IQNA

ইরানে ইসলামী বিপ্লবের গৌরবময় অগ্রযাত্রার ৪১ বছর (পর্ব -চার)

0:02 - February 05, 2020
সংবাদ: 2610173
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরান ও ইরাকে সংঘটিত ঘটনাবলী বিশ্বের প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের প্রধান শহীদ সোলাইমানি মার্কিন সন্ত্রাসী হামলায় বাগদাদে শহীদ হওয়ার পর সমসাময়িক ইতিহাসের বা স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ ও বিশ্বনন্দিত জেনারেল হিসেবে সবার শ্রদ্ধা অর্জন করে ইসলামী বিপ্লবের সম্মানকেই বাড়িয়ে দিয়েছেন বহু গুণে। কারণ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস-বিরোধী যুদ্ধের এই মহানায়ক ও সফল সমরবিদ এবং সামরিক-কূনীতিক জেনারেল সোলাইমানি ইরানের ইসলামী বিপ্লবেরই সুফল। অনেক পর্যবেক্ষক, গবেষক ও বিশ্লেষক বলছেন, ইরান এ ধরনের আরও অনেক সোলাইমানিকে জন্ম দেয়ার ক্ষমতা রাখে এবং এ ধরনের বহু অনাগত সোলাইমানি এখনও তাঁর শূন্য স্থান পূরণ করতে সক্ষম। ইরানের সোলাইমানির মত ব্যক্তিরা হচ্ছেন প্রকৃত ইসলামী আদর্শ ও আশুরা সংস্কৃতির অনন্য সন্তান। এ ধরনের ব্যক্তিত্ব একাই একটি আদর্শ বা উন্নত জাতির সমতুল্য। সোলাইমানির সঙ্গে বাগদাদে শহীদ হয়েছিলেন তাঁরই সহযোগিতায় সন্ত্রাসী আইএসব বা দায়েশ-বিরোধী সংগ্রামে সাফল্য অর্জন করা ইরাকের জনপ্রিয় আধা-সামরিক বাহিনী পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটের উপপ্রধান আবু মাহদি আল মুহানদিস।

মার্কিন সন্ত্রাসী হামলায় ইরাকিদের রাষ্ট্রীয় মেহমান ইরানের কাশেম সোলাইমানি ও ইরাকের জাতীয় বীর আবু মাহদি শহীদ হওয়ায় ইসলামী ইরানের পাশাপাশি ইরাকেও দেখা দিয়েছে মার্কিন ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী প্রবল জাগরণ। শহীদের রক্তের শোধ নিতে ইরাকি সংসদ মার্কিন সেনাদের ইরাক থেকে বের করে দেয়ার প্রস্তাব পাশ করেছে। সম্প্রতি বাগদাদে এরই সমর্থনে অন্তত ২৫ লাখ ইরাকি গণ-বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। গত কয়েক দশকে ইরাক, ইরান, সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন ও ইয়েমেনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের প্রায় সব ষড়যন্ত্রের ব্যর্থতাগুলোর পেছনে ভূমিকা রেখেছে ইরানের ইসলামী বিপ্লব। ইরাক আজ ইরানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ইহুদিবাদী ইসরাইল ইরানপন্থী লেবাননের হিজবুল্লাহর কাছে অন্তত দু'বার বড় ধরনের পরাজয়ের শিকার হয়েছে। গাজায় বার বার হামলা চালিয়েও ইসরাইল তিক্ত ব্যর্থতার স্বাদ গ্রহণ করেছে। আর এসবেও ভূমিকা ছিল ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সামরিক ও নৈতিক সহায়তা এবং কাসেম সোলাইমানির মত বিচক্ষণ সমর-নেতার পরামর্শ।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নানা সাফল্যের প্রধান কারণ হল এ বিপ্লবের খোদায়ী বা ঐশী প্রকৃতি। এ বিপ্লবের মহান রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনি খালি হাতেই গোটা পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন সরকারের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র হিসেবে বিবেচিত শাহ সরকারকে উৎখাত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

ইসলামী বিপ্লবের সফল নেতা হিসেবে ইমাম খোমেনী (র.)‘র আবির্ভাব আধুনিক বিশ্ব-ইতিহাসে ও বিশ্ব রাজনীতিতে এক বড় ভূমিকম্প। তিনিই আধুনিক যুগে প্রথমবারের মত ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা সংস্কৃতির কর্তৃত্ব ও আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে এবং খোদাবিমুখ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের কথিত পরাশক্তিগুলোর আধিপত্যকে অবজ্ঞা করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামকে তুলে ধরেছেন সমসাময়িক যুগের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও চ্যালেঞ্জিং শক্তি হিসেবে। বিশেষ করে তাঁর নেতৃত্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতি ইরানি জাতির প্রবল চপেটাঘাত বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদী শক্তি-বলয় তথা ইবলিসি শক্তিগুলোর একাধিপত্যকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। বিগত হাজার বছরের ইতিহাসে ইসলামী শক্তির এমন প্রবল উত্থান এবং ইসলামের গৌরবময় পতাকার এত উচ্চতর অবস্থান আর কখনও ঘটেনি।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (রহ.) একাধারে এমন একটি ঐতিহ্যের উত্তরসূরি ও এই ধারার সফল পরিপূর্ণতাদানকারী যে ধারার আলোকে ইরানের আলেম, জনগণ এবং এমনকি বুদ্বিজীবী সম্প্রদায়েরও সবাইই মুজতাহিদ ফকিহদের আনুগত্য করতেন।

ইরানের ঐতিহ্যবাহী আলেম-সমাজ প্রাচীন কাল থেকেই জনগণের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিতেন।

অবশ্য ইমাম খোমেনী (র.) যোগ্যতা ও অবদানের দিক থেকে সমসাময়িক যুগের সব মুজতাহিদকে ছাড়িয়ে গেছেন, যদিও অতীতের মুজতাহিদদের সংগ্রাম বা আন্দোলনগুলোই চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বে। এ প্রসঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর হামিদ আলগার বলেছেন:

"আয়াতুল্লাহ খোমেনী (র.) মানবাদর্শের এক মূর্ত প্রতীক। তিনি কেবল নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক যোগ্যতার এক অপূর্ব সমন্বয়ের মাধ্যমে ইরানে এরূপ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন।...তার বিপ্লব শুধু যে রাজনৈতিক ও কৌশলগত ব্যাপার ছিল তা নয়, আধ্যাত্মবাদের এক অন্তর্নিহিত শক্তির মাধ্যমেও তা নিখুঁত-নির্ভুলভাবে পরিচালিত হয়েছে। ... .... ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশে ফিরে আসলেন। কিন্তু তিনি সাথে করে কোনো সম্পদ আনেননি। কোনো রাজনৈতিক দলও তিনি গঠন করেননি। কোনো গেরিলা যুদ্ধও পরিচালনা করেননি। কোনো বিদেশী শক্তির সাহায্যও তিনি নেননি। অথচ এর মধ্যেই তিনি ইসলামী আন্দোলনের তর্কাতীত নেতৃত্বে সমাসীন হলেন। "

ইমাম খোমেনীর ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী ও আপোষহীন ইচ্ছাশক্তি। অনেকেই তাকে নমনীয় ও কম উচ্চকিত হওয়ার পরামর্শ দিলেও তিনি কখনও আপোষ করতেন না। বহির্বিশ্বের সবাই যখন ইমাম খোমেনীকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রীয় ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন না করার তখন তিনি তাদের এই উপদেশে কান দেননি। অনেক ইরানিও এ পরামর্শ দিয়েছিলেন তাকে। তাদের যুক্তি, যখন বিশ্বের বৃহত্তম অনারব সুন্নি রাষ্ট্র তুরস্ক ও আরব সুন্নি রাষ্ট্র মিশর ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে তখন আমরা কেন আমাদের দেশকে বিপদের দিকে ঠেলে দেব? কিন্তু ইমাম খোমেনী এসবে কান না দিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। ... আর এটাই হল ইসলামের ইচ্ছাশক্তি যা আপোষহীন ও অদম্য।-- আশুরা সংস্কৃতির সন্তান ও নবী বংশের সদ্স্য মরহুম ইমাম খোমেনী এমনই এক অদম্য ও আপোষহীন ইসলামী বিপ্লব উপহার দিয়েছেন এই আধুনিক বিশ্বে। আর তাঁরই আদর্শকে ধরে রেখে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন ইরানের ইসলামী বিপ্লবের দ্বিতীয় প্রধান কাণ্ডারি আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি।
সূত্র: parstoday

captcha