IQNA

কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের চরিত্র – ২৩

শোয়াইব; একজন বগ্মী নবী

0:01 - December 30, 2022
সংবাদ: 3473083
তেহরান (ইকনা): হযরত শোয়াইব (আ.) সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ ও মুফাসসিরগণ লিখেছেন যে, তিনি অন্ধ ছিলেন, কিন্তু কথা, যুক্তি ও বক্তৃতায় তাঁর অনেক দক্ষতা ছিল।
হযরত মুসা (আ.) যখন যুবক ছিলেন, তখন ফেরাউনের বাহিনীর একজনের সাথে তার সংঘর্ষ হয় এবং এরফলে ফেরাউনের বাহিনীর ঐ ব্যক্তি নিহত হয়। এর পর, তিনি সেই দেশ থেকে পালিয়ে যান এবং পথিমধ্যে তিনি মেষপালক মেয়েদের দেখতে পান। হযরত মুসা (আ.) পশুদের পানি খাওয়ানোর জন্য সেই মেয়েদের সাহায্য করেন এবং তারপর তাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন।
তারা ছিল হযরত শোয়াইবের মেয়ে এবং বাড়ি ফিরে তারা হযরত মুসাকে (আ.) কাজে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়, যা বাবা গৃহীত করেন। শোয়াইব (আ.) মুসাকে (আ.) তাঁর মেয়ের সাথে কাজ করার ও এক মেয়েরে সাথে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন এবং তিনি রাজি হন। চুক্তি মোতাবেক শোয়াইবের (আ.) মেয়েকে বিয়ে করেন হযরত মুসা (আ.)।
কিছু সূত্র মতে, হযরত শোয়াইব (আ.) ইয়াকুবের মতো অন্ধ ছিলেন। অনেক ঐতিহাসিকবিক ও মুফাস্সিরগণ শোয়েবের (আ.) অন্ধত্বের কারণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন যে, তিনি মহান আল্লাহর প্রতি অনেক ভালোবাসা ও আবেগের কারণে অনেক কান্নাকাটি করতেন এবং এরফলে তিনি অন্ধ হয়ে যান।
ইসলামের নবী (সা.) হতে বর্ণিত: হযরত শোয়াইব (আ.) আল্লাহর ভালোবাসার জন্য এত বেশী কাঁদতেন যে তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, আল্লাহ তাকে দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন, আবার তিনি এত কাঁদতেন যে তিনি পুনরায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, আবার আল্লাহ তাকে দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন এবং তৃতীয়বারেও তিনি আল্লাহর ভালোবাসার জন্য এত বেশী কাঁদলেন যে অন্ধ হয়ে গেল, মহান আল্লাহ আবারও তার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন। চতুর্থবার, আল্লাহ তায়ালা তাকে ওহী করলেন: হে শোয়াইব! এভাবে আর কতদিন চলবে? যদি তোমার কান্না জাহান্নামের আগুনের ভয়ে হয়, তবে আমি তা তোমার জন্য হারাম করেছি, আর যদি বেহেশতের আনন্দের কারণে হয়, তবে আমি তোমার জন্য তা মুবাহ করেছি।
হযরত শোয়াইব (আ.) বললেন: 
 
اِلهِی وَ سَیدِی اَنْتَ تَعْلَمُ اَنِّی ما بَکیتُ خَوْفاً مِنْ نارِک وَ لا شَوْقاً اِلی جَنَّتِک، وَ لکنْ عُقِدَ حُبُّک عَلی قَلْبِی فَلَسْتُ اَصْبِرُ اَوْ اَراک
 
হে আমার আল্লাহ এবং হে আমার রব! আপনি জানেন যে আমি আপনার জাহান্নামের আগুনের ভয়ে কাঁদছি না, আপনার বেহেস্তের আকাঙ্ক্ষার কারণেও কাঁদছি না। বরং আপনার ভালবাসা আমার হৃদয়ে এমন ভাবে বেঁধেছে যে, আমি ধৈর্যহারা হয়ে গিয়েছি আপনাকে (আমার হৃদয়ের চোখ দিয়ে) দেখার জন্য এবং আমি যেন অতীন্দ্রিয়বাদ এবং নিশ্চয়তার চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছাতে পারি এবং আমাকে আপনার প্রেমিক হিসাবে গ্রহণ করেন।"
আল্লাহ তায়ালা শোয়াইবকে বললেন: "এখন যেহেতু তোমার এমন অবস্থা হয়েছে, আমি শীঘ্রই আমার সঙ্গী মুসা (আ.)-কে তোমার খাদেম হিসেবে প্রেরণ করব।" হযরত মুসা (আ.)-এর জীবনের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে হযরত শোয়াইব (আ.)-এর কাছে ছিলেন এবং তাঁর মেষগুলো দেখেভাল করতেন।
 
হযরত শোয়াইব (আ.) যুক্তি ও তর্ক এবং জ্ঞানী ও প্রেমময় উপায়ে তাঁর গোত্রের লোকদেরকে মহান আল্লাহ ও ন্যায়ের দিকে আহ্বান করতেন। তার বক্তব্য এতই আকর্ষণীয় এবং চিত্তাকর্ষক ছিল যে ইসলামের নবী (সা.) বলেছেন: : «کانَ شُعَیبٌ خَطِیبُ الْأنبِیاءِ» শোয়াইব (আ.) নবীদের মধ্যে একজন বক্তা এবং খতিব ছিলেন।
শোয়াইব (আ.)-এর যৌক্তিক আহ্বান শোনার এবং তাঁর আনুগত্য করার পরিবর্তে, তাঁর গোত্রের লোকেরা একগুঁয়ে পোষণ করেছিল এবং তাঁর সামনে অহংকার নিয়ে দাঁড়িয়ে তারা তাঁকে অজ্ঞ ও দুর্বল মনের অধিকারী বলে অভিহিত করেছিল।
 শোয়াইব (আ.)-এর বয়স সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন মতামত পোষণ করেছেন। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, তিনি ২৪২ বছর বেঁচে ছিলেন এবং কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, তিনি ২৫৪ বছর বেঁচে ছিলেন এবং বাকীরা বিশ্বাস করেন যে ৪০০ বছল বেচে ছিলেন। তাঁর মৃত্যু এবং সমাধিস্থল সম্পর্কেও মতভেদ রয়েছে। সৌদি আরব, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন ও ইরানে তাঁর নামে আলাদা আলাদা কবর রয়েছে, যেখানে শোয়াইব (আ.)কে দাফন করা হয়েছে বলে নিবন্ধিত রয়েছে।

 

captcha