IQNA

কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের চরিত্র/ ২২

অর্থনৈতিক পরামর্শ প্রদানকারী নবী

0:07 - December 26, 2022
সংবাদ: 3473060
হযরত শোয়াইব (আ.) ছিলেন হযরত ইবরাহিমের (আ.) বংশের একজন নবী, যিনি মানুষকে লেনদেন ও বাণিজ্যে নিয়ম-কানুন মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং বলা হয় যে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য পরিমাপক যন্ত্র তৈরি করেছিলেন।

শোয়াইব (আ.) মহান আল্লাহ প্রেরিত একজন নবী এবং ইবরাহিমের (আ.) বংশধরদের একজন। তিনি ছিলেন তৃতীয় আরব নবী যার নাম কুরআনে উল্লেখ আছে।
শোয়াইবের পিতা মাদাইন বিন ইব্রাহীম এবং তার মা ছিলে হযরত লূতের (আ.) সন্তান। কেউ কেউ তার পিতার নাম নবিব এবং মাদাইনকে পিতামহ মনে করেন। হযরত মূসার (আ.) শ্বশুর, যাঁর নাম তাওরাতে উল্লেখ আছে। প্রকৃত পক্ষে শোয়াইব (আ.) এবং হযরত মূসার শুরুর একই ব্যক্তি না কি সে সম্পর্কে মুফাস্সিরগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
হযরত শোয়াইব এবং তার সম্প্রদায়ের ঘটনাটি তাওরাতে উল্লেখ নেই। শোয়াইবের কথা শুধুমাত্র এভাবে উল্লেখ হয়েছে যে, হযরত মূসা (আ.) মিশর থেকে মাদায়েনে পালিয়ে যাওয়ার পর, তিনি সেখানে একজন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, যার নাম "আওয়াইল কাহেনে মাদায়ান” (মাদায়েন শহরের একজন পুরোহিত বা ধর্মীয় পণ্ডিত) যাকে শোয়াইব নামে অভিহিত করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআন পাঁচটি সূরা আরাফ, হুদ, শু’য়ারা, আনকাবুত এবং কাসাসের ৪০ টিরও বেশি আয়াতে হযরত শোয়াইবের জীবনী উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু শোয়াইব শব্দটি কুরআনে মাত্র ১১ বার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এই সূরাগুলির বেশিরভাগ আয়াত হযরত শোয়াইবের মিশন সম্পর্কে যেমন ব্যবস্থাপনা, সমাজের অধিকার, নীতিশাস্ত্র, একেশ্বরবাদী সংস্কৃতির প্রচার, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং এই আয়াতসমূহে যারা হযরত শোয়াইব (আ.)কে অস্বীকার করেছিল তাদের পরিস্থিতি এবং আযাব সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে।
হযরত শোয়াইব (আ.), হযরত ইউসুফ বিন ইয়াকুবের (আ.) পরে এবং মুসা বিন ইমরানের (আ.) আগে ছিলেন। মুফাস্সিরদের মতে তারা একই সময়ে নবী হয়েছিলেন। তিনি তৃতীয় আরব নবী হিসাবে বিবেচিত হন যার গল্প কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।
"মাদাইন" বা "মাদায়েনে শোয়াইব" হল হিজাজ (মধ্য আরবের অংশ) ভূমিতে আকাবা উপসাগরের পূর্বে একটি শহর। প্রথমে, শোয়াইব এই শহরে বাস করতেন এবং মাদাইনের লোকদেরকে আল্লাহর ইবাদত করতে এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন, কিন্তু তারা হযরত শোয়াইব (আ.)এর আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করে এবং হযরত শোয়াইব ও তার অনুসারীদেরকে মাদাইন থেকে বহিষ্কার করে। এর ফলে হযরত শোয়াইব তাদের অভিশাপ দেন এবং আল্লাহ তাদের ভূমিকম্প দিয়ে শাস্তি দিয়েছিলেন এবং ঐ শহর ও শহরের বাসিন্দাদের ধ্বংস করেছিলেন।
এরপর হযরত শোয়াইব (আ.) ইকাহ গোত্রের দিকে যান। এই শহরটি মাদায়ইনের কাছে অবস্থিত, যা আজ তাবুক (আরবে একটি শহর) নামে পরিচিত। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইকাহের লোকেরা কুফর ও শিরকের দিকে ঝুঁকেছিল এবং হযরত শোয়াইবের পরামর্শ গ্রহণ করেনি। মহান আল্লাহ তাদের জন্য ৭ বা ৯ দিনের জন্য ভূমিকে উত্তপ্ত করেছিলেন এবং তারপর তাদের উপর আগুন বর্ষণ করেছিলেন এবং এই আযাবের ফলে তারা সকলেই মৃত্যু বরণ করে।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ করা হয়েছে:


فَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا


অতএব, মাপ ও ওজন ঠিকভাবে দাও, আর লোকদের প্রাপ্যবস্তু কম দিও না এবং এর সংস্কারের পর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কর না।
সূরা আ’রাফ, আয়াত: ৮৫।
পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মাদায়েনের লোকেরা ওজনে কম বিক্রি করত, অধিক মূল্যে দ্রব্য বিক্রি করতো, ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ম-কানুন অমান্য করত। তাদের সংশোধনের জন্য হযরত শোয়াইব (আ.) ব্যবসায় ও লেনদেনে পণ্য পরিমাপের মাধ্যম রাখলেও তারা গ্রহণ করেননি।
কেউ কেউ মনে করেন যে দাঁড়িপাল্লা এবং পণ্য পরিমাপের যন্ত্র হযরত শোয়াইব (আ.)এর উদ্যোগ নির্মিত হয়েছে।

captcha