IQNA

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বন্ধু হারিয়ে কোনঠাসা হতে যাচ্ছে ভারত!

10:09 - January 02, 2020
সংবাদ: 2609955
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে যেভাবে এখনো আন্দোলন চলছে তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। এই পরিস্থিতিতে শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এই সিএএ নিয়ে ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছে ভারত।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: বাংলাদেশ, মালয়েশিয়াসহ ভারতের একাধিক বন্ধুদেশ এই আইন নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুদ্ধ। তাদের বক্তব্য, এই আইন ভারতের মতো বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশের পক্ষে ইতিবাচক নয়।

বিভিন্ন দেশের সরকার সিএএ-কে ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করলেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন একাধিক দেশের কূটনীতিক ও রাষ্ট্রদূতরা। ভারতে নিযুক্ত অন্ততঃ ১৬ দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা সিএএ নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন।

এই প্রসঙ্গে জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত এক দেশের রাষ্ট্রদূত সাফ জানিয়েছেন, ভারত সরকার কাশ্মির এমনকি অযোধ্যা ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়েও আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিল। যদিও তখন এইসব ইস্যুকে ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে ধরা হয়েছিল।

কিন্তু, সিএএ-র মতো এতবড় একটি ইস্যু যার আন্তর্জাতিক পরিব্যাপ্তি রয়েছে, তা নিয়ে ভারত সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনার কোনও আগ্রহই দেখাল না। সবথেকে বড় কথা এতে তিনটি প্রতিবেশী দেশের কথা বলা হয়েছে।

জি-২০, পি-৫ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশগুলির একাধিক কূটনীতিক সিএএ নিয়ে নিজেদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও তারা এই আইনের বিরোধিতাই করেছেন। প্রকাশ্যে মন্তব্য করলে ভারতের সঙ্গে তাদের দেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে বলে তারা মনে করছেন। এমনিতেই সিএএ নিয়ে প্রকাশ্যেই নিজেদের অসন্তোষের ইঙ্গিত দিয়েছিল বাংলাদেশ ও জাপান।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাদের ভারত সফর বাতিল করেন। অধিকাংশ বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা মনে করছেন, সিএএ বিরোধী আন্দোলন শুধু মুসলিমদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং এখন তারা জানার চেষ্টা করছেন– এই সিএএ-র বিরুদ্ধে যে আন্তর্জাতিক সমালোচনা হচ্ছে তা নিয়ে মোদি সরকার আদৌ চিন্তিত কি না।

একাধিক বিদেশি কূটনীতিক আবার মনে করেন, এই আন্তর্জাতিক সমালোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই দায়ী। কারণ– তারা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্পর্কে খুব বেশি ওয়াকিবহাল নন।

বিদেশি সংবাদ মাধ্যমও এখন জানতে ইচ্ছুক– মোদি সরকার আরও কতবড় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ঝুঁকি নির্দ্বিধায় নিয়ে নিতে পারে? এখন প্রশ্ন হচ্ছে– এই ধরনের পদক্ষেপ করে ভারত সরকার কি তাদের এতদিনের বন্ধুদের হারাচ্ছে?

কাশ্মীরে ৩৭০ রদের বিষয়ে কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করা প্রমীলা জয়পালের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া এড়াতে সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর আমেরিকার এক শীর্ষ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছেন। কারণ আমেরিকার সেই প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন চেন্নাইয়ে জন্ম হওয়া জয়পাল।

শুধু তাই নয়, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এলিজাবেথ ওয়ারেন ও পিটার বুট্টিগেগ প্রকাশ্যেই জয়পালকে এই ইস্যুতে সমর্থন করেছেন। ফলে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েন জয়শংকর। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে ইউরোপের একটি দেশের রাষ্ট্রদূতের তরফে।

তিনি বলেন, যতদিন যাচ্ছে মোদি সরকারের অবস্থান ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ইমেজ ফিকে হচ্ছে। যেভাবে সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশি জুলুম হয়েছে– কলেজ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয়েছে তা থেকে এই বার্তাই স্পষ্ট হয়েছে--- মোদি সরকার অসহিষ্ণু। বিন্দুমাত্র সমালোচনা সহ্য করতে পারে না।

এই বিষয়ে জি-২০ গোষ্ঠীর এক দেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, যেভাবে সম্প্রতি বিনিময় পদ্ধতিতে ভারতে পড়তে যাওয়া জার্মানি শিক্ষার্থীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে তাতে ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ’ (ভারত) সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। এখনো পর্যন্ত অনেক রাষ্ট্রনেতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না চাইলেও বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সিএএ-র বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।
সূত্র: dailynayadiganta

এমনকি আমরিকা– ইংল্যান্ড– ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলিও তাদের পর্যটকদের ভারতে যাওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক নির্দেশিকা দিয়েছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন কোনো রাখঢাক না করেই বলেন, ভারতের যে ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি রয়েছে এই আইন (সিএএ) তাকে দুর্বল করে দেবে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মুহাম্মদ সিএএ-র সমালোচনা করে বলেন, সিএএ-র জন্য মানুষ মরছে। যদিও মোদি সরকারের পক্ষ থেকে তখন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘তথ্যগত অসত্য’।

আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক আর পম্পেও আগেই ভারত সরকারকে বলেছিলেন, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রেক্ষিতে সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত রাখার জন্য।

মানবাধিকার বিষয়ক রাষ্ট্রসংঘের হাই কমিশনার সিএএ-কে ‘মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক’ ও ‘সমতার প্রতি দায়বদ্ধতাকে লঘু করেছে’ বলে কটাক্ষ করেছেন।

captcha