IQNA

ইরানে ইসলামী বিপ্লবের গৌরবময় অগ্রযাত্রার ৪১ বছর (পর্ব পঞ্চম)

21:54 - February 06, 2020
সংবাদ: 2610182
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানে সংঘটিত ইসলামী বিপ্লব বিশ্ব ইতিহাসের এমন এক যুগান্তকারী ঘটনা যা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হতে থাকবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বড় বড় গবেষণা-কেন্দ্রগুলোতে।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তির একটা বড় অংশ যে অনেক আগেই তৈরি হয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

মহাকবি ও দার্শনিক আল্লামা ইকবাল ‘জামিয়াতই আকওয়াম’ বা ‘জাতিগুলোর সমিতি (জাতিসংঘ)’ শীর্ষক কবিতায় লিখেছেন: যদি তেহরান হয় জেনেভা প্রাচ্যের/

তবে হয়তো বদলে যাবে তাকদির এ ধরণীর।’আল্লামা ইকবাল বলেছিলেন, ‘আমাদের মুসলিম সভ্যতা হচ্ছে সেমিটিক তথা আরব ও আর্য তথা ইরানি ভাবধারার মিশ্র-উর্বরায়নের ফসল। মুসলিম সভ্যতা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে আর্য মাতার কোমলতা বা দয়া ও সূক্ষ্মতা বা পরিশীলতা এবং সেমিটিক বাবার উন্নত ও মহৎ চরিত্র। পারস্য জয়ের সুবাদে মুসলমানরা পেয়েছে তা-ই পেয়েছে যা পেয়েছিল রোমানরা গ্রিস জয়ের মাধ্যমে। কিন্তু পার্থক্য হল পারস্য না থাকলে আমাদের মুসলমানদের সংস্কৃতি হয়ে পড়ত চরম একপেশে।’

আল্লামা ইকবাল তার দূরদৃষ্টির মাধ্যমে দেখতে পেয়েছিলেন যে ইরানে এমন এক মহাপুরুষ ও ত্রাণকর্তার আবির্ভাব ঘটবে যিনি মানুষকে মুক্ত করবেন দাসত্ব আর দুঃখ-বঞ্চনার শৃঙ্খল থেকে। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছিলেন:

অবশেষে আসবেন সেই মানুষ মুক্ত করতে

তাদেরে যারা বন্দি হয়ে আছে দাসত্বের কঠিন শৃঙ্খলে

বন্দিশালার দেয়ালের জানালায় আমি যেন সবই দেখছি।

ইকবালের এই ভবিষ্যদ্বাণী মরহুম ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ বিপ্লব কেবল ইরানি জাতিকে নয় একইসঙ্গে গোটা মানবজাতিকে মুক্তির দিশা দিয়ে যাচ্ছে।

ইমাম মাহদির (আ) পুনরাবির্ভাব সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য ইসলামী বর্ণনায় দেখা যায় ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ শেষ ত্রাণ-কর্তার বিশ্ব-ইসলামী বিপ্লব সংঘটনের প্রাথমিক পর্যায় ও ভিত্তি গড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

এক ইসলামী বর্ণনায় এসেছে: “কোম থেকে এক ব্যক্তি উত্থিত হবেন এবং তিনি জনগণকে তথা ইরানী জাতিকে সত্যের দিকে আহ্বান করবেন। যে দলটি তার চারপাশে জড়ো হবে তাদের হৃদয় ইস্পাত-কঠিন দৃঢ় হবে এবং তারা এতটা অক্লান্ত ও অকুতোভয় হবেন যে, যুদ্ধের প্রচণ্ড চাপও তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত করবে না এবং তারা যুদ্ধে ক্লান্ত হবেন না। তারা সব সময় মহান আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে। আর শুভ পরিণতি কেবল মুত্তাকী-পরহেজগারদের জন্যই নির্ধারিত।”

অন্য এক ইসলামী বর্ণনায় এসেছে: তারা তথা ইরানী জাতি তাদের অভ্যুত্থান এবং বিপ্লব সফল করার পর নিজ শত্রুদের তথা পরাশক্তিগুলোর কাছে অনুরোধ করবে যে, তারা যেন তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ না করে। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে জবরদস্তি করবে। “তারা তথা ইরানি জাতি নিজ অধিকার দাবি করবে কিন্তু তাদেরকে তা দেয়া হবে না। তারা পুনরায় তা চাইবে। আবারও তাদের অধিকার দেয়া হবে না। তারা এ অবস্থা দেখে কাঁধে অস্ত্র তুলে নেবে এবং তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। অবশেষে তাদের অধিকার দেয়া হবে কিন্তু এবার তারা তা গ্রহণ করবে না। অবশেষে তারা রুখে দাঁড়াবে এবং তোমাদের অধিপতির অর্থাৎ ইমাম মাহ্দীর হাতে বিপ্লবের পতাকা অর্পণ করা পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। তাদের নিহত ব্যক্তিরা হবে সত্যের পথে শহীদ।”

বিভিন্ন বর্ণনা অনুসারে অবশেষে ইরানি জাতি তার দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে বিজয়ী হবে এবং যে দু’ব্যক্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তারা ইরানি জাতির মাঝে আবির্ভূত হবেন। এ দু’জনের একজন ‘খোরাসানী’যিনি ফকীহ্ ও মারজা অথবা রাজনৈতিক নেতা হিসাবে এবং অপরজন শুআইব ইবনে সালিহ্ যিনি হবেন শ্যামলা বর্ণের চেহারা ও স্বল্প দাঁড়িবিশিষ্ট। দ্বিতীয় এই ব্যক্তি হবেন তেহরান-সংলগ্ন রেই বা রাই অঞ্চলের অধিবাসী। তিনি প্রধান সেনাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কাছে এ দু’ব্যক্তি ইসলামের পতাকা অর্পণ করে তাঁদের সর্বশক্তি নিয়ে তাঁর আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবেন। আর শুআইব ইবনে সালিহ্ ইমামের সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হবেন।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বর্তমান অগ্রযাত্রা হযরত ইমাম মাহদি (আ)'র আবির্ভাব পর্যন্ত টিকবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হয়ত বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু যা বলা যায় তা হল এ বিপ্লবের সেই সময় পর্যন্ত টিকে থাকার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এরিমধ্যে ইরানের ইসলামী বিপ্লব লেবানন, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যাপক বিস্তৃত প্রভাব সৃষ্টি করেছে। এ মহাবিপ্লব প্রভাব সৃষ্টি করেছে সুদূর নাইজেরিয়ায় এবং পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও কাশ্মিরেরও একাংশে। ইরানের সামরিক শক্তি আজ এতই শক্তিশালী যে রাশিয়া ও চীনের মত পরাশক্তি পারস্য-উপসাগর এবং আশপাশের মহাসাগর অঞ্চলে ইরানের সঙ্গে যৌথ নৌ-মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। আর এতে মার্কিন, পশ্চিমা ও ইহুদিবাদ-ঘনিষ্ঠ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর বুকে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আতঙ্ক এবং তারা ইরানের নৌ- শক্তিকেও ব্যাপক মাত্রায় সমীহ করতে বাধ্য হচ্ছে।
সূত্র: parstoday

captcha