মুসলিম সভ্যতার যাত্রা শুরু হলে মানবসভ্যতার অন্য সব প্রাচীন উত্তরাধিকারের মতো মুসলমানরা ওষুধশিল্পকেও এগিয়ে নিতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। বৃক্ষ, তরুলতাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান থেকে প্রতিষেধক তৈরির প্রাচীন পদ্ধতিকে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দান করে, বিশেষত মুসলমানরা ওষুধের ভেষজ ও প্রাণিজ উপাদনগুলোর বাণিজ্যিক উৎপাদন, তা সংরক্ষণ ও বিপণনে বিশেষ অবদান রাখে।
ভূমধ্যসাগর, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম বিজ্ঞানীরা ওষুধের প্রায়োগিক নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন।
আল আন্দালুসের (মুসলিম স্পেন) মুসলিম বিজ্ঞানীরা ওষুধশিল্পের এই উন্নয়ন প্রচেষ্টার বাইরে ছিলেন না, বরং তাঁরা কিছুটা অগ্রসরই ছিলেন। তাঁরা চিকিৎসাবিজ্ঞান ও ওষুধশিল্পে নিত্যনতুন বহু বিষয় যোগ করেন। স্পেন প্রাচীন রোমান ও গ্রিক সভ্যতার উত্তরাধিকার বহন করত।
মুসলিম স্পেনের সম্পর্কও ছিল দামেস্কের সঙ্গে, সেটিও রোমান ও গ্রিক সভ্যতার উত্তরাধিকার বহন করত। ফলে আন্দালুসের চিকিৎসাপদ্ধতিতে গ্রিক ও রোমানদের প্রভাব দেখা যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রিক গ্রন্থ ‘ডায়োসকোরাইডস’ অনুবাদ করেন হাসদাই বিন শাপরুত। তিনি কর্ডোভার অধিবাসী ছিলেন।
কর্ডোভার অপর চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে জুলজুল ‘ডায়োসকোরাইডস’-এর একটি ব্যাখ্যা গ্রন্থ লেখেন। স্পেনে মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে আল-বিরুনি সবচেয়ে বেশি চর্চিত ছিলেন। আল-বিরুনি ছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনার সমকক্ষ।
তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময়ও হয়েছিল।
ওষুধশিল্পে মুসলিম স্পেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় কাজটি করেছিলেন গ্রানাডার অধিবাসী উদ্ভিদবিজ্ঞানী ইবনে বাইতার, যা পরবর্তী সময়ে ইউরোপের অন্যান্য অংশেও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
ওষুধ ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিষয়ে ‘কিতাবুল জামে লি-মুফরাদাতিল আদবিয়্যাতি ওয়াল আগজিয়্যাতি’। এটাকে ওষুধশিল্পের বিশ্বকোষ বলা হয়। বইটিতে তিনি ওষুধশিল্পের এক হাজার ৫০০ উপকরণের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য, প্রস্তুতির প্রণালী ও রোগীর ওপর তা প্রয়োগের পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করেছেন। ১৮৭৫ সালেও কায়রোর বিখ্যাত বুলাক প্রেস থেকে বিখ্যাত এই বইটি ছাপা হয়েছে।
এসব অমূল্য গ্রন্থ ও হাসপাতালগুলো থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা, ঔষধি বাগান ও ঔষধ প্রতিষেধক নিয়ে অব্যাহত গবেষণা মুসলিম স্পেনে ওষুধশিল্পের বিকাশকে তরান্বিত করেছিল। আল আন্দালুসের হাসপাতালগুলো ছিল ইউরোপের যেকোনো হাসপাতালের তুলনায় আধুনিক ও সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন। মুসলমানদের কাছ থেকে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিসিলি ও দক্ষিণ ফ্রান্সের প্রাচীনতম হাসপাতালগুলো গড়ে উঠেছিল। ওষুধ ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদানগুলো এখনো পশ্চিমা বিশ্বের ন্যায়পরায়ণ বুদ্ধিজীবীরা অকপটে স্বীকার করেন।
ইসলামিক স্পেন ডটটিভি অবলম্বনে