IQNA

ইমাম আলীর দৃষ্টিতে ইরফান তথা আধ্যাত্মিকতা

21:10 - July 23, 2016
সংবাদ: 2601249
মহানবী (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্যে (‘ইলমে রিজালে’র গ্রন্থসমূহে প্রায় বারো হাজার সাহাবীর পরিচিতি লিপিবদ্ধ হয়েছে) একমাত্র হযরত ইমাম আলীর (আ.) প্রাঞ্জল বর্ণনাই‘ ইরফানি’ বা আধ্যাত্মিক নিগূঢ়তত্ব সম্পন্ন এবং আধ্যাত্মিক জীবনের স্তরসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট, যা ইসলামের এক অমূল্য সম্পদ ভান্ডার।

কিন্তু অন্যান্য সাহাবীদের বক্তব্য বা
রচনায় এধরণের বিষয়ের কোন সন্ধানই পাওয়া যায় না । এমনকি হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর শিষ্যদের মত মহান শিষ্যও আর কারও ছিল না । যাদের মধ্যে হযরত সালমান ফারসী (রা.), হযরত রশিদ হাজারী (রা.), হযরত মাইসাম তাম্মার (রা.) অন্যতম।

এযাবৎ পৃথিবীতে যত আরেফ বা আধ্যাত্মিক পুরুষই এসেছেন, সবাই হযরত আলী (আ.) এর পর উপরোক্ত মহান শিষ্যদেরকে তাদের আধ্যাত্মিক গুরুদের তালিকার শীর্ষে স্থান দিয়েছেন। ইসলামে আধ্যাত্মিক পুরুষদের উপরোক্ত স্তরের পরবর্তী স্তর দ্বিতীয় হিজরী শতাব্দীতে যারা জন্ম গ্রহণ করেছেন, তাদের মতে তাউসে ইয়ামানী, মালিক বিন দিনার, ইব্রাহীম আদহাম, এবং শাকিক বালখীর নাম উল্লেখযোগ্য। তবে এরা আরেফ বা সুফী (আধ্যাত্মিক পুরুষ) হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরিবর্তে কৃচ্ছতা সাধানকারী (যাহেদ) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এবং জনগণের কাছেওয়ালি আল্লাহবা সতঃসিদ্ধ পুরুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন । কিন্তু এরা কোনক্রমেই নিজেদের আত্মগঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়টিকে তাদের পূর্ববর্তী স্তরের মহান পুরুষদের সাথে কখনও সংশ্লিষ্ট করেননি । এর পরবর্তী স্তরে হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষভাগে এবং হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর প্রথমদিকে আরেকটি আধ্যাত্মবাদী দলের অভ্যুদয় ঘটে । জনাব বায়েজীদ বোস্তামী, মারূফ কিরখী, জুনাইদ বাগদাদী প্রমূখ এ স্তরের অন্তর্ভুক্ত এরা সবাই আধ্যাত্মবাদের প্রক্রিয়ার অনুসারী ছিলেন এবংআরেফবাসুফীহিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। এরা সবাইকাশফ’ (আত্মঃউপলদ্ধি) এবং শুহুদের’ (অর্ন্তদর্শন) ভিত্তিতে বক্তব্য প্রদান করেছেন তাদের ঐধরণের কথা ইসলামে বাহ্যিকরূপের সাথে ছিল সাংঘর্ষিক।

ফলে তাদের ঐসব কর্মকান্ড সমসাময়িকফকীহ’ (ইসলামী আইন বিশারদ) ওমুতাকাল্লিমিনদের (ইসলামী বিশ্বাস শাস্ত্রবিদ) তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তোলে। যার পরিণতিতে তারা অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। তাদের অনেকের জেলে বন্দীজীবন কাটাতে হয়। অনেকেই নৃশংস অত্যাচারের সম্মুখীন হন। আবার অনেকেরই ফাঁসির কাষ্ঠে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে।

এতকিছুর পরও তারা তাদের আধ্যাত্মবাদী প্রক্রিয়ার স্বপক্ষে বিরোধীদের সাথে লড়াই করে যেতে থাকেন। আর একারণেই তাদেরতরীকতবা আধ্যাত্মিকপন্থা ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করতে থাকে। এভাবে সপ্তম ও অষ্টম হিজরী শতাব্দীতে এসে এইতরীকতবা আধ্যাত্মবাদ পূর্ণ শক্তিতে আত্মপ্রকাশ লাভ করে । এরপর তখন থেকে আজ পর্যন্ত আধ্যাত্মবাদ কখনওবা শক্তিমত্তার সাথে আবার কখনও দূর্বলাবস্থায় আত্মপ্রকাশ করেছে। আর এভাবে আজও সে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।

ট্যাগ্সসমূহ: ইমাম ، মহানবী ، আলী ، ইয়ামান ، ইসলাম
captcha