IQNA

কুফা শহরের সাহলা মসজিদের গুরুত্ব এবং কিছু মনোরম দৃশ্য

20:05 - June 08, 2021
সংবাদ: 2612928
তেহরান (ইকনা): ইরাকের কুফা নগরীতে বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ‘সাহলা মসজিদ’ অবস্থিত। এই মসজিদটি হিজরি প্রথম শতাব্দীতে কুফায় পুনর্নির্মাণ করা হয়। কুফা মসজিদ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এটি অবস্থিত।

ইরাকের পবিত্র নগরী নাজাফে আশরাফের ১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে প্রাচীন শহর কুফায় এই ঐতিহাসিক মসজিদটি অবস্থিত।

এই মসজিদটি শিয়া মাজহাবের দ্বাদশ ইমাম হযরত মাহদী (আ. ফা.)এর অন্তর্গত। প্রাচীন ও ঐতিহাসিক এই মসজিদে হযরত ইব্রাহীম (আ.), হযরত ইদ্রিস (আ.) এবং হযরত খিজির (আ.)সহ অন্যান্য নবীগণ ও ইমামগণের (আ.) বিশেষ স্থান আছে।

 


সাহলা মসজিদের গুরুত্ব:

ইরাকের কুফা নগরীতে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত মসজিদ তথা ‘সাহলা মসজিদ’টি হিজরি প্রথম শতাব্দীতে কুফায় পুনর্নির্মাণ করা হয়। কুফা মসজিদ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এটি অবস্থিত। সাহলা অর্থ এমন এলাকা যার ভূমি লাল রঙের বালু দিয়ে ঢাকা। এরকম একটি এলাকায় এ মসজিদটি অবস্থিত বলে এ মসজিদের নাম দেয়া হয়েছে সাহলা মসজিদ। এটিকে ‘কুরা’ মসজিদ নামেও অভিহিত করা হয়েছে। আমীরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ.)’র একটি বর্ণনা অনুযায়ী এ নামকরণ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন: কুফা শহরে চারটি পবিত্র স্থান আছে যেগুলোর প্রত্যেকটিতে মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে সাহলা মসিজদ ছিল আল্লাহর নবী হযরত খিযির (আ.)’র বসবাসস্থল। এই মসজিদে প্রবেশকারী প্রতিটি ব্যক্তির মনের দুঃখকে আল্লাহ তায়ালা ভুলিয়ে দেন। আমরা আহলে বাইত এই মসজিদকে ‘কুরা মসজিদ’ নামে অভিহিত করে থাকি।”

নবী-রাসূল ও আহলে বাইত আলাইহিমুস সালামের নামে এই মসজিদের বিভিন্ন মেহরাবের নামকরণ করা হয়েছে। এই স্থানগুলোকে মাকাম নামেও অভিহিত করা হয়। মসজিদের পশ্চিম ও উত্তর দেয়ালের মাঝখানে অবস্থিত একটি মেহরাবের নাম হযরত ইব্রাহিম (আ.) মাকাম। বর্ণনায় এসেছে, সাহলা মসজিদ এক সময় ছিল হযরত ইব্রাহিম (আ.)’র বাসস্থান। এখান থেকেই তিনি ‘আমালাকা’ জাতির কাছে ঐশী ধর্মের দাওয়াত দিয়ে গিয়েছিলেন। আমালাকা ছিল সুঠামদেহ ও অতি উচ্চতাবিশিষ্ট জনগোষ্ঠীর জাতি। হযরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ স্ত্রী হাজেরাকে নিয়ে মক্কায় আসার আগ পর্যন্ত আমালাকা জাতির সঙ্গ বসবাস করেছেন।

মসজিদে সাহলার আরেকটি মাকামের নাম মাকামে হযরত ইদ্রিস (আ.)। এই মাকামটিকে বাইতুল খিযির নামেও অভিহিত করা হয়। এই মাকাম সম্পর্কে ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন, কেউ কুফায় আসলেই যেন সাহলা মসজিদে গিয়ে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করে। এই মসজিদে হযরত ইদ্রিস (আ.) বসবাস করতেন বলে এখানে বসে আল্লাহ তায়ালার কাছে ইহকালীন ও পারলৌকিক যেকোনো কিছু চাইলে তিনি সে চাওয়া পূর্ণ করেন। হযরত ইদ্রিস (আ.) এখানে বসে কাপড় সেলাই করতেন ও নামাজ পড়তেন। কেউ এই মসজিদে এসে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করলে আল্লাহ তাকে হযরত ইদ্রিসের সমমর্যাদা দান করবেন এবং দুনিয়ার সব বিপদআপদ ও শত্রুর ষড়যন্ত্র থেকে তাকে রক্ষা করবেন।”

সাহলা মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে মাকামে হযরত সালেহ (আ.)। এ ছাড়া, মসজিদের মাঝখানে মাকামে ইমাম সাদেক (আ.) অবস্থিত। বর্ণনায় এসেছে, ইমাম সাদেক (আ.) এখানে কিছুদিন অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন। সাহলা মসজিদের আরেকটি মাকামের নাম মাকামে ইমাম মাহদী (আ.)। মাকামে ইমাম সাজ্জাদ ও মাকামে হযরত ইউনুসের মধ্যবর্তী স্থানে এটির অবস্থান। বর্তমানে এখানে একটি ছোট ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

মর্যাদার দিক দিয়ে মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী, মসজিদুল আকসা ও কুফা মসজিদের পরই সাহলা মসজিদের অবস্থান। ইমাম সাদেক (আ.) এ সম্পর্কে তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী আবু বাসিরকে বলেছেন, “হে আবু বাসির! দৈব দৃষ্টিতে আমি দেখতে পাচ্ছি, রাসূলের সন্তান ইমাম মাহদী (আ.)’র আবির্ভাবের পর তিনি সপরিবারে এই মসজিদে আসবেন।” এ সময় আবু বাসির জিজ্ঞাসা করেন, “এই মসজিদ কি ইমামের বাসস্থান হবে?” ইমাম সাদেক জবাব দিলেন, “হ্যাঁ। এই মসজিদে এর আগে বসবাস করেছেন হযরত ইদ্রিস ও হযরত ইব্রাহিম আলাইমুস সালাম। এ ছাড়া, মহান আল্লাহ পৃথিবীতে যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের সবাই এই মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। ফেরেশতারা এই মসজিদে এসে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হন। আমার বাড়ি এই মসজিদের কাছে হলে আমি জীবনের সব নামাজ এখানে আদায় করতাম।”

ইমাম হুসাইন (আ.)এর পবিত্র মাযারের ওয়েবসাইটে এই মসজিদের কিছু ছবি প্রকাশিত হয়েছে। দর্শনার্থীদের দেখার জন্য ছবিগুলো নীচে তুলে ধলা হল:
iqna

 


 
captcha