বার্তা সংস্থা ইকনা: জেরুজালেম খ্যাত বায়তুল মোকাদ্দাস শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতি প্রত্যাহারের পক্ষে গতকাল জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। ঐতিহাসিক ওই ভোটাভুটিতে ১২৮ টি দেশ স্বীকৃতি প্রত্যাহার প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। ইসরাইল ও আমেরিকাসহ বিপক্ষে ভোট দেয় মাত্র ৮টি দেশ। অনুপস্থিত ছিল ৩৫ দেশ। আর ভোট দানে বিরত ছিল ২১ টি দেশ।
ভোটাভুটির আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জাতিসংঘে মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হ্যালি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে এই ভোটাভুটির ওপর মার্কিন সাহায্য নির্ভর করছে। অর্থাৎ ট্রাম্পের স্বীকৃতি প্রত্যাহারের পক্ষে যদি কেউ ভোট দেয় তাহলে আমেরিকা আর সে দেশকে সাহায্য দেবে না বলে হুমকি দেয়। অন্যভাবে বলা যায় হোয়াইট হাউজ এক ধরনের ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে। প্রস্তাবটি এমন: একদিকে মার্কিন অর্থ সাহায্য অপরদিকে কুদস প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদে বিল ও আন্তর্জাতিক অধিকার রক্ষা-দুয়ের যে-কোনো একটি বেছে নিতে হবে।
এই হুমকি দিয়ে আমেরিকা এবং তার উপদেষ্টারা ভেবেছিল যেসব দেশ মার্কিন রাজনীতি ও অর্থ সাহায্যপুষ্ট তারা অন্তত কুদস প্রশ্নে আমেরিকার পক্ষে রায় দেবে। মজার ব্যাপার ইসরাইল আমেরিকা ছাড়া মাত্র ৬টি দেশ অর্থ সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কায় ট্রাম্পের ইচ্ছের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় নি।
সিআইএ'র সাবেক প্রধান জন ব্রেনন এ সম্পর্কে বলেছেন: যেসব দেশকে ট্রাম্প অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল সেসব দেশ কোনোরকম উচ্চবাচ্য না করে, নীরবে মার্কিন অবস্থানের বিরুদ্ধে তাদের অধিকার প্রয়োগ করেছে। এ বিষয়টি প্রমাণ করেছে ট্রাম্প সবার কাছ থেকেই অন্ধ আনুগত্য প্রত্যাশা করেন, যে বৈশিষ্ট্যটি স্বৈরাচারীদের মাঝেই দেখা যায়।
কিন্তু আমেরিকার বিরুদ্ধে রায় দেওয়া দেশগুলোর ব্যাপারে ট্রাম্পের হুমকি বাস্তবায়নেরও খুব বেশি সুযোগ নেই। যেমন মিশর, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাকের মতো দেশগুলোর কথাই ধরা যাক। এই দেশগুলো মার্কিন অর্থ ও সামরিক সাহায্য নিয়ে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যে এই দেশগুলোর কৌশলগত ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এসব দেশকে সাহায্য দেয়া বন্ধ করে দিলে মার্কিন নীতিকৌশলের ওপর মারাত্মক আঘাত আসবে। অপরদিকে মার্কিন সাহায্য বন্ধ হলে এই দেশগুলো চীনের মতো নয়া ধনী দেশের শরণাপন্ন হবে। সে ক্ষেত্রে বিশ্বব্যবস্থায় মার্কিন স্থান দখল করবে এরকম দেশগুলো।
সর্বোপরি আমেরিকা কিংবা সেদেশের প্রেসিডেন্ট যদি তাদের ইচ্ছে অন্যান্য দেশের ওপর চাপিয়ে দিতে চায় তাহলে ওয়াশিংটনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঝড় উঠবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। পার্সটুডে