IQNA

জাকার্তার প্রাচীন আরব মসজিদ

0:05 - May 20, 2023
সংবাদ: 3473774
তেহরান (ইকনা): অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে আরব উপদ্বীপের বণিকরা যখন বাটাভিয়ায় বসবাস শুরু করে, তখন তাদের অধিকাংশই পেকোজান অঞ্চলে বসবাস করত।
মূলত বাটাভিয়া অঞ্চলটি ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের প্রধান শহর এবং ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান রাজধানী জাকার্তার খুবই কাছে। জাতিগত বিভাজনে অভ্যস্ত ডাচ ঔপনিবেশিক শাসকদের কারণে নির্দিষ্ট এলাকায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে বসবাস করতে হতো। ঠিক তেমনি পেকোজান একটি বিচ্ছিন্ন এলাকা হলেও সেখানে বহু সাংস্কৃতিক প্রভাব লক্ষণীয়। এখানে রয়েছে আরব সমপ্রদায়ের বসবাসের স্মৃতিচিহ্ন। জাকার্তার ল্যাংগার টিংগি(Langgar Tinggi) ) মসজিদ আরবদের সবচেয়ে জীবন্ত নিদর্শনগুলোর অন্যতম। তবে অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনার চেয়ে এর ভিন্নতা হলো, প্রায় দুই শ বছর আগে নির্মিত মসজিদটি এখনো আগের অবয়ব ধরে রেখেছে। 
 
সাত প্রজন্ম আগে ইয়েমেন থেকে এসে বাটাভিয়ায় বসবাস শুরু করেন আহমদ আলবি আসেগাফ। বর্তমানে তিনিই ল্যাংগার টিংগি মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আরব নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘১৮২৮ মোতাবেক ১২৪৯ হিজরি সালে নির্মিত মসজিদের ভবনটি এখনো শক্ত ও অক্ষত রয়েছে। নির্মাণের পর থেকে তাতে আর কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরাও এর কোনো পরিবর্তন চাই না।
 
তিনি আরো বলেন, ‘বাটাভিয়ার আরবদের মধ্যে স্থানীয় সমপ্রদায়ের জীবনাচারের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। চীনা, ইউরোপীয় ও স্থানীয় আদিবাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তারা তাদের জীবনকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এখানকার আরব বাসিন্দারা অনেক মসজিদ ও নামাজের স্থান তৈরি করেন। এমনকি ইসলামী ছুটির দিনগুলো উদযাপনে আর্থিক সহায়তা করত। যেন ইয়েমেনের মতো পেকোজানের স্থানীয়রাও এসব উৎসব পালন করে।’
 
ইয়েমেনি মুসলিম ব্যবসায়ী আবু বকর শিহাব দোতলা মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। দক্ষিণ আরবের এক সম্ভ্রান্ত বণিক পরিবারের দান করা জমিতে তা নির্মাণ করা হয়। সেই সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক ধনী ব্যবসায়ী বসবাস করতেন। তাঁদের পক্ষ থেকে ইউরোপীয়দের উপনিবেশ অঞ্চলের মুসলিম বাসিন্দাদের জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় অনুদান থাকত।
 
মসজিদের কাঠের উপাদান, লাল ছাদের টাইলস ও সাদা দেয়াল দেখে প্রথমে মসজিদের সাধারণ দৃশ্যের সঙ্গে মিলবে না। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে এর স্থাপত্যশৈলীতে বিভিন্ন ঐতিহ্যের ছাপ দেখা যায়। পর্তুগিজ স্থাপত্যে মসজিদের স্তম্ভগুলো তৈরি করা হয়। মসজিদের দরজা, জানালা ও সাপোর্ট বিমগুলো চীনা স্থাপত্যশৈলীর অনুসরণ করে। তখনকার সময় জাভা অঞ্চলে এ ধরনের স্থাপত্যশৈলী অনুসরণের প্রবণতা ছিল। অর্থাৎ ল্যাংগার টিংগি মসজিদে শুধু আরব স্থাপত্যরীতি নয়; বরং সেখানে বসবাসরত সব সমপ্রদায়ের প্রভাব লক্ষণীয়।
 
গত কয়েক দশকে অনেক আদি বাসিন্দা পেকোজান অঞ্চল ছেড়েছেন। অনেকে জাকার্তার অন্য অংশে চলে গেছে। তা ছাড়া আশপাশের অনেক ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। ১৯১০ সাল থেকে আবু সুলতান পেকোজানে বসবাস করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রত্যক্ষ করছেন, আশপাশের স্বতন্ত্রতা ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক আরব বসবাস করত। অনেক ব্যবসায়ীও ছিল। এলাকাটি এখনো আরব প্রতিবেশী পরিচিত হলেও অনেকে ইতিমধ্যেই চলে গেছে।’
 
এসব কিছুর মধ্যেও হারানো গৌরব ফিরে আসার ব্যাপারে আশাবাদী আহমদ আলবি আসেগাফ। তিনি বলেন, পেকোজান এলাকা এখনো আরব সংস্কৃতির উৎস হিসেবে রয়েছে। এখানে ইয়েমেনের সংস্কৃতি সমুন্নত রাখা হয়েছে। স্থানীয় রন্ধন ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, স্থানীয় খাবারে খাঁটি আরব খাবারের প্রভাব রয়েছে। হোটেলের শেফরাও এখানে এসে রান্না শেখে। এখানকার বহুমাত্রিক পরিচয় এখনো জীবন্ত।’
 
সূত্র : আরব নিউজ
captcha