
বাংলাট্রিবিউনের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা ইকনা: বিধ্বস্ত রাখাইন রাজ্যগত অক্টোবর ও নভেম্বরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংতাও শহরের সহিংস ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত সরকারি কমিশনটি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশে আরও সময় চেয়েছে। নতুন করে মানবাধিকার লংঘিত হওয়ার অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্তের কথা বলে নতুন করে সময় চেয়েছে তারা। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
গত ১ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এ তদন্ত কমিশন গঠন করে দেওয়া হয়। কোন কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে অক্টোবর ও নভেম্বরে মংতাওতে সীমান্ত পুলিশের চৌকিতে সশস্ত্র হামলা হয়েছে তা তদন্ত করতে বলা হয়। সীমান্ত পুলিশ চৌকিতে ওই হামলায় ৯ সীমান্তরক্ষী নিহত হয়েছিল। সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়ে'র নেতৃত্বে গঠিত কমিশনটি ৩১ জানুয়ারি এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করার কথা ছিল।
তবে এর একদিন আগে অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠায় প্রতিবেদনটি প্রকাশে দেরি হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লংঘিত হওয়ার নতুন নতুন অভিযোগ আসছে এবং প্রেসিডেন্টের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময়সীমা নতুন অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।’
ধারণা করা হচ্ছে, এ রিপোর্টে কমিশন সেনাবাহিনীকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় থেকে অব্যাহতি দিতে যাচ্ছে। যদি সেটাই হয়ে থাকে, তাহলে রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তের জন্য বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক তদন্তের যে দাবি উঠেছে সেটি আরো জোরালো হবে।
এ বছর অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন' চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। জাতিসংঘ এরইমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিযোগ এনেছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডেরও অভিযোগ তোলা হয়।
দেশটিতে অব্যাহত রোহিঙ্গা নির্যাতন ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’র শামিল বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করতে মিয়ানমার সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে সাম্প্রদায়িক তিক্ততা চলে আসছে রাখাইন বৌদ্ধ ও রাজ্যটিতে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে। দেশটিতে প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়,এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি। মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদীরা জোর দিয়ে বলে আসছে,রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। তারা রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা’ না বলে ‘বাঙালি’ বলে থাকে। তিক্ততার ফলে ২০১২ সালে রাখাইনে ভয়াবহ মুসলিমবিরোধী সহিংসতা সংঘটিত হয়। ১ লাখের ও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়।