ইসলামের ইতিহাস হযরত আলীর মর্যাদা এবং ফজিলতে পরিপূর্ণ। এছাড়াও পবিত্র কোরআন ও হাদিসে হযরত আলীর (আ.) উদ্দেশ্যে বহু প্রশংসা এবং মর্যাদার বিষয় বর্নিত হয়েছে। এত কিছুর পরও ওহাবিরা হযরত আলীকে (আ.) অসম্মান করার শয়তানি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসলামের প্রথম যুগ থেকে বিশেষ করে রাসূল(সা.)-এর ওফাতের পর থেকে অহলে বাইতের সাথে তিন ধরণের আচরণ করা হয়েছে। প্রথম দল অহলে বাইতের মর্যাদাকে স্বীকার করে তাদেরকে ভালবেসেছে এবং তাদের অনুসরণ করেছে। দ্বিতীয় দল ছিল নির্বাক। আর তৃতীয় দল ছিল আহলে বাইতের শত্রু তারা তাদেরকে অনুসরণ তো করতই না বরং তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের মিথ্যা প্রচার করত এবং গালাগাল করত।
মাবিয়া আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলীর(আ.) বিরুদ্ধে এত বেশী মিথ্যা প্রচার করেছিল যে তিনি যখন নামাজরত অবস্থায় মসজিদে শহীদ হন তখন তারা বলেছিল আলী নামজও পড়ত! আর বর্তমানে ইসলামের নামধারী মাবিয়ার অনুসারীরাও পবিত্র কোরআনও ও হাদিসে হযরত আলীর (আ.) মর্যাদাকে অস্বীকার করে।
সূরা সাফফাতের ২৪ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে কিয়ামতের দিন হযরত আলীর (আ.) বেলায়াত তথা ইমামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে: «وَقِفُوهُمْ إِنَّهُم مَّسْئُولُونَ»
এবং তাদের থামাও (এজন্য যে) তাদের জিজ্ঞেস করা হবে।
সূরা ওয়াকিয়ার ২৩ নং আয়াতে বর্ণিত হেয়ছে: «وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ، أُولئِک الْمُقَرَّبُونَ»
অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী, তারাই হবে (আল্লাহর) নৈকট্যপ্রাপ্ত। তারা নিয়ামতে পূর্ণ উদ্যানসমূহে থাকবে;
সূরা সূরা বাকারার ২০৭ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে: « وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاء مَرْضَاتِ اللّهِ»
এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ (এরূপ) বান্দাদের প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল ।
যখন মক্কার কাফিররা সম্মিলিতভাবে রাসূল (সা.)-কে হত্যা করার পরামর্শ করে তাঁর গৃহ অবরোধ করল এবং আল্লাহ তাঁকে অবহিত করলেন তখন তিনি হিজরতের উদ্দেশ্যে হযরত আলী (আ.)-কে বললেন, ‘কাফিররা আমাকে শয্যায় হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে। তুমি আমার স্থানে শুয়ে নিজেকে চাদরে ঢেকে ঘুমিয়ে থাক যাতে তারা মনে করে যে, আমি ঘুমচ্ছি এবং বাড়ি থেকে বের হয়ে যাইনি।’ হযরত আলী (আ.) বললেন, ‘আমি বেঁচে থাকি বা না থাকি, আপনার নিরাপত্তা অবশ্যই কাম্য।’ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ হযরত আলী (আ.)-এর প্রশংসায় আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন যে, আল্লাহ জিবরীল ও মিকাইল-এর প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন, ‘আমি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব রচনা করেছি এবং একের পরমায়ু অপরের থেকে বেশি করেছি। তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে, নিজ আয়ু নিজ ভাইকে দিয়ে দেবে। কিন্তু উভয়েই অস্বীকার করলেন। তখন আল্লাহ তাঁদের বললেন, ‘আমি আমার ওলী আলী এবং আমার নবী মুহাম্মাদ-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব রচনা করেছি। তাকিয়ে দেখ, আমার ওলী আমার নবীর জন্য কীরূপে নিজ জীবন উৎসর্গ করতে উদ্যত হয়েছে এবং নবীর শয্যায় নির্ভয়ে ঘুমিয়ে আছে। তোমরা উভয়ে এখন পৃথিবীতে অবতরণ কর এবং আলীকে শত্রুদের থেকে রক্ষা কর।’ এ কথা শুনেই তাঁরা উভয়ে পৃথিবীতে আগমন করলেন এবং জিবরীল আলীর মাথার দিকে এবং মিকাইল তাঁর পায়ের দিকে বসলেন। তখন জিবরীল হযরত আলীকে উদ্দেশ করে বলতে শুরু করলেন, ‘হে আবু তালিবের সন্তান! ধন্যবাদ। আপনার তুলনা কোথায় আছে যে, স্বয়ং আল্লাহ নিজ ফেরেশতাদের কাছে আপনার কারণে গর্ব করেছেন।’ (তাফসীরে সালাবী এবং ইমাম গাজ্জালী রচিত ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন দ্রষ্টব্য)। সূত্র: শাবিস্তান