IQNA

আল জাজিরার বিশ্লেষণ;

ইসরায়েল কেন ভয় পাচ্ছে নিউইয়র্কের মুসলিম মেয়র জাহরান মামদানিকে?

12:26 - November 11, 2025
সংবাদ: 3478411
ইকনা : আল জাজিরা তাদের এক বিশদ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েলের সব রাজনৈতিক দলের নেতারা নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র জাহরান মামদানির বিজয়ে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন।
জাহরান মামদানি এক নাটকীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক রাজধানী নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিসেবে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে পরাজিত করেছেন, যিনি শহরের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনও পেয়েছিলেন।
আল জাজিরা লিখেছে, মামদানি কখনও তার পরিচয় বা অবস্থান গোপন করেন না, এবং ঠিক এই খোলামেলাতা তার বক্তব্যকে আরও প্রভাবশালী করেছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র হলো ফিলিস্তিন দখলে ইসরায়েলের প্রধান সহযোগী”, এবং ফিলিস্তিন প্রশ্নে নিরব থাকা কোনো প্রগতিশীলতার পরিচায়ক নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই মামদানি ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। তিনি সেখানে “স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন” নামে সংগঠনের শাখা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সবসময় ফিলিস্তিনি প্রতীকের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতেন — যেমন, কেফিয়াহ পরিধান করা এবং ল্যাপটপে “End Israeli Apartheid” লেখা স্টিকার লাগানো।
২০২৩ সালের মে মাসে, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে মামদানি “Not on Our Dime” নামে একটি বিল উপস্থাপন করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতায় নিউইয়র্ক রাজ্যের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করা। তিনি আরও ঘোষণা করেন যে মেয়র নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্র–ইসরায়েল অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার বিষয়ক কাউন্সিল বিলুপ্ত করবেন, যা পূর্ববর্তী মেয়র এরিক অ্যাডামস গঠন করেছিলেন।
তিনি ২০২৩ সালের অক্টোবরে খোলাখুলিভাবে বলেন, “ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে, এবং বিবেকবান মানুষদের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধের দাবি জানানো।” এমনকি তিনি ঘোষণা করেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্ক সফরে এলে তাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করার উদ্যোগ নেবেন।
মামদানি বলেন, তিনি “ধর্মভিত্তিক কোনো শ্রেণিবিন্যাসমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা” মেনে নিতে পারেন না এবং কেবল সমঅধিকারভিত্তিক নাগরিক রাষ্ট্র হিসেবেই ইসরায়েলকে বৈধ মনে করেন।
আল জাজিরা বিশ্লেষণে জানিয়েছে, ইসরায়েলের ভয় শুধু মামদানির অবস্থান নয়, বরং এই বিজয় যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, ইসরায়েলবিরোধী ও ফিলিস্তিন-সমর্থক জনমতের গভীর পরিবর্তনের প্রতীক।
রিপোর্টে বলা হয়, নিউইয়র্কের মতো শহরে এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের পক্ষে ও ইসরায়েলের সমালোচক, জয়লাভ করতে পারেন — এটি পশ্চিমা সমাজে মতামতের বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। যা আগে অকল্পনীয় ছিল, “তুফানুল আকসা”–এর পর এখন বাস্তবতা হয়ে উঠেছে।
এই পরিবর্তনই সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করছে ইসরায়েলকে, কারণ এতে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দল ভবিষ্যতে “ইসরায়েল-বিরোধী” দলে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
উল্লেখ্য, জাহরান মামদানি উগান্ডার কাম্পালায় জন্মগ্রহণ করেন, সাত বছর বয়সে পরিবারসহ নিউইয়র্কে অভিবাসন নেন। নিউইয়র্কের সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে তিনি ব্রঙ্কস হাই স্কুল অফ সায়েন্স থেকে পাস করে বোডউইন কলেজ থেকে আফ্রিকান স্টাডিজে ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আন্দোলনে অংশ নেন। 4315857#
 
captcha