IQNA

সেই সুইডিশ যুবককে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিল ফিলিস্তিন

15:37 - July 08, 2018
সংবাদ: 2606159
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরাইলি দখদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেব সুদূর সুইডেন থেকে পায়ে হেঁটে ফিলিস্তিন গিয়ে আলোচনায় আসা বেনজামিক লাদরাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছে ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত শুক্রবার তাকে ফিলিস্তিনের নাগরিকত্ব দেন।


বার্তা সংস্থা ইকনা: ফিলিস্তিনে অব্যাহত ইসরাইলি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গত বছর পায়ে হেঁটে স্ক্যান্ডেনেভিয়া অঞ্চলের দেশটি থেকে কর্মসূচী শুরু করেন লাদরা। ফিলিস্তিনের ওয়াফা বার্তসংস্থা জানিয়েছে, মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ‘লাদরার প্রচেষ্টা ও ফিলিস্তিনি জনগনের প্রতি তার আন্তরিকতাকে সম্মান জানিয়ে তাকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে।’

শুক্রবার ফিলিস্তিনে প্রবেশের সময় ইসরাইলি পুলিশ বাধা দিয়েছিলো ২৫ বছর বয়সী বেনজামিন লাদরাকে। জর্দান হয়ে ফিলিস্তিনে প্রবেশের সময় তাকে আটক করে ইসরাইলি পুলিশ। ছয় ঘণ্টা বন্দী থাকার পর তিনি ছাড়া পান এবং ফিলিস্তিনে প্রবেশ করেন।

সুইডেন থেকে ফিলিস্তিন পর্যন্ত আসতে পুরো পথ পায়ে হেঁটে চলেছেন এই যুবক। তিনি পাড়ি দিয়েছে জার্মানি, অস্ট্রিআ, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, লেবানন ও জর্দান।

সুদূর সুইডেন থেকে ফিলিস্তিন, প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে চলছেন ২৫ বছরের তরুণ বেনজামিন লাদরা। স্ক্যান্ডেনেভিয়া অঞ্চলের দেশ সুইডেনের এক টগবগে তরুণ সে। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের হয়ে। ফিলিস্তিন নিয়ে পড়াশুনা করতে গিয়ে তার ইচ্ছে হয় নির্যাতিত ওই ভূখণ্ডটির জন্য কিছু করার।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ও ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধ সচেতনতা তৈরির জন্য একটি অভিনব উদ্যোগ নেন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট সুইডেনের গোথেনবার্গ শহর থেকে শুরু হয়েছে ‘ওয়াক ফর প্যালেস্টইন’ নামে তার কর্মসূচী। সাথে নিয়েছেন ফিলিস্তিনের পতাকা।

পর্যায়ক্রমে জার্মানি, চেক রিপাবলিক, অস্ট্রিয়া, স্লোভেনিয়া, সাইপ্রাস হয়ে তিনি গত সপ্তাহে পৌছেছেন তুরস্ক। লাদরার মূল গন্তব্য পশ্চিম তীরের জেরুসালেম শহরে। তুরস্কের ডেইলি সাবাহ পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে লাদরা বলেন, অনেক বাঁধাও পেয়েছি চলতি পথে, কিন্তু আমি হাঁটা বন্ধ করবো না। চলতে গিয়ে ক্লান্তি, ক্ষুধায় অনেক কষ্ট পাচ্ছি, বরফের মধ্যেও কখনো রাত কাটাতে হচ্ছে। কিন্তু আমার চেয়েও অনেকগুণ কষ্টে আছে ফিলিস্তিনিরা।

কোন স্পন্সরশিপ ছাড়াই ব্যক্তিগত অর্থায়নে এক বছরের এই কর্মসূচী। তবে তার উদ্যোগের কথা প্রকাশ হওয়ার পর ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ কেউ সাহায্য করেছেন লাদরাকে। সুইডেনে বসবাসরত কিছু ফিলিস্তিনির কাছ থেকে দেশটির জনগনের দুর্দশার কথা শুনেই বেনজামিন লাদরার আগ্রহ জন্মায় এ বিষয়ে। আরো জানতে প্রচুর পড়াশুনা করেছেন তিনি, অনলাইনে দেখেছেন বিভিন্ন ভিডিওচিত্র। পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখতে সরাসরি গিয়েছেন ফিলিস্তিনেও। কাছ থেকে দেখেছেন একটি জাতিকে কিভাবে দিনে দিনে তাদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

এরপর দেশে ফিরে গিয়েই আগ্রহী হয়েছেন ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষদের জন্য কিছু করতে। নিজের ক্ষুদ্র সামর্থে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরিকেই লাদরার কাছে যথাযথ মনে হয়েছে। বলেন, ‘আমি নিজ চোখে সেই দখলদারিত্ব দেখেছি। এটি একটি চরম জাতিগত নিপীড়ন, বিশেষ করে হেবরনে আমি যা দেখেছি। সর্বত্র ইসরাইলি সেনারা পাহাড়া দিচ্ছে। যখন তখন ফিলিস্তিনিদের হেনস্তা করা হচ্ছে, যার সব কিছু মানুষ জানতেও পারছে না। ’

অভিনব এই উদ্যোগে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও শান্তিকামী মানুষের সমর্থন পেয়েছেন লাদরা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুক্তিকামী মানুষরা তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। পথে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে তাকে রাত কাটানো ও বিশ্রামের জায়গা দিয়েছেন।

বয়স যখন জীবনটাকে উপভোগ করার ঠিক সে বয়সে এই তরুণ কাজ করছেন বিপন্ন মানবতার জন্য। তার ভাষায়, ‘যত বেশি জানবেন তত বেশি আপনি স্বোচ্চার হবেন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। বই পড়ে ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে মিশে তাদের অবস্থা সম্পর্কে আমি জেনেছি। সেটিই আমাকে প্রভাবিত করেছে’।

captcha