হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের শরীর ও চেহারার দিকে দেকবেন না; বরং তিনি দেখবেন তোমাদের কলব ও কর্মের দিকে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৪)
অন্য হাদিছে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জেনে রেখো! শরীরের মধ্যে এমন এক টুকরা গোশত আছে, যা সুস্থ থাকলে সারা শরীরই সুস্থ থাকে, আর এটা অসুস্থ হয়ে গেলে সারা শরীরই অসুস্থ হয়ে যায়। জেনে রেখো, আর এটাই হলো কলব। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫২)
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম আল-জাওজিয়্যাহ (রহ.) বলেন, কলব তিন প্রকার। যথা :
১. সুস্থ কলব : কিয়ামতের দিন সুস্থ কলব ছাড়া কেউ মুক্তি পাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিয়ামতের দিন কোনো অর্থ-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি কারো কোনো উপকারে আসবে না। একমাত্র ওই ব্যক্তি মুক্তি পাবে, যে সুস্থ কলব নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছবে। ’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ৮৮-৮৯)
২. মৃত কলব : মৃত কলব জীবিত কলবের বিপরীত। কলব বিদ্যমান কিন্তু নিষ্প্রাণ। যার ফলে ওই কলব দ্বারা ভালো-মন্দ কিছুই বুঝতে পারে না। আর এর আবাসস্থল হবে জাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষ। তাদের কলব আছে; কিন্তু তা দিয়ে তারা অনুধাবন করে না, তাদের চোখ আছে, তা দিয়ে দেখে না, কান আছে তা দিয়ে শুনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হলো গাফেল শৈথিল্যপরায়ণ। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৭৯)
৩. অসুস্থ কলব : এ ধরনের কলব জীবিত কিন্তু ব্যধিগ্রস্ত। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেভাবে রোগাক্রান্ত হয়, তেমনি কলবও রোগগ্রস্ত হয়। হাতের রোগ ধরতে, পায়ের রোগ চলতে, চোখের রোগ দেখতে, জিহ্বার রোগ কথা বলতে যেমন বাধা দেয়, তেমনি কলবের রোগ আল্লাহর হিদায়াত লাভে প্রভুর প্রতি সাক্ষাতের আশা পোষণ করতে, ভালো কাজে অগ্রসর হতে, ইবাদতে মনোনিবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করে। এ ধরনের কলবে ঈমান ও মুনাফিকি উভয়টা থাকতে পারে। যদি ঈমান, ইখলাস, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, তাওয়াক্কুল দ্বারা প্রভাবিত হয় তাহলে সুস্থ কলবের পর্যায়ে উন্নীত হয়। আবার যদি কুপ্রবৃত্তি, হিংসা, অহংকার, শিরক, মন্দ কাজের দ্বারা প্রভাবিত হয় তাহলে মৃত কলবের পর্যায়ে চলে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘চাটাই বুননের মতো এক এক করে ফিতনা মানুষের কলবে আসতে থাকে। যে কলবে তা গেঁথে যায় তাতে একটি করে কালো দাগ পড়ে। আর যে কলব তা প্রত্যাখ্যান করে তাতে একটি করে শুভ্রোজ্জ্বল চিহ্ন পড়ে। এমনি করে দুটি কলব দুই ধরনের হয়ে যায়। একটি উল্টানো কালো কলসির মতো হয়ে যায়। প্রবৃত্তি তার মধ্যে যা গেঁথে দেয় তা ছাড়া ভালো-মন্দ কিছুই চেনে না। আর অন্যটি শ্বেত পাথরের মতো; আসমান ও জমিনের স্থায়িত্ব যত দিন, তত দিন কোনো ফিতনা তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। ’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ২৯৬০)