IQNA

ফাতেমা যাহরার (আ.) ঐতিহাসিক খুতবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক

23:23 - November 29, 2018
সংবাদ: 2607384
মহানবীর (সা.) ওফাতের পর মদীনার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বহু অনাকাঙ্ক্ষিত ও মর্মান্তিক ঘটনার অবতারণা ঘটে; তম্মধ্যে আমিরুল মু’মিনিন আলীর (আ.) ন্যায়সঙ্গত খেলাফত হরণ, ফাতেমা যাহরার (আ.) বাগে ফেদাক দখল এবং আহলে বাইতের (আ.) গৃহে আক্রমণের ন্যায় ন্যক্কারজনক ঘটনা অন্তর্ভুক্ত।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: নবী নন্দিনী ফাতেমা যাহরা (আ.) এমন এক সংকটাপন্ন মূহুর্তে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণকে নিজের অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব মনে করেছিলেন। তাই তো তিনি মসজিদে নববীতে এসে আনসার ও মুহাজিরদের সম্মুখে এমন আপোষহীন ও বাগ্মী খুতবা দান করেছেন।

খুতবার সনদ

নিঃসন্দেহে মসজিদে নববীতে প্রদত্ত হযরত ফাতেমা যাহরার (আ.) ঐতিহাসিক খুতবার সনদ অকাট্যভাবে প্রমাণিত। কেননা এ খুতবাটি এতই প্রসিদ্ধ ও খ্যাতিসম্পন্ন যে, ইসলামের প্রথম সারির মুহাদ্দেস ও ইতিহাসবেত্তাগণ ধারাবাহিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তা বর্ণনা করেছেন। আহলে বাইতের (আ.) পবিত্র সদস্যগণও একের পর এক বিশেষ যতœ সহকারে এ খুতবাটি হেফাজত ও সংরক্ষণ করেছেন। খুতবার বিষয়বস্তুও ইসলামের মৌলিক বিধানের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।

খুতবার বিষয়বস্তু

নবী নন্দিনী ফাতেমা যাহরা (আ.) এ খুতবাতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন-

১- তিনি রাসূলুল্লাহর (সা.) ওফাতের পর সংঘটিত বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে নিজের মতামত ও অবস্থানকে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। বিশেষত: ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিষয় তথা ইমামত সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। তাঁর দৃষ্টিতে ইমামত হচ্ছে মানুষকে হেদায়েত দানের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে মনোনীত একটি বিশেষ শাশ্বত পদের নাম; যা মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। বস্তুত: ইমামত হচ্ছে ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এবং আল্লাহ প্রদত্ত হেদায়েতের অত্যুজ্জ্বল দিশারী, যা প্রথম ইমাম আমিরুল মু’মিনিন আলীর (আ.) মাধ্যমে প্রজ্বলিত হয়েছে।

২- তিনি উক্ত ঐতিহাসিক খুতবাতে ইসলামী আকিদার দু’টি মৌলিক স্তম্ভ যথা: তওহীদ (একত্ববাদ) ও নবুয়তের উপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মহান আল্লাহর মহিমান্বিত গুণাবলী বর্ণনার মাধ্যমে স্বীয় খুতবার সূচনা করেছেন। তারপর মহানবীর (সা.) বৈশিষ্ট্যাবলী উল্লেখপূর্বক মানবজাতিকে অজ্ঞতা ও মূর্খতা হতে মুক্তির পাশাপাশি হেদায়েত দানের ক্ষেত্রে তাঁর অতুলনীয় ভূমিকা এবং তাঁর পর ইমামতি ধারার মাধ্যমে এ দায়িত্বের পূর্ণতার কথা তুলে ধরেছেন।

৩- তিনি এ অতীব গুরুত্বপূর্ণ খুতবাতে পবিত্র কুরআন ও ইসলামী শরীয়তের গুরুত্ব ও রহস্য এবং ধর্মীয় আহকামের বৈশিষ্ট্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।

৪- রাসূলের (সা.) ওফাতের পর মুসলমানদের মধ্যে বিচ্যুতি ও বিপথগামীতার কথা উল্লেখ করে তাদেরকে বিজ্ঞজনোচিত উপায়ে সতর্ক করেছেন। অতঃপর তিনি মদীনার আনসারদেরকে মহানবীর (সা.) প্রতি তাদের সাহায্য ও সহযোগিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন; যাতে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তাদের বিবেক ও ঈমান জাগরিত হয়।

৫- তিনি এ ঐতিহাসিক খুতবাতে তাঁর মি’রাসী সম্পত্তি ও বাগে ফেদাক জবর দখলের প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন। অবশ্য এক্ষেত্রে তিনি মোটেও আবেগের বশবর্তী হন নি; বরং পবিত্র কোরআনের আয়াত ও বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে নিজের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের কথা বলেছেন। নবী নন্দিনী (আ.) এ খুতবাতে তাঁর দাবী উত্থাপনের ক্ষেত্রে অকাট্য দলীলাদি উপস্থাপনের মাধ্যমে এক নজিরবিহীন বাগ্মী ও আপোষহীন নারী হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন।

captcha