IQNA

ইথিওপিয়ার ঐতিহাসিক নাজাশি মসজিদ পুনর্নির্মাণ সম্পন্ন

18:53 - July 11, 2025
সংবাদ: 3477684
ইকনা- ইসলামের প্রাথমিক যুগের সাক্ষ্য বহনকারী ঐতিহাসিক নাজাশি মসজিদের পুনর্নির্মাণকাজ ইথিওপিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম TRT-এর বরাতে IQNA জানিয়েছে, তুরস্কের সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থা (TİKA) ঘোষণা করেছে যে, তারা ইথিওপিয়ার নাজাশ গ্রামে অবস্থিত নাজাশি মসজিদ ও সমাধি পুনর্নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছে।
এই গ্রামটি আফ্রিকায় মুসলমানদের প্রথম আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত এবং এটি রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে প্রায় ৭৯০ কিমি উত্তরে, টাইগ্রে অঞ্চলে অবস্থিত।
এই প্রকল্পটি ইথিওপিয়ান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে এবং গৃহযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত এই ঐতিহাসিক স্থাপনার সংস্কার সম্ভব হয়েছে।
ধারণা করা হয়, এই মসজিদ প্রায় ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয় এবং এটি আফ্রিকার প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি, যা এই অঞ্চলে ইসলামের প্রাথমিক উপস্থিতির সাক্ষ্য দেয়।
TİKA এক বিবৃতিতে জানিয়েছে: সংস্কারকাজের অংশ হিসেবে সমাধির গম্বুজ, মসজিদের মিনার, প্রাচীর এবং বহু-উপযোগী হলঘরের কাঠামোগত অংশসমূহ মেরামত করা হয়েছে। এছাড়াও, সময়ের পরিক্রমা এবং আবহাওয়ার কারণে যে ক্ষয়প্রাপ্তি ঘটেছিল তা সারিয়ে তোলা হয়েছে।
এই পুনর্নির্মাণ কাজটি ইথিওপিয়ার ঐতিহ্য সংস্থা এবং আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও পর্যটন দপ্তরের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে এবং এতে স্থানীয় ও ওসমানীয় স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণ দেখা গেছে, যা মসজিদটির পূর্ব গৌরব ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করেছে।
তুর্কি সংস্থাটি আরও জানায়, TİKA-র সহায়তায় সম্পন্ন হওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে নাজাশি সমাধি ও মসজিদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত করা সম্ভব হয়েছে। এটি তুরস্কের বিদেশে অবস্থিত অন্যতম মূল্যবান ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ।
এই মসজিদটির নাম রাখা হয়েছে নাজাশির নামে — যিনি ছিলেন হাবশার (ইথিওপিয়ার) ন্যায়পরায়ণ রাজা এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলিমদের প্রথম হিজরতের সময় হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।
নাজাশি সমাধি ও মসজিদকে মুসলিমদের প্রথম অভিবাসী আবাসস্থল হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি হাবশা জনগণের আতিথেয়তার প্রতীক। মসজিদ প্রাঙ্গণে মূল ভবনের পেছনে একটি সমাধিস্থল রয়েছে যেখানে প্রাথমিক যুগের ১৫ জন মুসলিম অভিবাসীর কবর রয়েছে, যারা মক্কার মুশরিকদের নির্যাতনের কারণে নবুয়তের প্রারম্ভেই এই অঞ্চলে এসেছিলেন।
TİKA এই প্রকল্পটিকে তাদের অন্যতম "গুরুত্বপূর্ণ পুনর্গঠন প্রকল্প" বলে উল্লেখ করেছে। এই মসজিদটিকে অনেকেই ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় মসজিদ বলে মনে করেন এবং ইথিওপিয়ার মুসলমানরা একে “দ্বিতীয় মক্কা” নামে অভিহিত করে। উল্লেখ্য, এটি ২০১৯ সালেও একবার সংস্কার করা হয়েছিল, কিন্তু ২০২০-২০২২ সালের গৃহযুদ্ধে টাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের ভারী অস্ত্রের হামলায় এটি আংশিক ধ্বংস হয়, যার মধ্যে মিনারও ছিল।
নাজাশি সমাধি ও মসজিদ মুসলিম ও অমুসলিম উভয়ের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাওয়াতের শুরুর সময়ের সহাবস্থান ও সংহতির প্রতীক এবং ইথিওপিয়া ও আফ্রিকার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ।
এই স্থানটি স্থানীয় পর্যটন শিল্পেও ভূমিকা রাখে এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি ইথিওপিয়ার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতীক এবং বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। এর গুরুত্ব কেবল ঐতিহাসিক নয়, বরং এটি সীমান্ত ও সংস্কৃতির ঊর্ধ্বে একটি যৌথ ঐতিহ্যের প্রতিফলন। 4293396#

captcha