IQNA

ভ্রমণ

সুলতান সুলাইমানের সমাধি পাশে

18:01 - September 09, 2022
সংবাদ: 3472429
তেহরান (ইকনা): মিডিয়ার কল্যাণে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান সুলাইমান বাংলাদেশেও বেশ বিখ্যাত। তিনি ছিলেন সুলতান প্রথম সেলিমের পুত্র। সুলতান সুলাইমান ৬ নভেম্বর ১৪৯৪ তুরস্কের ট্রাবজোন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কানুনি সুলতান খ্যাত সুলাইমান ছিলেন উসমানি সালতানাতের দশম এবং উসমানী সালতানাতের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের সুলতান।
প্রায় ৪০ বছর ছিল তাঁর শাসনামল। দীর্ঘ শাসনামলে তিনি অসংখ্য কীর্তি রেখে গেছেন। তাঁর হাতেই রোমান সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত পতন ঘটে।
ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক ও আকর্ষণীয় জায়গা সুলাইমানিয়া মসজিদ। বসফরাসের তীরে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হাঁটা পাহাড়ি রাস্তায় বেশ উঁচুতে এই মসজিদ। সুলতান সুলাইমান কর্তৃক নির্মিত বলেই এটিকে সুলাইমানিয়া মসজিদ বলা হয়। তবে যতদূর জানা যায়, এই মসজিদ নির্মাণের কাজ তিনি শেষ করতে যেতে পারেননি। ইস্তাম্বুলের ইউরোপীয় অংশে সুলাইমানিয়া মসজিদটিকে উসমানীয়া সালতানাতের সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক মনে করা হয়। এই মসজিদের সুউচ্চ চারটি মিনার ও বিশালাকার গম্বুজগুলো সেই গৌরবেরই সাক্ষ্য দেয়।
 
মসজিদের পাশে আছে সুলতান সুলাইমানের কবর। কবরের চারপাশ সবুজে ঘেরা। বিশালকার গম্বুজের নিচে সুলতান সুলাইমানের সমাধি। তাঁর পাশে তাঁর সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরও কবর আছে। আরেক পাশে একই রকম একটি গম্বুজের নিচে সুলতানের স্ত্রী হুররম খানমের সমাধি। সমাধি ক্ষেত্রটি সুলাইমানিয়া মসজিদ কমপ্লেক্সের অংশবিশেষ। সুলতান সুলাইমানকে নিয়ে প্রচারিত টিভি সিরিয়াল বা মুভিগুলোতে যা বলা হচ্ছে এবং যা দেখানো হচ্ছে সুলতানের সমাধি ও তাঁর জীবনাচারের যেসব স্মৃতিচিহ্ন দেখলাম তার সঙ্গে মিল নেই। তুরস্ক সফরে আমার মনে হয়েছে, উসমানি সালতানাতের আল্লাহভীরু সুলতানদের একজন সুলতান সুলাইমান কানুনি।
 
মিডিয়া প্রচারিত মুভিগুলোতে হুররম সুলতানের প্রতিই সবচেয়ে বেশি অবিচার করা হচ্ছে। ইতিহাসের পাতায় তাঁর যে কর্মযজ্ঞ পাওয়া যায়, তাতে করে তাকে একজন নেককার, মানবদরদি ও মহীয়সী নারী বলেই প্রমাণ করে। তিনি ছিলেন উসমানীয় ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নারী। হুররম সুলতানের হাত ধরেই উসমানীয় সাম্রাজ্যে সর্বপ্রথম নারীর ক্ষমতায়ন হয়। সুলতান সুলাইমানের বেশ কজন স্ত্রী থাকলেও হুররমই ছিলেন সুলতানের প্রধান স্ত্রী বা সম্রাজ্ঞী। তিনি তাঁর মেধা ও প্রতিভা বলে রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন এবং সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। হুররম সুলতানের জন্ম ১৫ এপ্রিল ১৫০২ এবং মৃত্যু ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে।
 
হুররম সুলতানের বহু জনকল্যাণমূলক কাজের প্রমাণ আজও পাওয়া যায়। বিশেষত পবিত্র মক্কা থেকে ফিলিস্তিন পর্যন্ত বহু রাষ্ট্রীয় স্থাপনার প্রধান কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন হুররম। যার মধ্যে একটি বিশাল মসজিদ, দুটি মাদরাসা, পানির ফোয়ারা ও ইস্তাম্বুলে নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল। সে সময় হাসপাতালে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হতো। হুররম সুলতান ১৫৫২ সালে জেরুজালেমে দুস্থ ও অসহায়দের খাদ্যাভাব মেটাতে হাসেকি সুলতান ইমারাত নামে একটি রাষ্ট্রীয় লঙ্গরখানা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রজাদের প্রতি তার মাতৃসুলভ স্নেহের গল্প আজও ইস্তাম্বুলের মানুষের মুখে মুখে ফেরে। প্রাণপ্রিয় স্ত্রী হুররমের মৃত্যুর পর সন্তানদের সঙ্গে সুলতান নিজেও হুররমের লাশ বহন করেছিলেন এবং তিনি দীর্ঘদিন দুঃখে কাতর ছিলেন। মৃত্যুর পর পৃথিবী বিখ্যাত মূল্যবান ইজনিক পাথর দ্বারা সুসজ্জিত এক গম্বুজবিশিষ্ট বাগানঘেরা সমাধিতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
 
আমরা সুলাইমানিয়া মসজিদে নামাজ আদায় করে প্রথমে জিয়ারত করলাম সুলতানের কবর। ততক্ষণে সমাধি পরিদর্শনের সময় শেষ। দায়িত্বরত পুলিশ সবাইকে সমাধি ক্ষেত্র ছাড়ার অনুরোধ করছেন। কিন্তু আমরা পরিচয় দিলে তাঁরা আমাদের পরিদর্শনের সুযোগ দিলেন। পুলিশ ভাইটি নিজেই সব ঘুরিয়ে দেখালেন। তাঁদের ভাষায় মাওলানা মানে আফেন্দি। একজন ভিনদেশি আফেন্দিকে সব কিছু দেখাতে পেরে তিনি যেন নিজ থেকে আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।
 
লেখক : খতিব, হাজি মফিজুর রহমান ট্রাস্ট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মোহাম্মদপুর, ঢাকা
 
 
captcha