IQNA

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর ১০ উপদেশ

20:05 - March 23, 2021
সংবাদ: 2612505
তেহরান (ইকনা): রাসুল (সা.) ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি বিভিন্ন সময় স্বীয় সাহাবাদের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। তেমন একজন সাহাবি মুআজ (রা.)। একবার রাসুল (সা.) তাঁকে ১০টি উপদেশ দিয়েছিলেন।
. ‘আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় অথবা আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।’ শিরক অন্তত জঘন্য অপরাধ। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের অসংখ্য জায়গায় বান্দাকে শিরকের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকার আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, "এবং আল্লাহরই উপাসনা কর, আর কাউকে তাঁর অংশী কর না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতিম, দরিদ্র, আত্মীয় প্রতিবেশী ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সহচর, অসহায় পথিক এবং ক্রীতদাসদের সাথে সদাচার কর; নিশ্চয় আল্লাহ (অহংকারী ও) দাম্ভিককে ভালবাসেন না। (সূরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)
 
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক (অংশী) করাকে ক্ষমা করেন না, তবে তা থেকে ক্ষুদ্রকে (গুনাহকে) যার জন্য ইচ্ছা (ও উপযুক্ত মনে করেন) ক্ষমা করেন। এবং যে কেউ আল্লাহর অংশী সাব্যস্ত করেছে নিঃসন্দেহে সে গুরুতর গুনাহে লিপ্ত হয়েছে। (সূরা : নিসা, আয়াত : ৪৮) তাই আমাদের উচিত শিরক থেকে মুক্ত থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। এমন কাজ বর্জন করা, যাতে শিরকের আশঙ্কা থাকে।
 
২. ‘পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না, যদি মাতা-পিতা তোমাকে তোমার পরিবার-পরিজন বা ধনসম্পদ ছেড়ে দেওয়ার হুকুমও দেয়।’ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, "তোমার প্রতিপালক নিশ্চিত বিধান প্রদান করেছেন যে, তাঁকে ব্যতীত অন্য কারও উপাসনা করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচার করবে; যদি তাঁদের মধ্যে একজন বা উভয়েই তোমার সম্মুখে বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাঁদেরকে ‘উফ্্’ (ন্যূনতম অসম্মানজনক কথা) পর্যন্ত বলবে না, আর তাদের ধমক দিয়ে (ও ভর্ৎসনা করে) তাড়িয়ে দিও না এবং তাদের সাথে সম্মানসূচক (মমতাপূর্ণ) কথা বলবে।" (সূরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)
 
আলোচ্য আয়াতে এক আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরেই মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর কারণ হলো, মহান আল্লাহ মানুষের প্রকৃত স্রষ্টা ও প্রতিপালক। কিন্তু মানুষ পৃথিবীতে আসার বাহ্যিক উপায় ও মাধ্যম হলেন মাতা-পিতা। তাই আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশনার পরেই মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ধরনের মানুষের দিকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন দৃষ্টিপাত করবেন না। মাতা-পিতার অবাধ্য, পুরুষের সদৃশ অবলম্বনকারী নারী এবং দাইয়ুস। আর তিন প্রকার লোক জান্নাতে যাবে না। মাতা-পিতার অবাধ্য, মদ পানে আসক্ত এবং অনুদানের পর খোঁটাদাতা।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নম্বর : ৬১১)
 
৩. ‘ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো কোনো ফরজ নামাজ ছেড়ে দিয়ো না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ফরজ নামাজ পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাআলা তার থেকে দায়িত্ব উঠিয়ে নেন।’
 
অর্থাৎ নামাজ বর্জনকারী আল্লাহর নিয়ামত, বরকত ও রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। আল্লাহর ফেরেশতারা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তার দোয়া কবুল হয় না, তার চেহারার নূর উঠে যায়, তার জীবিকা সংকীর্ণ করা হয়। ফলে সে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কষ্ট পায়। রাসুল (সা.) ফরজ নামাজ বর্জনকারীর ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করেছেন, জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ ছেড়ে দেওয়া। (মুসলিম, হাদিস : ১৪৮) তাই কোনো মুসলিম ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করতে পারে না।
 
৪. ‘মদ পান থেকে বিরত থাকবে। কেননা তা সব অশ্লীলতার মূল।’ মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয়, তার গোটা পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। সমাজে তাদের মাথা নিচু করে দেয়। মানুষকে অশ্লীলতার দিকে ঠেলে দেয়। এ ধরনের অভ্যাস জীবনের সফলতার অন্তরায়। যারা এগুলো ত্যাগ করতে পারে না তারা সফল হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসিগণ! একমাত্র মদ, জুয়া, মূর্তিসমূহ এবং ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহই অপবিত্র (এবং) শয়তানী কার্যকলাপের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সূরা : মায়েদা, আয়াত : ৯০)
 
. ‘সাবধান! আল্লাহর নাফরমানি ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো, কেননা নাফরমানি দ্বারা আল্লাহর ক্রোধ অবধারিত হয়ে যায়।’ মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য (উভয়) গুনাহসমূহ বর্জন কর, যারা গুনাহ অর্জন করে অনতিবিলম্বে তারা যা অর্জন করে তার জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।' (সূরা : আনআম, আয়াত : ১২০)
 
. ‘জিহাদ থেকে কখনো পালিয়ে যাবে না, যদিও সব লোক মারা যায়।’ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের নিকট হতে তাদের জীবন ও তাদের ধন-সম্পদ ক্রয় করেছেন এর বিনিময়ে যে, বেহেশত তাদের জন্য হবে; (এটা এ কারণে যে,) তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, অতঃপর তারা শত্রুদের হত্যা করে এবং নিজেরাও নিহত হয়। এটা একটা প্রতিশ্রুতি যা তিনি নিজের জন্য অবধারিত করেছেন এবং যা তাওরাত, ইনজীল ও কুরআনে বর্ণিত হয়েছে; এবং নিজ প্রতিশ্রুতি পালনে আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠ হতে পারে? সুতরাং তোমরা যে ব্যবসা আল্লাহর সাথে করেছ তাতে তোমরা খুশী হও, এটাই তো মহাসাফল্য। (সূরা : তাওবা, আয়াত : ১১১)
 
৭. ‘যখন মানুষের মধ্যে মহামারি ছড়িয়ে পড়ে আর তুমি সেখানেই রয়েছ, তখন সেখানে তুমি অবস্থান করবে (পলায়নপর হবে না)।’ মহামারি প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) আলোচনা করলেন এবং বললেন, যে গজব বা শাস্তি বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার বাকি অংশই হচ্ছে মহামারি। অতএব, কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৫)
 
৮. ‘শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করবে (কার্পণ্য করে তাদের কষ্ট দেবে না)।’ কৃপণতা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। কোনো মুমিন কৃপণ হতে পারে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তির চরিত্রে কৃপণতা, ভীরুতা ও হীন মানসিকতা রয়েছে সে খুবই নিকৃষ্ট। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫১১)
 
৯. ‘পরিবারের লোকেদের আদব-কায়দা শিক্ষার জন্য কখনো শাসন হতে বিরত থাকবে না।’ রাসুল (সা.) বলেছেন, সাবধান! তোমরা সবাইকে রাখাল (দায়িত্বশীল) এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার রাখালি (দায়িত্ব পালন) প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৭০৫) তাই পরিবারের লোকদের সর্বাবস্থায় আল্লাহর হুকুম পালনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে শাসন করতে হবে। সব পাপ কাজ বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
 
১০. ‘আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করতে থাকবে।’ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করো। (সূরা : শুআরা, আয়াত : ২১৪) 
 
এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর মহানবী (সা.) তাঁর নিকটাত্মীয়দের আমন্ত্রণ করলেন এবং আপ্যায়নের পর তাদেরকে আল্লাহর পথে দাওয়াত করলেন এবং শিরক থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
captcha