IQNA

কুরআন কি বলে/১৯

গাদির; হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর রিসালত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বাণী

20:14 - July 19, 2022
সংবাদ: 3472149
তেহরান (ইকনা): নবী করিম (সা.) যখন তাঁর জীবনের শেষ হজ থেকে ফিরে আসেন, তখন তিনি মহান আল্লাহর কাছ থেকে এমন আয়াত পেয়েছিলেন, যা সমস্ত ঐশ্বরিক বার্তার সমাপ্তিকে একটি নির্দিষ্ট বার্তার সাথে সংযুক্ত করে। এই বার্তাটির কেন্দ্র ছিল উইলায়াতে আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)। ঐতিহাসিক বার্তাটি গাদিরে খুম নামক একটি এলাকায় সকল হাজিদের জানানো হয়েছে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ৬০ বছর বয়সে শেষ হজ করেন। এই যাত্রায় অনেক লোক (প্রায় ১২০,০০০ মুসলমান) নবীর (সা.) সাথে ছিলেন। এসকল মুসলমানেরা হজ পালন করে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছিলেন।
 
হজের পর যা 'হাজ্জাতুল বিদা'  (বিদায় হজ) নামে পরিচিত, নবী মদীনার দিকে রওয়ানা হন এবং বৃহস্পতিবার ১৮ই জ্বিলহজ গাদিরে খুম নামক একটি এলাকায় পৌঁছান। এই এলাকায় পৌঁছানোর সাথে সাথেই আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর অন্তরে আয়াত নাযিল হয়, যার বিষয়বস্তু নিম্নরূপ:
 
 يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
 
হে রাসূল! যা (যে আদেশ) তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দাও, আর যদি তুমি তা না কর, তবে তুমি (যেন) তার কোন বার্তাই পৌঁছাওনি; এবং (তুমি ভয় কর না) আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন; এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না।
সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৬৭।
 
আমরা যদি এর বিষয়বস্তুর দিকে মনোযোগ দেই, তাহলে এই আয়াতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি নির্দেশ করে যে নবীর (সা.) নবুওয়তের ২৩ বছরে ওহী গ্রহণ ও প্রকাশের সমস্ত প্রচেষ্টা একটি বিশেষ বাণীর সাথে সম্পন্ন হবে এবং তিনি যদি এই বার্তা না পৌঁছান তাহলে তাঁর সমস্ত কিছুই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
 
নবীর মিশনের গুরুত্ব সম্পর্কে একটি বার্তা
 
আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য আল্লাহর নবী (সা.) এক লাখ বিশ হাজার মুসলমানের কাফেলাকে নিজ এলাকায় ফিরে যেতে মানা করে তাদের চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ দেন। কথিত আছে যে, নবীজীর উপস্থিতিতে অগ্রগামী ও অনুগামী কাফেলার একত্রিত হতে অর্ধেক দিন লেগেছিল।
 
অনেক মুসলমানের উপস্থিতির কারণে এই বিশেষ বার্তাটি যত্ন সহকারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল এবং মুফাসসিরগণ, মুহাদ্দিসগণ এবং ঐতিহাসিকগণ কোন সন্দেহ ছাড়াই আয়াতটিকে "গাদীর" ঘটনার সাথে সম্পর্কিত করেছেন।
 
আল্লামা আমিনীও এই ঘটনাটিকে হাদীসের ত্রিশটি সূত্র এবং সুন্নীদের ব্যাখ্যা থেকে বর্ণনা করেছেন, যেমন: ইবনে জারীর আল-তাবারীর রচিত আল-বেলায়েত বই, তাফসির আছ-ছালাবি, আবু নায়িম ইসফাহানির রচিত “মা নাজ্জালা মিনাল কুরআনি ফী আলী”, আসবাবুন নুযুলু ওয়াহেদী এবং... বর্ণিত হয়েছে যে এই বিষয়ে ঐতিহাসিকরা একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু বার্তাটি কি ছিল?
 
গাদিরের বাণী এবং আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) এর উত্তরসূরি
 
লোক সমাগমের পর নবী (সা.) জনতার সাথে জোহরের নামায আদায় করেন এবং একটি উঁচু স্থানে গিয়ে উচ্চস্বরে খুতবা পাঠ করেন: “মহান আল্লাহ অনেক মেহরাবন এবং তিনি সকল বিষয়ে অবগত রয়েছেন। তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, আমি শীঘ্রই তোমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেবো… আমি তোমাদের মাঝে দু'টি অতি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি; যার একটি হল আল্লাহর কিতাব; যাতে রয়েছে নূর এবং হেদায়েত। আল্লাহর কিতাবকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর। রাসূল (স.) আল্লাহর কিতাবের উপর আমল করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অত:পর বলেন: আর অপরটি হলো আমার আহলে বাইত। আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদেরকে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি (অর্থাৎ মহান আল্লাহকে ভয় করে তাদেরকে অনুসরণ কর) এই বাক্যটিকে তিনি তিনবার উচ্চারণ করেন। সূত্র: সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.১৮০৩।
 
এর পর সকল জনগণের সম্মুখে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ইমাম আলী বিন আবি তালিবের (আ.) হাত তুলে বললেন:
 
مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَهَذَا عَلِيٌّ مَوْلَاهُ اللَّهُمَّ وَالِ مَنْ وَالاهُ وَ عَادِ مَنْ عَادَاهُ وَ انْصُرْ مَنْ نَصَرَهُ وَ اخْذُلْ مَنْ خَذَلَهُ
 
হে আল্লাহ, আমি যাঁর মাওলা এই আলীও তাঁর মাওলা। হে আল্লাহ যে তাঁকে বন্ধু বানায় তুমিও তাঁকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর, আর যে তাঁর সঙ্গে শত্রুতা করে তুমিও তাঁকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর।
 
এই ঘটনার পর জনতা ছত্রভঙ্গ হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত জিব্রাইল (আ.) সূরা মায়েদাহের তৃতীয় নম্বর আয়াত নিয়ে অবতীর্ণ হন:
 
الْیوْمَ أَکمَلْتُ لَکمْ دینَکمْ وَ أَتْمَمْتُ عَلَیکمْ نِعْمَتی وَ رَضیتُ لَکمُ الْإِسْلامَ دیناً
 
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ধর্ম হিসেবে ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট হলাম। 
সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৩।
 
* আব্দুল হুসাইন আমিনী নাজাফি (১৯০২-১৯৭০), যিনি আল্লামা আমিনী নামে পরিচিত, তিনি একজন মারজায়ে তাকলিদ এবং আরবি ভাষায় ১১ খণ্ডের আল-গাদির বিশ্বকোষের লেখক, যার সারসংক্ষেপ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। আল-গাদির বিশ্বকোষটি লেখার জন্য তিনি ভারত, মিশর এবং সিরিয়ার কয়েক ডজন শহরে ভ্রমণ করেছেন এবং অতি মনোযোগ সহকারে ১০ হাজারটি বই সম্পূর্ণ অধ্যয়ন করেছেন এবং এক লাখ বই রুজু করেছেন।

 

সংশ্লিষ্ট খবর
captcha