত্র একজন নেতা দ্বারা পরিচালিত হবে। আর এটা যদি সম্ভব হয়, তাহলে কিছু দেশের বিপ্লব -বিশেষ করে মিশরের বিপ্লবের- মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবেনা।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পবিত্র জন্মের আনন্দঘন মাস রবিউল আউয়াল। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, এ মাসের ১৭ তারিখে তিনি বেহেশতী সুষমা নিয়ে পৃথিবীতে আসেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, ১২ রবিউল আউয়ালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। যদিও এ মতবিরোধের সমাধানের জন্য আয়াতুল্লাহ ইমাম খোমেনী (রহ:) ১২ থেকে ১৭ রবিউল আউয়ালকে 'ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ' ঘোষণা করেন।
প্রকৃতপক্ষে “ঐক্য” শব্দটি নিঃসন্দেহে অনেক সংবেদনশীল। ইতিহাসে এমন কিছু মানুষ ছিল এবং বর্তমানেও আছে, যারা পানি ঘোলা করে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাই। সুতরাং শিয়া ও সুন্নি আলেম ও অভিজাতদের পক্ষে সম্প্রদায় ছাড়াও ঐক্যের পথে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন রয়েছে এবং সকলের উচিত ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্ত থেকে রক্ষা করা।
আহলে সুন্নতের ধর্মীয় পরিকল্পনা কাউন্সিলের সদস্য এবং পাভের জুমার খতিব মামৌস্তা মোল্লা কাদের কাদেরী ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে “ইকনা”র মুবিন স্টুডিওতে উপস্থিত হয়েছেন। নীচে তার সাথে আলোচনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হল:

ইকনা: আমাদের আলোচনা এই আয়াতের মাধ্যমে শুরু করি। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন: মু’মিনগণ (বিশ্বাসীরা) একে অপরের ভাই। কিছু মানুষ শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের কথা বলেছে। তবে পবিত্র কুরআনের এই আয়াতে ভ্রাতৃত্বের কথা বলা হয়েছে। আপনার মতে কিভাবে সমাজে ভ্রাতৃত্বমূলক জীবনের আদর্শ গড়ে তোলা সম্ভব?
মামৌস্তা মোল্লা কাদের কাদেরী: যেমনটি আপনি উল্লেখ করেছেন, কুরআন সুস্পষ্টভাবে একে অপরের ভ্রাতৃত্বের সাথে মু’মিনদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে «إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ» [মু’মিনগণ (বিশ্বাসীরা) একে অপরের ভাই –হুজরাত, আয়াত: ১০] মুফাসসীরগণ “إِخْوَةٌ” (ইখওয়াতুন/ ভ্রাতৃত্ব) শব্দের সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে “তাফসিরে আল-কাশশাফ” লেখক বলেছেন: اخ –এর বহুবচন إِخْوَةٌ। এখানে তিনি বলেছেন: إِخْوَةٌ (ভাইগণ) অর্থাৎ সকল ভাইয়ের পিতা-মাতা একই হতে হবে।
সুতরাং পবিত্র কুরআন মু’মিনদের এতটাই নিকটবর্তী হিসাবে ব্যক্ত করেছে যে, তারা সকলেই আপন ভাই (তাদের পিতা-মাতা এক)। আমাদের মানদণ্ড হল কুরআন এবং সেখানে আপন ভাইয়ের কথা বলা হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং কর্পোরেট ভাইয়ের কথা বলায় হয়নি। অবশ্য, এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য থাকা ভাল। তবে এটি কুরানের সংজ্ঞার মতো এতো শক্তিশালী নয়। সুতরাং আমরা যদি এমন একটি সমাজে বাস করতে চাই যেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং ধর্মগুলি বিভিন্ন ভাষায় বাস করে তবে আমাদের এই শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। অবশ্য, মহান আল্লাহ ও কুরআনের কৃপায় ছায়ায় এই চল্লিশ বছরে এটি ঘটেছে।

ইকনা: কীভাবে এই ঐক্য ও স্থিতিশীলতা অন্যান্য দেশে সম্প্রসারণ করা যায়?
মামৌস্তা মোল্লা কাদের কাদেরী: জুমার নামাজের খুতবায় আমি বারবার বিপ্লবের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছি। বিপ্লবসমূহ কেবলমাত্র সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য ব্যক্তিদের শক্তি এবং উপস্থিতি প্রয়োজন হয় না। বরং একজন নেতা থাকার গুরুত্ব অনেক বেশী। যে'কিনা সাহসী এবং জ্ঞানী হবে। মিশরের নিপীড়িত জনগণ অনেক কষ্ট করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয়েছে। সিসির মতো লোক মিশরের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। আর এটি খুবই দুঃখজনক। বস্তুত মিশরের মুসলিম নেতারা জনগণকে একত্রিত করতে পারেননি। মিশরে একজন বুদ্ধিমান নেতার প্রয়োজন রয়েছে। মিশরের মতো দেশে শিয়া ও সুন্নি বিতর্ক মূলত প্রাসঙ্গিক নয়।
সুতরাং, একজন সাহসী ও জ্ঞানী নেতার অভাবের কারণে মুসলমানদের ব্যর্থ হচ্ছে। অবশ্য, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে এবং বিশেষ গুণাবলী সম্পন্ন নেতার কারণে সফল হতে পেরেছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে সকল মুসলমানদের একত্রিত করে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের প্রত্যেকটি দেশ পশ্চিমা একটি শক্তির সাথে জড়িত এবং তার এই অঞ্চলের সমস্ত প্রতিপত্তি, সম্পদ ও তেলে কেড়ে নিয়েছে।

ইকনা: আপনি আলেমদের ঐক্যের প্রতি ইঙ্গিত করেছে। বর্তমানে আমাদের সমাজে এটি কীভাবে সম্ভব?
সুন্নি আলেমদের উচিত শিয়া আলেমদের জন্য দোয়া করা এবং শিয়া আলেমদের উচিত সুন্নি আলেমদের জন্য দোয়া করা। আমরা যদি আফগানিস্তানের মতো একে অপরের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করি এবং বিস্ফোরণ ও হত্যার আহ্বান জানাই, তাহলে আজ আমাদের মধ্যে এই নিরাপত্তা থাকত না। সুতরাং, এই যৌক্তিকতার ছায়ায় বলবো যে, আমাদের দেশে জীবনে সুরক্ষা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তবে এর পাশাপাশি আমাদের সামাজিক সুরক্ষার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার।
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কুরআন আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন: «وَاعتَصِموا بِحَبلِ اللَّهِ جَميعًا وَلا تَفَرَّقوا». (এবং তোমরা সমবেতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়তার সাথে ধরে থাক এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ো না। -অলে ইমরান, আয়াত: ১০৩)। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে ইরশাদ করেছেন যে, আমার (মৃত্যুর)) পরে তোমরা বিভক্ত হবে না। সুতরাং আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকামী হওয়ার জন্য সকলকে কুরআনের দিকে ফিরে আসতে হবে এবং এই ঐশী গ্রন্থের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।  iqna

captcha