IQNA

শহীদ কাসেম সোলাইমানি কে ছিলেন?

23:31 - December 30, 2021
সংবাদ: 3471208
তেহরান (ইকনা): ইসলাম মানবতার ধর্ম। এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। বিপদগ্রস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো আরেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতেন এবং তাদের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।
আজ এমন এক ব্যক্তির কথা বলবো, যিনি অসহায় ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। অসহায় ও মজলুম মুসলমানদেরকে সহযোগিতা করতে নিজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে ছুটে গেছেন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। তিনি হলেন, ইরানের কুদস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলাইমানি।
 
জেনালের কাসেম সোলাইমানির সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরমান শহরে একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  আমরা জানি, মা-বাবা যেমন আদর্শ লালন করেন তাদের সন্তানেরাও তাই ধারণ করে। মহৎ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে জেনারেল কাসেম সোলাইমানির পারিবারিক শিক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাবার ঋণ পরিশোধ করতে মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি কাজের সন্ধানে বেরিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর আইআরজিসিতে যোগদান করেন তিনি। ১৯৮০ সালে পশ্চিমারা   চক্রান্ত করে ইরানের  ওপর  যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। সেই যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। 
 নিজ দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন তিনি।
 
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শহীদ কাসেম সোলাইমানির সংগ্রামঃ
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার কারণে জেনারেল কাসেম সোলাইমানি শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, পুরো বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ইরানের পূর্ব সীমান্তে মাদক চোরাচালান ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইরানের পূর্ব সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছিলেন তিনি। ১৯৯৭ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তাঁকে আইআরজিসির কুদস বাহিনীর কামান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেন। মধ্যপ্রাচ্যে উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ ( আইএস) ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে এবং ভয়াবহ সব অপরাধযজ্ঞ সংঘটিত করে। 
মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমানদের সম্পদ লুটপাট করতে পশ্চিমারা কখনো সন্ত্রাসীদেরকে ব্যবহার করে আবার কখনো মুসলিমদের মাঝে বিভাজন বা অনৈক্য সৃষ্টি করে। সমস্যা সমাধানের নামে এই অঞ্চলে তাদের সেনাবাহিনী যুগের পর যুগ অবস্থান করে এবং সম্পদ পাচার করতে থাকে। তাদের উপস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্তিতি দেখলে আমরা উপলব্ধি করতে পারি।
জেনারেল কাসেম সোলাইমানি উগ্র সন্ত্রাসীদের হাত থেকে অসহায় ও নির্যাতিত মানুষদেরকে রক্ষা করতে ইরানের বাইরে সংগ্রাম শুরু করেন। ঘোষণা দিয়ে মাত্র তিন মাসের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসীদেরকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যান।
 
ফিলিস্তিন ও বাইতুল মুকাদ্দাস রক্ষায় জেনারেল কাসেম সোলাইমানির ভূমিকাঃ
নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জেনালের কাসেম সোলাইমানি পাশ্চিমাদের এই ষড়যন্ত্রকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। ফিলিস্তিনের অসহায় মুসলমানদের পরিস্থিতি নতুন করে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। যুগ যুগ ধরে তাদের ওপর যে নির্যাতন চলে আসছে তা দেখেও না দেখার ভান করে আসছে মুসলিম বিশ্বের অনেক নেতা। এমনকি পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে অনেক মুসলিম রাষ্ট্র প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলছে। নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন শহীদ কাসেম সোলাইমানি। ফিলিস্তিনিদেরকে সহযোগিতা ও মুসলমানদের প্রথম কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাস রক্ষা করতে তৈরি করেছে বিভিন্ন সংগঠন।  আল্লাহর ঘর বাইতুল মোকাদ্দাস রক্ষা করতে জেনারেল কাসেম সোলাইমানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে তাঁকে শাহীদুল কুদস আখ্যা দিয়েছিলো ফিলিস্তিনিরা।
যে মানুষটা সারা জীবন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। অসহায় ও নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে থেকেছেন। সেই মানুষটাকে সন্ত্রাসী বলে অপপ্রাচার চালিয়েছে আমেরিকা। 
২০২০ সালে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে আমেরিকার সন্ত্রাসী বাহিনীর ড্রোন হামলায় শাহাদত বরণ করেন, ইরানের কুদস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ও ইরাকের হাশদ আশ-শাবি বা পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আবু মাহদি আল-মুহানদিস।
হে আল্লাহ ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে তুমি মুসলমানদের বিজয় দান করো। মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে দাও। ফিলিস্তিন ও বাইতুল মুকাদ্দাসকে ইহুদিদের হাত থেকে রক্ষা করো। ( আমিন)
মোঃ রুস্তম আলী 
কোম, ইরান
 
captcha