IQNA

মোবাহেলা; মহানবীর (সা.) আহলে বাইতের (আ.) মহত্ত্ব প্রমাণের অন্যতম দলিল

15:02 - September 16, 2017
সংবাদ: 2603842
১০ হিজরির ২৪ জিলহজ নাজরানের খ্রিষ্টান প্রতিনিধি দলের সাথে মহানবী (সা.)-এর মোবাহেলার বিষয়টি তাঁর (সা.) সত্যপন্থী ও সঠিক পথের অনুসারী হওয়ার প্রমাণ স্বরূপ।

শাবিস্তানের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন; যখন ঈসা সম্পর্কিত জ্ঞানগর্ভ আলোচনার পরেও তারা আপনার সাথে ঝগড়া করছে তখন আপনি বলুন, এসো! আমি আমার নারীদের নিয়ে আসবো, তোমরাও তোমাদের মহিলাদেরকে নিয়ে আসবে, আমি আমার সন্তানদেরকে নিয়ে আসবো তোমরাও তোমাদের সন্তানদেরকে নিয়ে আসবে, আমি আমার নফসকে নিয়ে আসবো তোমরাও তোমাদের নফসকে নিয়ে আসবে, তারপর মোবাহেলা করবো এবং আল্লাহর লানতকে মিথ্যাবাদীদের উপর বর্ষণ করবো।

পবিত্র কুরআনের এ আয়াত নাজিল হবার পর রাসূল (সা.) খ্রিস্টানদের বললেন, আপনারা আপনাদের কয়েক জন পুত্র, নারী ও ঘনিষ্ঠ জনকে নিয়ে আসুন। আর আমরাও একই কাজ করে জনসমাবেশে এসে মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষণের জন্য প্রার্থনা করবো। রাসূলেখোদার এ আহবানের পর খ্রিস্টানদের পোপ তার দলের অন্যান্য সদস্যদের বললো, মোবাহেলার প্রস্তাব মেনে নাও। কিন্তু যদি দেখ, মুহাম্মদ তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে মোবাহেলার জন্য উপস্থিত হয়, তাহলে তোমরা তা করা থেকে বিরত থাকবে এবং কোনভাবে আপোষ করবে।

শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের মুফাসসির ও মুহাদ্দিসরা এ বিষয়টিকে স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করেছেন যে, মোবাহেলার আয়াতটি মহানবী (সা.) এর আহলে বাইত (আ.) এর ফজিলতে নাযিল হয়েছে। আর মহানবী (সা.) শুধুমাত্র তার দুই সন্তান হাসান ও হুসাইন (আ.), তাঁর কন্যা ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) ও তাঁর জামাতা হযরত আলী (আ.) কে সাথে নিয়ে মোবাহেলার ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলেন। সুতরাং আয়াতে উল্লেখিত (أبنائنا) শব্দটি দ্বারা শুধুমাত্র হাসান এবং হুসাইন (আলাইহিমাস সালাম) কে বোঝানো হয়েছে, (نسائنا) শব্দটি দ্বারা শুধুমাত্র ফাতেমা (সা. আ.) কে বোঝানো হয়েছে এবং (أنفسنا) শব্দ দ্বারা শুধুমাত্র হযরত আলী (আ.) কে বোঝানো হয়েছে। আর এ আয়াতে হযরত আলী (আ.) কে মহানবী (সা.) এর জীবন ও নাফস হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে।

এ সিদ্ধান্তের পর মুসলিম-খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন অধির আগ্রহে মোবাহেলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে যিলহাজ্জ মাসের ২৪ মহানবী (সাঃ) তার পরিবারের মাত্র চার জন সদস্যকে নিয়ে নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হয়েছেন। এই চার জন হলেন, রাসুল কন্যা ফাতেমা (সা.), জামাতা হযরত আলী (আ.) এবং তাঁদের দুই পুত্র হাসান ও হোসাইন (আ.)। রাসূলের সাথে এ চারজনকে দেখে খ্রিস্টানদের দলনেতা বললো, আমি এমন কিছু চেহারাকে দেখতে পাচ্ছি যে, যদি তাঁরা দোয়া করেন, তাহলে পাহাড় টলে যাবে এবং যদি আমাদের ওপর অভিশাপ দেন, তাহলে আমরা একজনও জীবিত থাকবো না। সুতরাং তোমরা মোবাহেলা বন্ধ কর। পোপের পীড়াপীড়ি নাজরানের প্রতিনিধিদের উপর প্রভাব বিস্তার করলো। এক ধরনের অস্থিরতা তাদেরকে ঘিরে ধরলো। দ্রুত তারা একজনকে প্রতিনিধিকে পাঠালো রাসূল (সা.)-এর কাছে। ঐ প্রতিনিধি রাসূলের সাথে দেখা করে মোবাহেলাহ্ বন্ধ করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানালো এবং শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দিল।

খ্রিস্টানদের প্রস্তাব পেয়ে মহানবী (সা.) তাদের উপর অনুগ্রহ করলেন এবং আলীকে নির্দেশ দিলেন চুক্তির শর্ত লিখতে। চুক্তির শর্ত নির্ধারিত হওয়ার পর খ্রিস্টানরা তা মেনে নিয়ে নাজরানের উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে রওনা হল। এভাবে খ্রিস্টানদের ওপর মুসলমানদের বিজয় অর্জিত হল।
captcha