IQNA

করোনা পরিস্থিতি অবনতি হলে দেশেও অক্সিজেন সংকটের শঙ্কা

3:58 - April 27, 2021
সংবাদ: 2612684
তেহরান (ইকনা): বাংলাদেশে যেকোনো মুহূর্তে অক্সিজেন সংকট সৃষ্টি হতে পারে। ভারতে অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়ায় বাংলাদেশে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত থেকেই বেশিরভাগ অক্সিজেন আমদানি করে থাকে।

দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি অবনতি হলে দেশে যেকোনো সময় অক্সিজেনের সংকট দেখা দিতে পারে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা সংক্রমণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এ কারণে শিল্প অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

দেশে অক্সিজেন সরবরাহে টান টান অবস্থা

করোনার সংক্রমণের আগে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অক্সিজেনের চাহিদা ছিল দিনে ১০০ থেকে ১২০ টন। আর চলতি মাসের শুরুতে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার সময় দিনে সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ২২০ টন পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা হতো। এর মধ্যে ১০০ টন ভারত থেকে আমদানি করা হতো। বাকিটা দেশেই উৎপাদিত হয়েছে। ২২ এপ্রিল থেকে ভারত অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করায় দেশে অক্সিজেনের সরবরাহ কমেছে। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, করোনা রোগী কমে আসায় অক্সিজেনের চাহিদাও কমে গেছে। এখন এটি কমে ১৪০ থেকে ১৫০ টনে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়নি। কিন্তু রোগী বাড়লে বড় বিপদের শঙ্কা আছে।

পরিস্থিতি অবনতি হলে অক্সিজেন সংকটের শঙ্কা

বাংলাদেশে যেকোনো মুহূর্তে অক্সিজেন সংকট সৃষ্টি হতে পারে। ভারতে অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়ায় বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত থেকেই বেশিরভাগ অক্সিজেন আমদানি করে থাকে। গত চারদিনে কোনো অক্সিজেনবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড ভারত থেকে তরল অক্সিজেন আমদানি করে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড পরিস্থিতির আগে দেশে দৈনিক ১০০ টন মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেনের চাহিদা ছিল। কোভিড রোগীদের সংখ্যা বাড়ায় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ’র চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে গেছে।



লিন্ডে বাংলাদেশে সব সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের বড় অংশ সরবরাহ করে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত প্ল্যান্ট থেকে ৬০ টন এবং চট্টগ্রামে অবস্থিত প্ল্যান্ট থেকে ২০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করে। লিন্ডে বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হলেও নিজস্ব উৎপাদন বাড়িয়ে তারা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবেন।


ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ

ভারতে অক্সিজেন সংকট তৈরি হওয়ায় দেশটি অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে হঠাৎ করেই ভারত থেকে বাংলাদেশে করোনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত জরুরি তরল অক্সিজেন আসছে না। গত চার দিনে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে কোনো অক্সিজেনবাহী গাড়ি আসেনি। গত বুধবারের (২১ এপ্রিল) আগে এক সপ্তাহে ৪৯৮ মেট্রিক টন ৮৪০ কেজি তরল অক্সিজেন ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে এসেছিল। এসময় ২৯টি ট্যাংকারে এই তরল অক্সিজেন দেশে আসে।

জানা যায়, দেশের চিকিৎসা খাতে ব্যবহৃত অক্সিজেনের চাহিদার বড় একটি অংশ আমদানি হয় ভারত থেকে। প্রতি মাসে শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়েই প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন অক্সিজেন আমদানি হয়ে থাকে। করোনাকালে বেড়েছে অক্সিজেনের চাহিদা। কিন্তু এরমধ্যেই বাংলাদেশে হঠাৎ করেই ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।



দেশীয় আমদানিকারকরা জানান, ভারতীয় রফতানিকারকরা বলছেন, ভারতীয় অক্সিজেন রফতানি না করতে তাদের ওপর চাপ রয়েছে। তাই ভারতে ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা ভেবে বাংলাদেশে অক্সিজেন রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে।

হঠাৎ করে আমদানি বন্ধ হয়ে পড়ায় যেমন ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তেমনি দেশে চিকিৎসা খাতও বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়ল বলে জানান তারা।

ভারতে ভয়াবহ অক্সিজেন সংকট

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ভারতে অক্সিজেনের অভাব প্রকট রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালগুলোয় পাওয়া যাচ্ছে না অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ। সাত মাস আগে ঠিক একই ধরনের সংকটে পড়েছিল ভারত। কিন্তু বারবার একই সমস্যায় কেন পড়ছে দেশটি?

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সাধারণত ভারতে স্বাস্থ্য খাতে অক্সিজেনের মোট সরবরাহের ১৫ শতাংশ ব্যয় হয়। বাকিটা শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশটির মোট অক্সিজেন সরবরাহের ৯০ শতাংশই স্বাস্থ্য খাতে দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন এ খাতে সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিক টন অক্সিজেন খরচ হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাজেশ ভূষণ। গত বছরের সেপ্টেম্বরের চাহিদার তুলনায় এটি তিন গুণ বেশি।

ভারতে অক্সিজেনের সংকট কেন

ভারতে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি থাকলেও অক্সিজেনের অপেক্ষায় রুদ্ধশ্বাস হয়ে থাকছে হাসপতালগুলো, সময়মতো সরবরাহ না পাওয়ায় মারা যাচ্ছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেক রোগী। রয়টার্সের অনুসন্ধান বলছে, অক্সিজেন পরিবহনের সময়সাপেক্ষ ব্যবস্থা, আমলাতন্ত্রের ঢিলেমি আর আগাম পরিকল্পনার অভাবে ঘটছে এমনটা।

বার্তা সংস্থাটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান সমস্যা হচ্ছে হাসপাতালের বেডে সময়মতো অক্সিজেন পৌঁছাচ্ছে না। অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্রগুলো অনেক দূরে থাকায় এবং বিতরণ ব্যবস্থা সমন্বিত না হওয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে।



আবার দিল্লিতে অক্সিজেনের সরবরাহ আসে দূর-দূরান্তের সাতটি রাজ্য থেকে। আদালতের একটি নথি অনুযায়ী এসব অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্রের অনেকগুলোর দূরত্ব দিল্লি থেকে এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি।


সংক্রমণ ও মৃত্যুতে ভারতে প্রতিদিনই রেকর্ড

ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুতে প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড হচ্ছে। ২৫ এপ্রিল রোববারও দেশটিতে সংক্রমণ-মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড হয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটার শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, রোববার ভারতে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৩১ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিন দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ২ হাজার ৮০৬ জন।

ভারতে পাঁচ দিন ধরে তিন লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তার আগে ১৫ এপ্রিল থেকে দেশটিতে প্রতিদিন দুই লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। আর ছয় দিন ধরে ভারতে দুই হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছেন।

ভারতীয় ধরন কী এবং এটি কতটা শক্তিশালী

যে কোনো ভাইরাসই ক্রমাগত নিজের ভেতরে নিজেই মিউটেশন ঘটাতে করতে থাকে অর্থাৎ নিজেকে বদলাতে থাকে, এবং তার ফলে একই ভাইরাসের নানা ধরন তৈরি হয়।

কত দ্রুত এবং কত দূর নতুন ধরনের এই ভাইরাসটি ভারতে ছড়িয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ধারণা পেতে যে মাত্রায় নমুনা পরীক্ষা করতে হয় তা এখনও ভারতে সম্ভব নয়। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩৬১টি নমুনা পরীক্ষায় ২২০টির মধ্যে নতুন ধরনের এই ভাইরাসটি শনাক্ত হয়।

সংক্রামক রোগের তথ্য সংগ্রহ এবং আদান-প্রদানে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থা জিআইসএইড-এর ডাটাবেজ অনুসারে, এরই মধ্যে কমপক্ষে ২১টি দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সনাক্ত হয়েছে। যাতায়াতের কারণে ব্রিটেনেও করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনটি পাওয়া গেছে। ২২শে ফেব্রুয়ারি থেকে ১০৩ জন কোভিড রোগীর দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে, ভারত থেকে ব্রিটেনে ভ্রমণ প্রায় নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।

বিজ্ঞানীরা এখনও জানতে পারেননি যে ভারতে প্রথম শনাক্ত এই করোনাভাইরাসটি অন্যগুলোর তুলনায় দ্রুত সংক্রমণ ঘটায় কিনা, বা এটির বিরুদ্ধে টিকা কার্যকর কিনা।

captcha