IQNA

নবীদের শিক্ষা পদ্ধতি; নূহ (আঃ)/৩৪

হযরত নূহ (আ.)এর সিরাতে বিবেকের জাগরণ

17:25 - November 07, 2023
সংবাদ: 3474618
তেরহান (ইকনা):  এই শরীর এবং চেহারা ছাড়াও, মানুষের একটি অভ্যন্তরীণ সত্য রয়েছে যা তাদের বৃদ্ধি এবং উচ্চ স্তরের দিকে অগ্রসর হতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। 

একজন মানুষের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হল তার বিবেক। বিবেক একজন ব্যক্তিকে বাহ্যিক নির্দেশিকা ছাড়াই ভাল এবং খারাপ কাজের মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করে এবং যদি একজন ব্যক্তি ভুল পথে থাকে তবে সে বিবেকের দ্বারা শাস্তি পায় এবং সুস্থ জীবনের পথে ফিরে আসে।
শিক্ষাগত পদ্ধতিগুলির মধ্যে যা সাধারণত মানুষের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং মানুষের আত্ম-উন্নতির কারণ হয় বিবেককে জাগ্রত করার পদ্ধতি। মানুষের সারমর্মের প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং সে কিসের জন্য এই পৃথিবীতে এসেছিল এবং এর আগে কী ছিল তা মানুষের শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন একজন ব্যক্তি এই সত্যগুলি সম্পর্কে সচেতন হন, তখন এটি স্পষ্ট যে সে অতীতের অনেক অবহেলা এবং ভুল কাজের জন্য অনুশোচনা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে। প্রকৃতপক্ষে, এই পদ্ধতিতে প্রশিক্ষকের (শিক্ষক) দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষার্থী যে সত্য এবং পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারে সেগুলি তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া, যাতে তার ঘুমন্ত বিবেক জেগে ওঠে।
একজন ব্যক্তির উন্নতিতে এই পদ্ধতির প্রভাব অনস্বীকার্য। অতএব, আল্লাহ, যিনি বিশ্বের একমাত্র শিক্ষক এবং প্রভু, তিনি এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। আমরা যদি কোরআনের আয়াতগুলো পরীক্ষা করি, তাহলে আমরা এমন অসংখ্য আয়াত দেখতে পাব যেগুলো মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করে। আল্লাহ মানুষের সৃষ্টি থেকে সাত আসমানের সৃষ্টি পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য যে তারা আল্লাহর সামনে কতটা দুর্বল এবং দরিদ্র তা ভুলে যাবেন না। এই বিষয়টির গুরুত্ব মানুষকে বোঝাতে তিনি কয়েকটি আয়াতে একই কথা পুনরাবৃত্তি করেছেন। 
হযরত নূহ (আঃ) তার সম্প্রদায়কে পথ দেখানোর জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে দ্বিধা করেননি। নিজের নামে নামাঙ্কিত সূরাটিতে, তিনি তাদের বিবেককে জাগ্রত করার জন্য অনেকবার আল্লাহর নেয়ামতের বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তার গোত্রের লোকেরা তাকে অস্বীকার করেছে। হযরত নূহ (আঃ) বলেনঃ 


مَا لَکُمْ لا تَرْجُونَ لِلَّهِ وَقَارًا وَقَدْ خَلَقَکُمْ أَطْوَارًا  أَلَمْ تَرَوْا کَیْفَ خَلَقَ اللَّهُ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا  وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِیهِنَّ نُورًا وَجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا وَاللَّهُ أَنْبَتَکُمْ مِنَ الأرْضِ نَبَاتًا  ثُمَّ یُعِیدُکُمْ فِیهَا وَیُخْرِجُکُمْ إِخْرَاجًا وَاللَّهُ جَعَلَ لَکُمُ الأرْضَ بِسَاطًا لِتَسْلُکُوا مِنْهَا سُبُلا فِجَاجًا

তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে চাও না?  ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে তিনিই তোমাদের বিবিধ পর্যায়ে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি লক্ষ্য করনি, আল্লাহ কীরূপে সপ্তস্তরে বিন্যস্ত আকাশম-লী সৃষ্টি করেছেন? এবং সেখানে চন্দ্রকে আলোরূপে ও সূর্যকে প্রদীপরূপে স্থাপন করেছেন; এবং আল্লাহ তোমাদের মৃত্তিকা হতে উদ্ভিদ উদ্গত করার ন্যায় উদ্গত করেছেন। অতঃপর তাতেই তিনি তোমাদের প্রত্যানীত করবেন এবং (পুনরুত্থান দিবসে) তোমাদের পূর্ণরূপে বের করবেন। এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন। যাতে তোমরা বিবিধ প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পার।’
সূরা নূহ, আয়াত: ১৩ থেকে ২০।
হযরত নূহ সর্বপ্রথম তার সম্প্রদায়কে এক বাক্যে দোষারোপ করেন। এছড়াও তিনি তার গোত্রের লোকেদের দুর্বলতা এবং অক্ষমতা সম্পর্কে  তাদের সচেতন করেন। কারণ একজন মানুষের যতই ক্ষমতা থাকুক না কেন, সে এত বিশালতার আকাশ তৈরি করতে পারে না, বা তরল থেকে থেকে প্রতিভাসম্পন্ন মানুষ এবং সমতল পৃথিবী তৈরি করতে পারে না।
এই সমস্ত ইঙ্গিত করা হয়েছিল যাতে তাদের বিবেক তাদের পথভ্রষ্ট হতে বাধা দেয়, কিন্তু আমরা দেখেছি যে নূহের (আঃ) যুগের অধিকাংশ লোক তাদের অবিশ্বাসের কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

ট্যাগ্সসমূহ: নূহ ، গোত্র ، বিবেক ، নবী ، ইকনা ، হযরত
captcha