IQNA

নিজেকে অনাবশ্যক করে তোলার মধ্যেই সফলতা খুঁজছেন সুচি

16:44 - December 10, 2016
সংবাদ: 2602124
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সাং সুচি মনে করেন নিজেকে যত অপ্রয়োজনীয় করে তুলতে পারবেন, নেত্রী হিসেবে ততটাই সফলতা পাবেন তিনি। চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে গত সপ্তাহে দেয়া এক সাক্ষাতকারে সুচি বলেন, আমি আশা করি আমি নিজেকে পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় করে তুলতে পারব, যাতে তারা আমাকে তাদের চলার পথে অনাবশ্যক মনে করবে, এমনকি আমার দল ন্যাশনাল লিগ অব ডেমোক্রেসি কিংবা দেশকেও অপরিহার্য মনে হবে না।
নিজেকে অনাবশ্যক করে তোলার মধ্যেই সফলতা খুঁজছেন সুচি
বার্তা সংস্থা ইকনা: সাক্ষাতকারে সুচি রোহিঙ্গা, চীনের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ক ও যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন সম্পর্কে তার বক্তব্য দেন। সুচির এ সাক্ষাতকারটি নেন লিন জিউলিং।
সুচি বলেন, আমি মানুষকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে আমি ১৫ বছর গৃহবন্দি ছিলাম। আমরা আমাদের দলকে অনেক কঠিন বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে পরিচালিত করেছি। তাই আপনি আমার দলের অনেকের ক্ষমতা সম্পর্কে অবশ্যই অবমূল্যায়ন করবেন না। তারা জনগণের আসল পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত।
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কি অসম্ভব কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে সুচি বলেন, আমি তা মনে করি না। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাহায্য করে তাহলে অনেক উপকার হয়। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কত বড় চ্যালেঞ্জ, স্পর্শকাতর ও ‘ডেলিকেট’ সে উপলব্ধি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের থাকলে সুবিধা হয়। কারণ রাখাইন অঞ্চলে শুধু মুসলমানরাই আতঙ্কিত ও দুশ্চিন্তায় রয়েছে তা নয়। রাখাইন জনগোষ্ঠীর হার আনুপাতিক হারে কমে যাচ্ছে। অব্যশ্যই মুসলমান ও রাখাইন জনগোষ্ঠীর মধ্যেকার সম্পর্ক যে ভাল নয় তা আমরা স্বীকার করি এবং এ সম্পর্ক ভাল করার জন্যে আমরা কাজ করছি। কিন্তু তা কোনো কাজে আসবে না যদি সকলেই পরিস্থিতির নেতিবাচক দিকটির দিকে কেবল নজর দেয়।
তিনি বলেন, গত ৯ অক্টোবর রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয়। আমরা রাখাইন অঞ্চলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত রাখার চেষ্টা করছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সাহায্য করে তাহলে রাখাইন অঞ্চলে মুসলমান ও রাখাইন গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে তা সহায়ক হবে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কেবল দোষারোপ করে কি লাভ, রাখাইন অঞ্চলে তো আদতেই বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে সুচি বলেন, আমি তা জানি। আমি বলছি না রাখাইন অঞ্চলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা রাখাইন অঞ্চলের সমস্যাকে আরো কঠিন করে তুলছে, সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে সেখানকার পরিস্থিতিকে অতিরঞ্জিত করে বলা হচ্ছে, বাস্তব পরিস্থিতি যা তার চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি বলা হচ্ছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আপোষ করে কাজ করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সুচি বলেন, আপোষ কোন অর্থে তা বলতে পারব না। তবে এটা বলতে পারি দর কষাকষির মধ্যে দিয়ে আমরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছি এবং এভাবে আমরা একে অপরকে বুঝতে পারছি। সেনবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ককে দেয়া ও নেয়ার সঙ্গে তুলনা করেন সুচি। তিনি বলেন, বরং আপোষ শব্দটি ভুল ব্যাখ্যা দিতে পারে। আমরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলি, তাদের কথা শুনি, যদি তাদের কথা আমাদের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে তা বাস্তবায়িত হয় এবং তা হওয়া উচিত।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আইনের শাসনের অধীনে কাজ করছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সুচি বলেন, আমরা সেনাবাহিনীকে চমৎকার সহযোগিতা করছি। আমরা এক সঙ্গে কাজ করছি। রাখাইন জাতি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী সে অঞ্চলে একসঙ্গে কাজ করছে। অবশ্যই পুলিশ স্থানীয় প্রশাসনের অধীনে আছে।
তাহলে রাখাইন অঞ্চলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক, সাংবাদিকদের যেতে দেয়া হচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সুচি বলেন, আমরা সেখানে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারছি না। সেখানে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কোনো সময় সীমা দিতে না পারলেও বলছি যত শীঘ্রই সম্ভব রাখাইন অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসবে। পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এর জন্যে সেখানকার মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা যদি তা না করে তাহলে রাখাইনে শান্তি ফিরে আসতে দীর্ঘ সময় লাগবে। সরকারের লোকজন তাদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে এ সমস্যা রাজনৈতিক এবং তা সমাধানে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন।
মিয়ানমারের জনগণ কি বুঝছে যে আপনি ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন, এ প্রশ্নের জবাবে সুচি বলেন, আমি মনে করি তাদের অধিকাংশই মনে করে আমি চেষ্টা করছি।
গত ৯ মাসে সরকার পরিচালনায় সুচি খুশি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুখী বা অসুখী এমনভাব বিষয়টি দেখি না। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা মোকাবিলা করতে হবে। হ্যা, সকলেই চায় তা দ্রুত মোকাবিলা করতে, এটা ইচ্ছা হলেও কিন্তু বাস্তবে কতটা সম্ভব হবে তা ভেবে দেখতে হয়। আমি খুশি এজন্যে যে অনেক চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবিলা করতে সমর্থ হয়েছি। কিন্তু এখনো আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে তাদের এ চ্যালেঞ্জে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আপনার বিগত ৯ মাসে সবচেয়ে বড় অর্জন কি, এমন প্রশ্নের জবাবে সুচি জবাব দেন, মিয়ানমারের মন্ত্রীরা দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তবে কিছু জুনিয়র অফিসার রয়েছে যারা এখনো কাঙ্খিত মানের কাজ করতে পারছেন না।
যুক্তরাষ্টের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ককে চমৎকার উল্লেখ করে আগামী ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে এ সম্পর্কে কোনো হেরফের হবে না বলে মন্তব্য করেন সুচি। চীন এ অঞ্চলে গঠমূলক ভূমিকা পালন করবেন তেমন আশা করে সুচি বলেন, বড় শক্তির দেশ হিসেবে চীন অনেক বড় কাজ করতে পারে। চীন যখন প্রথম ১৯৫০ সালে কম্যুনিষ্ট সরকার গঠন করে তখন মিয়ানমার সর্বপ্রথম ওই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।#
আমাদের সময়.কম
captcha