IQNA

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সনাক্তে ব্যর্থ হয়েছিল ফেসবুক, দিয়েছিল পেইড বিজ্ঞাপন

22:15 - March 23, 2022
সংবাদ: 3471601
তেহরান (ইকনা): বিশ্বে চলছে সোশ্যাল মিডিয়ার রাজত্ব। যুগের চাহিদায় দিন দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। ফেসবুক ছাড়া এখন ভাবাই অসম্ভব। কী নেই এখানে? চাইলেই সবকিছু মেলে নেট দুনিয়ায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে ফেসবুক। 
ভুয়া তথ্য প্রচার, অশালীন মন্তব্য ও ঘৃণা ছড়ানোর অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এ মাধ্যম। এ ছাড়া ফেসবুকের বিরুদ্ধে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদে সমর্থন ও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন বিশ্বের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। মানুষকে বিপথগামী করতে রীতিমতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি। মিয়ানমারে গণহত্যায় উসকানিতে ফেসবুক ব্যবহার করা হলেও তা নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়।
 
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালানোর সময় তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয় ফেসবুকে। অ্যাসোসিয়েট প্রেসের এক রিপোর্টে বলা হয়, এ ধরনের বিদ্বেষমূলক ভিডিও বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচারের অনুমতি সে সময় দিয়েছিল ফেসবুক। মোট আটটি বিজ্ঞাপন অর্থের বিনিময়ে প্রচারের অনুমোদন দেয় ফেসবুক। প্রতিটিতে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হয়।
 
 
এপি’র সাথে বিশেষভাবে শেয়ার করা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, অধিকার গোষ্ঠী গ্লোবাল উইটনেস ফেসবুকে অনুমোদনের জন্য ৮টি পেইড বিজ্ঞাপন জমা দিয়েছে যার প্রতিটিতেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্যের বিভিন্ন সংস্করণ রয়েছে। ফেসবুক ৮টি বিজ্ঞাপনই প্রকাশের অনুমোদন দিয়েছে।
 
সংস্থাটি বিজ্ঞাপনগুলো পোস্ট করার আগে বা অর্থ প্রদান করার আগে সরিয়ে নিয়েছিল কিন্তু আরও ভালো করার প্রতিশ্রুতি দিলেও ফেসবুকের শিথিল নিয়ন্ত্রণের কারণে তারা এখনো ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং ফেসবুক প্লাটফর্মে সহিংসতার আহ্বান সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়।
 
অভিযোগ উঠেছে, বিজ্ঞাপনে কী যাচ্ছে তা নজরে রাখতে একেবারে ব্যর্থ হয়েছে ফেসবুক।
 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুক আরও ভালো করার প্রতিশ্রুতি এবং গণহত্যায় এ ধরণের বিজ্ঞাপনের ভূমিকাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার আশ্বাস দিলেও এগুলো ক্রমাগত প্রদর্শিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যার আহ্বান জানিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে ভরা এই বিজ্ঞাপনগুলো যেন ফেসবুকের সাইটে না থাকে- এমন সহজতম পদক্ষেপ নিতে ফেসবুক এখনো ব্যর্থ ।
 
ফেসবুকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি হলো, ২০১০ সাল থেকে ফেসবুক সক্রিয় ও কার্যকরভাবে তাদের নেটওয়ার্কের সেই সব বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে, যা মিয়ানমারে গণহত্যার উসকানিতে অবদান রাখছিল। যদিও এসব বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল ফেসবুক। দ্বিতীয়টি হলো, ফেসবুকের অ্যালগরিদম এসব উসকানিমূলক বিষয়বস্তু ছড়ানোর ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করেছিল।
 
তবে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এমন কোনো মামলায় বিচারের নজির এখন পর্যন্ত নেই।
 
ফেসবুক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী মাসে তাদের দুইশ সত্তর কোটি নিয়মিত ব্যবহারকারী রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ এই প্রতিষ্ঠানে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইন্সটাগ্রামের মতো পণ্যও ব্যবহার করে। কিন্তু ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে ব্যর্থতা থেকে শুরু করে ভুয়া তথ্য ছড়ানো বন্ধে যথেষ্ট ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
 
সূত্র মতে, মুসলমানদের ‘শুকর’ এবং ‘কুকুর’-এর সাথে তুলনা করে অসংখ্য অমানবিক পোস্ট করা হয়েছে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে। হয়েছে কোরআন অবমাননা করা পোস্টও। কিন্তু এসব মুসলিম-বিদ্বেষী কনটেন্ট ফেসবুক মডারেট করেনি বলে অভিযোগ হাউগেনের। তার দাবি, ভারতে বাংলা ভাষার কনটেন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য বাঙালি মডারেটরের ঘাটতি ছিল।
 
হাউগেন আরও দাবি করেছেন, বিদ্বেষ ছড়ানো কনটেন্টের মাত্র ০.২ শতাংশ পোস্ট সরানো হয় ফেসবুকের অটোমেটেড সিস্টেমের দ্বারা। মুসলিমবিরোধী পোস্টকে প্রায় কখনও ‘ফ্ল্যাগ’ করা হয়নি ফেসবুকে। ফেসবুকের সিভিক ইন্টেগ্রিটি গ্রুপের প্রোডাক্ট ম্যানেজার ছিলেন ফ্রান্সেস হাউগেন। গত মে মাসে সংস্থাটির চাকরি ছাড়েন তিনি। iqna
captcha