IQNA

ভালবাসা; আবিদ এবং মা’বুদের সম্পর্কের ভিত্তি

0:02 - May 19, 2023
সংবাদ: 3473771
তেহরান (ইকনা): আবিদ (যে ইবাদত করেন) এবং মা’বুদের (যাকে ইবাদত করা হয়) মধ্যে সম্পর্ক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কিন্তু ইব্রাহিম (আ.)-এর জীবনী থেকে আমরা দেখতে পাই যে, এই সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে ভালোবাসা।
আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ মোস্তাফি মোহাক্বেক দামাদ পবিত্র কুরআন তাফসিরের ক্লাসে সূরা শুআরা সম্পর্কে তাফসিরের বিষয়গুলি প্রকাশ করেছেন, যার কিছু অংশ নীচে তুলে ধরা হল:
 
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তার মূর্তিপূজক সম্প্রদায়কে বললেন, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা যখন তোমাদের উপাস্যকে ডাক, তারা কি তোমাদের আওয়াজ শুনতে পায়? যদি তারা শুনতে পায়, তাহলে তাদের তোমাদের অনুরোধে সাড়া দেওয়া উচিত এবং তোমাদেরকে উপকার করা উচিত। তোমারা যদি পাপ করো, তাহলে তারা কি তোমাদের ক্ষতি করবে? এসব লোকের প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তারা পুরোপুরি চিন্তা-চেতনায় নিমজ্জিত ছিল, তাই তারা ইব্রাহীম (আ.)-কে উত্তর দিল, আমরা পূর্বসূরিদের অনুকরণ ও অনুসরণে এ ইবাদত করছি। উপাসনার বিষয়টি, যা বিশ্বাসের প্রথম বিষয়, এক্ষেত্রে তাকলিদ বা অনুকরণ করা উচিত নয়, তবে একজন ব্যক্তির চিন্তা ও প্রতিফলনের ভিত্তিতে তার ঈশ্বরকে বেছে নেওয়া উচিত।
 
«قَالُوا بَلْ وَجَدْنَا آبَاءَنَا كَذَلِكَ يَفْعَلُونَ»(
 
তারা বলল, ‘আমরা আমাদের পিতৃ-পুরুষদের এরূপই করতে দেখেছি।’
 
সূরা শুআরা, আয়াত: ৭৪। 
 
এখানেই ইব্রাহিম (আ.) বক্তৃতা শুরু করলেন এবং বললেন, "আপনি কি বুঝতে পারছেন যে আপনি অনুকরণ করে আপনার মূর্তি বেছে নিয়ে কী ভুল করছেন?" এখানে হযরত ইব্রাহিম (আ.) ভালোবাসা এবং শত্রুতা সম্পর্কে কথা বলেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, আমরা যে খোদাকে ইবাদত করি তার উচিত বান্দাদের ভালোবাসা এবং আমাদেরও উচিত খোদাকে ভালোবাসা। এই সম্পর্কের কথা পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: «یحبهم و یحبونه». آ তিনি (আল্লাহ) ভালবাসেন এবং
 
তারাও তাঁকে ভালবাসে। ইব্রাহিম (আ.) যখন তার ঈশ্বরকে খুঁজছিলেন, তখন তিনি বলতে থাকেন: «انی لااحب الافلین». ‘অস্তগামীদের আমি পছন্দ করি না।’ সুতরাং আবিদ (যে ইবাদত করেন) এবং মা’বুদের (যাকে ইবাদত করা হয়) মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকতে হবে।
 
এখানে, ইব্রাহিম (আ.) শ্রোতাদের কাছে একটি সহজ উপায়ে স্বয়ং খোদাকে ব্যাখ্যা করতে শুরু করেন এবং বলেন যে বিশ্বজগতের প্রভুর এই সহজ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শ্রোতাদের প্রত্যেকে স্বীকার করতে পারে। প্রথমত, তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন: «الَّذِي خَلَقَنِي فَهُوَ يَهْدِينِ».  যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথ প্রদর্শন করেন। আমরা সবাই একবার ছিলাম না এবং আমরা সৃষ্টি হয়েছি। প্রশ্ন হল আমাদের কে সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহই আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের পথ দেখান। এর মানে হল, আমি যে সৃষ্টি হয়েছি তা বৃথা নয় এবং এটি একটি উদ্দেশ্য এবং উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে ছিল, তাই আমি সেই উদ্দেশ্যের দিকে পরিচালিত হয়েছি। শ্রোতারা কি বলতে পারেন মানুষেরই হাতে তৈরী মূর্তীরা আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে? এ কথা তারা বলতে পারে না।
 
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল আল্লাহ আমার ক্ষুদা নিবারণ করেন এবং আমাকে তৃষ্ণা মিটান: «وَالَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْقِينِ». এবং তিনিই আমাকে আহার্য দান করেন এবং পানীয় পান করান, এটা ঠিক যে আমি আমার হাত দিয়ে আমার মুখে খাবার রাখি, কিন্তু যখন আমি খাই, তখন কোন শক্তি আমর শারীরিক শক্তি পূরণ করে? তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হল আমি অসুস্থ হলে আল্লাহ আমাকে সুস্থ করবেন: «وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ». এবং আমি রোগগ্রস্ত হলে তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন। রোগীর চিকিৎসার জন্য সবকিছুই হাতিয়ার, কিন্তু প্রকৃত নিরামত মহান আল্লাহর হাতে। চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হল আমি মারা গেলে আল্লাহ আমাকে পুনরুত্থিত করেন: «وَالَّذِي يُمِيتُنِي ثُمَّ يُحْيِينِ». এবং তিনিই আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবিত করবেন। এখানেই হযরত ইব্রাহিম (আ.) একেশ্বরবাদ এবং পুনরুত্থানের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। এগুলি এমন জিনিস যা নিষ্প্রাণ মূর্তিগুলি করার দাবি করতে পারে না। শেষ বৈশিষ্ট্য হল যে আমি ভুল করি, কিন্তু আমি আমার ভুল সংশোধন করতে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই: «وَالَّذِي أَطْمَعُ أَنْ يَغْفِرَ لِي خَطِيئَتِي يَوْمَ الدِّينِ». এবং আমি তাঁরই কাছে এ আশা করি যে, তিনি বিচার-দিবসে আমার অপরাধ মার্জনা করবেন।
 
কীভাবে দোয়া করতে হয় সেই বিষয়টি শেখানোর জন্য হযতর ইব্রাহিম (আ.) দোয়া করা শুরু করলেন। প্রথমত, আমাদের উচিত আল্লাহর প্রশংসা করা এবং তার প্রশংসাযোগ্য গুণাবলী গণনা করা। ইব্রাহিমের  (আ.) প্রথম দোয়া হল:  «رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ» হে আমার প্রতিপালক! আমাকে বিধান (নবুওয়াত ও প্রজ্ঞা) দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর। হযরত ইব্রাহীম (আ.) নিজের জন্য এবং তার ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য যে প্রজ্ঞা চেয়েছিলেন, এই বিধানটি সেই একই প্রজ্ঞা। হযরত ইব্রাহিম (আ.) মহান আল্লাহর নিকট জ্ঞা ও প্রজ্ঞা হেবে তথা উপহার দেওয়ার কথা বললেন। হেবে বা উপহার বিনামূল্যে প্রদান করা হয় এবং যার প্রতিদানে কিছুই গ্রহণ করা ন। এই হিকমত ঐশ্বরিক হিকমত। সক্রেটিস এবং প্লেটোর জ্ঞান ক্লাসে অংশগ্রহণ করে এবং আলোচনার মাধ্যমে পাওয়া যায়, কিন্তু এই জ্ঞান ঐশ্বরিক জ্ঞান।
captcha