ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা'র বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, এই বিচ্ছিন্নতার পেছনে রয়েছে ফিলিস্তিনি ভূমিতে অবৈধ ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গাজায় গণহত্যা, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে দেশগুলো ও জনগণের প্রতিরোধ বৃদ্ধি এবং ইরানের মতো অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতো নীতির ফল। বিশ্বের জনমত এবং অনেক সরকার, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এমনকি ইউরোপের কিছু অংশে, ইসরায়েলের নীতির তীব্র সমালোচনা চলছে।
এই প্রতিবেদনে আমরা ইসরায়েলের বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতার সাম্প্রতিক উদাহরণগুলো তুলে ধরেছি:
ইরনার রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসরায়েলের সাবেক যুদ্ধমন্ত্রী 'অ্যাভিগডোর লিবারম্যান' ইসরায়েল ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, “গাজার যুদ্ধ আমাদের বিশ্বে একঘরে করে দিয়েছে, আমরা এখন প্রত্যাখ্যাতদের একটি দল।"
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইতালির ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও ইসরায়েলের বিচ্ছিন্নতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতালির ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৫০০-এর বেশি শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীর চাপের পর তারা ইসরায়েলের বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা বন্ধ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "ফিলিস্তিনি অঞ্চলে যা ঘটছে তার প্রতিবাদে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে চুক্তি স্থগিত বা বাতিল করেছে।"
ইসরায়েলের সাথে 'ওয়াদি আরাবা' চুক্তি বাতিলের দাবি
জর্ডানের রাজধানী আম্মানে, গাজাবাসীদের সমর্থনে বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের সাথে 'ওয়াদি আরাবা' শান্তিচুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা গাজাবাসীদের উপর ইসরায়েলের অবরোধ ও যুদ্ধের নীতির তীব্র নিন্দা জানিয়ে জর্ডান সরকারকে অবিলম্বে সাহায্য পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। তারা আরব নেতাদের নিষ্ক্রিয়তাকে নিন্দা করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সমর্থনে স্লোগান দিয়েছে।
দ্য হেগ গ্রুপের ইসরায়েল বয়কট
বৈশ্বিক জোট 'দ্য হেগ গ্রুপ' সম্প্রতি কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটায় ৩০টি দেশের এক সম্মেলনের আয়োজন করে। দুই দিনের সম্মেলনের শেষে ১২টি দেশ ইসরায়েলের গাজা নীতিকে সীমিত করার জন্য একমত হয়েছে। এই চুক্তিতে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ, অস্ত্রবাহী জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি দখলকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সাথে চুক্তি পুনর্বিবেচনার বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ইসরায়েলের দুই মন্ত্রীর স্লোভেনিয়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম দেশ হিসেবে স্লোভেনিয়া ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী "বেজালেল স্মোত্রিচ" ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী "ইতামার বেন গাভির"-কে ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। স্লোভেনিয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, এই দুই মন্ত্রী—যারা নেতানিয়াহু জোটের মূল অংশ—তাদের "অবাঞ্ছিত ব্যক্তি" ঘোষণা করা হয়েছে।
আইরিশ পার্লামেন্টে ইসরায়েলি পণ্য নিষিদ্ধের প্রস্তাব
আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্ট একটি আইন প্রস্তাব বিবেচনা করছে যার মাধ্যমে দখলকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গোলান হাইটসে উৎপাদিত পণ্য আমদানি বা ক্রয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। এই আইন পাস হলে আয়ারল্যান্ড হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম দেশ যারা দখলকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এতটা কঠোর অবস্থান নেবে।
এই ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরায়েল কেবল রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে নয়, সামাজিক, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিকভাবেও এক গভীর আন্তর্জাতিক নিঃসঙ্গতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। পার্সটুডে