IQNA

আফ্রিকার হজযাত্রীরা যে বন্দর দিয়ে মক্কায় যেত

18:31 - June 03, 2024
সংবাদ: 3475552
ইকনা: সুদানের প্রাচীনতম বন্দরগুলোর একটি সুওয়াকিন বা সাওয়াকিন। এর শাব্দিক অর্থ বসবাসকারীরা। লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত সুদানের বন্দরটি বিশেষ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। এ ছাড়া সুওয়াকিনের ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে।
ইউনেসকো বন্দরটিকে সুদানের অস্থায়ী তালিকায় স্থান দিয়েছে এবং ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ওয়াচ তাকে তালিকাভুক্ত করেছে। প্রাচীনকালে সুওয়াকিন সমুদ্রবন্দর এবং হাজিদের গমন পথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আফ্রিকার হজযাত্রীরা এখানে সমবেত হয়ে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করত।
লোহিত সাগরের একটি ছোট দ্বীপে সুওয়াকিন বন্দরের সূচনা হয়।
 
 
এখানে এসে একটি মরুপথ সমুদ্রের নীল দিগন্তে মিশে গেছে। প্রাচীনকালে আফ্রিকার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যপথ ‘সুদান রোড’-এর প্রধান বন্দর ছিল এটিই। এই পথে বহু হজযাত্রী আফ্রিকার নানা প্রান্ত থেকে সুওয়াকিনে সমবেত হতো। সুওয়াকিনের আরেকটি পরিচয় হলো এটি আফ্রিকার অন্যতম প্রবাল দ্বীপ।
 
এর উপকূলজুড়ে ছড়িয়ে আছে প্রবালপ্রাচীর। সুওয়াকিনের সমাজকাঠামো দেখলে বোঝা যায় এর বিস্তার ঘটেছিল মসজিদকে কেন্দ্র করে। শহরের প্রাচীন দুটি মসজিদের নাম হানাফি মসজিদ ও শাফেয়ি মসজিদ। ভূগোলবিদ টলেমির বর্ণনায় সর্বপ্রথম সুওয়াকিন বন্দরের বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি এটাকে ‘সৌভাগ্যের বন্দর’ আখ্যা দেন।
 
 
তিনি বলেন, এটা হলো দীর্ঘ খাতের পর একটি শুয়ে থাকা বৃত্তের মতো। সুওয়াকিন শহরের গোড়াপত্তন হয় খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকে। উত্তরের আইজাব বন্দরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে, যেখানে বাণিজ্যের ওপর অতিরিক্ত মাসুল ধার্য করা হতো। ১৪২৯ খ্রিস্টাব্দে আইজাবের পতন হলে সুওয়াকিন লোহিত সাগরের আফ্রিকা প্রান্তরের গুরুত্বপূর্ণ পোতাশ্রয়ে পরিণত হয়। ধীরে ধীরে এর ব্যস্ততা ও অবদান বাড়তে থাকে। খ্রিস্টীয় ১৬ শতকে বন্দরটি তুর্কিদের শাসনাধীন হয়।
 
রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনাগ্রহ, বিকল্প বন্দর গড়ে ওঠা ইত্যাদি কারণে সুওয়াকিন অনেকটাই পরিত্যক্ত অবস্থা পৌঁছে গেছে। প্রবালে তৈরি ভবনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বহু প্রাচীন স্থাপত্য ধসে গেছে। তবু এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব সবাই উপলব্ধি করে এবং প্রাচীন হজের পথ হিসেবে সুদানির সুওয়াকিনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। প্রাচীন এই বন্দরনগরীর সৌভাগ্য হলো যারাই এখানে বিজয়ী হিসেবে পা ফেলেছে তারাই এর স্থাপত্যশৈলীতে নিজস্বতার ছাপ রেখেছে।
 
স্থানীয় রীতি ও জলবায়ুর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে তা। ফলে সুওয়াকিন এখন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মিলনমেলাও বটে। তবে তার নির্মাণসামগ্রীতে সব সময়ই প্রবালের আধিপত্য রয়েছে। স্থানীয় লোকজন নির্মাণকাজে প্রবালের নানামুখী ব্যবহার করে থাকে। ২০১৮ সালে তুর্কি সরকার ৯৯ বছরের জন্য সুওয়াকিন বন্দর লিজ নিয়েছে। তারা এটাকে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায় এবং প্রাচীন হজের পথটিও পুনরায় চালু করতে চায়।
 
তথ্যসূত্র: স্কয়ার কুফিক ও মিডল ইস্ট আই
captcha