IQNA

ইসরাইল ‘একঘরে’ রাষ্ট্র, বন্ধু হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

13:28 - December 23, 2017
সংবাদ: 2604621
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র যে তাদের ইসরাইলের দূতাবাস বিরোধপূর্ণ জেরুজালেম এ স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে , সেটিকে মেনে নিল না বিশ্ব। বিশ্বের তাবৎ রাষ্ট্রগুলোর অসন্তুষ্টি আর অবস্থানকে উপেক্ষা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ট্রাম্পের প্রশাসন।


বার্তা সংস্থা ইকনা: বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এবং ভৎসনা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। অথচ এই প্রস্তাব পাশ যেন না হয়, সে ব্যাপারে সব সদস্য দেশকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলেছে, এটা যুক্তরাষ্ট্র এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটি বিশাল পশ্চাদদেশ প্রদর্শন স্বরূপ। ডোনাল্ড ট্রাম্প যে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সেটাকে জাতিসংঘের ১২৮টি দেশ গ্রহণ করেনি।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বাতিল এবং ছুঁড়ে ফেললো দেশগুলো।

বিবিসির জানাচ্ছে, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতির বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ১২৮টি দেশ।

প্রস্তাবের বিপক্ষে মাত্র নয়টি দেশ ভোট দিয়েছে। কিন্তু ৩৫টি দেশ এতে ভোটদানে বিরত থাকে।

প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়া দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, মার্শাল আইল্যান্ডস, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পালাউ ও টোগো। ভোটদানে বিরতদের মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোও রয়েছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের প্রায় সবাইকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছিল।বলেছিল, আমরা অনেক দেশকে অযথাই পয়সা দিচ্ছি, তারা আমাদের টাকা নেবে অনুদান হিসেবে অথচ আমাদের বিপক্ষে কাজ করবে, সেটা যুক্তরাষ্ট্র মনে রাখবে। ট্রাম্পের এই হুমকি কার্যত মেনে নেয়নি আন্তর্জাতিক বিশ্ব।

যারা ট্রাম্পের অবস্থানকে সমর্থন করে হ্যাঁ ভোট দিয়েছে তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইলের বাইরে অন্য রাষ্ট্রগুলো তেমন পরিচিত নয়। ক্যারিবীয় অঞ্চলের ছোট কয়েকটি দ্বীপ রাষ্ট্র ও দুর্বল রাষ্ট্রের সমর্থন শুধু যুক্তরাষ্ট্র পেয়েছে।

এর আগে সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জেরুজালেম প্রশ্নে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে মিশর। নিরাপত্তা পরিষদের ১৪ স্থায়ী সদস্য দেশ ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।

নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ওই প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ায় ওই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৪ দেশের ভোট ওয়াশিংটনের জন্য ‘অপমানজনক’ বলে মন্তব্য করেন হ্যালি।

দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ ব্রিটেন এবং রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গৃহীত ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। যদিও এই প্রস্তাব বা ভোটাভুটির কোন কার্যকারিতা বা পরিস্থিতির হেরফের হবে না, তবে এটা মার্কিনিদের ক্ষয়িষ্ণু বিশ্ব নেতৃত্বের পথে বড় একটি টার্নিং পয়েন্ট। এর ফলে, ইসরাইলকে সুবিধাজনক অবস্থানে নিতে যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার কার্যত কোন ফল আসবে না। বিশ্বব্যাপী ইসরাইল এখনো এক ঘরে একটি রাষ্ট্র হিসেবেই বিবেচিত হবে।

এর বাইরে বিশ্ব আবারো জানিয়ে দিল যে, ইসরাইল ১৯৭৬ সালে আরব–ইসরাইল যুদ্ধের নামে যে ভূখণ্ড দখল করে রেখেছিল এবং এখনও দখল করে আছে, সেটার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি মিলবে না অদূর ভবিষ্যতেও।

১৯৪৬ সালে জাতিসংঘ নতুন একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের জন্য ভূমধ্যসাগরের পাশে ইহুদি অধ্যুষিত ভুমি নিয়ে আর জর্দানের পাশে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের বসতভূমি নিয়ে আলাদা দুটি রাষ্ট্রের সীমারেখা টেনে দেয়। আরব রাষ্ট্রগুলো সেটা মেনে নেয়নি, তবে ইসরাইল সেই সীমা রেখা মেনেই ১৯৪৮ সালে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভাব হয় বিশ্বে।

এরপর, ১৯৬৭ সালে আরব ইসরাইলের যুদ্ধের পরিণতিতে ইসরাইল যেসকল অতিরিক্ত ভূখণ্ড দখল করেছিল, পশ্চিম তীরের জেরুজালেম তারই অংশ। এমনকি ওই যুদ্ধে মিশরের সিনাই উপত্যকা দখল করে রেখেছিল ইসরাইল ৩০ বছর ধরে। পরে আনোয়ার সাদাত আর ইজয়াক রবিনের মধ্যকার শান্তি চুক্তির প্রেক্ষিতে, সেই সিনাই উপত্যাকা ছেড়ে দিয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু জেরুজালেমকে দখল করে রেখে সেখানেই তাদের রাজধানী হিসেবে নানা কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।

বিশ্বের কোন দেশ এর আগে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়নি। সবার দূতাবাস তেল আবিবে। এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও এই সিদ্ধান্তে কার্যত আর কোন দ্বিতীয় দেশকেই পাশে পায়নি। সে কারণে বিশ্বে ইসরাইল এখনও যে এক ঘরে এক রাষ্ট্র সেটা প্রমাণিত হল। এমটিনিউজ

captcha