IQNA

ক্ষমতার স্বাদ পেতে জাতির সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সৌদি প্রিন্স

4:12 - April 05, 2018
সংবাদ: 2605437
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরাইয়েল তার জন্মের ৭০ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। দীর্ঘ এই সময়ে দখলদার এই দেশটিকে মাত্র তিনটি মুসলিম দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। সেটিও ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর কিছু কৌশগত কারণে। যদিও ইসরায়েল বছর বছর ফিলিস্তিনি ভূখন্ড দখল করে তার সীমানা বৃদ্ধি করে চলেছে। তারপরেও মুসলিম বিশ্ব এখনও ইসরায়েলের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে না।

 
বার্তা সংস্থা ইকনা: তবে সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম বিশ্বের প্রধানকেন্দ্র সৌদি আরবের সাথে ইসরায়েলের ঘনিষ্টতা বাড়ায় অবৈধ এই রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব মেনে নেয়া বা না নেয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।

সৌদি প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান মার্কিন পত্রিকা দ্যা আটলান্টিককে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ভূমিতে বসবাসের পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

এতেই তিনি ক্ষান্ত হননি আরেকটু বাড়িয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং আমরা যদি ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও শান্তি স্থাপন করতে পারি তাহলে মিশর, জর্দানসহ পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত আরব দেশগুলো ব্যাপক লাভবান হবে।

সৌদি প্রিন্স তার এই বক্তব্যে কার্যত পররাষ্ট্রনীতিতে তাদের দীর্ঘ অবস্থান পরিবর্তন করে ইসরায়েলকে স্বীকৃতির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সৌদি আরব তার অভ্যন্তরীণ নীতি পরিবর্তনের সাথে সাথে পররাষ্ট্রনীতিতেও কেন এতো বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে? মধ্যপ্রাচ্য বিষয় বিশ্লেষকদের কাছে সেটিই এখন আলোচ্য বিষয়।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুধুই ক্ষমতা গ্রহণ নয়, ইরানের শক্তি খর্ব করে নিজ দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতেই প্রিন্স এসব করছেন। আবার কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, শুধু্ই ক্ষমতা নয় সৌদির ভঙ্গুর অর্থনীতিকে রক্ষা করতেই প্রিন্স উদ্যোগ নিয়েছেন।

মুহাম্মদ বিন সালমান এখনো সৌদি আরবের বাদশাহ না হলেও তিনিই মূলত সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন তারই হাতে। বাদশাহর পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তিনিই যে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি তা প্রমাণের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরবর্তী বাদশাহ হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়েছেন।

সৌদি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফুয়াদ ইব্রাহিম মনে করেন, আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনগণ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধ সোচ্ছার হয়েছে। সৌদি আরবেও ভেতরে ভেতরে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায় রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে একত্রিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় রাজতন্ত্র বিরোধী বা কোনো উগ্র গোষ্ঠী যাতে বাদশাহর আসন গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান আমেরিকার আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন। তিনি নিজেকে সৌদি আরবের প্রকৃত শাসক ও সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন।

তবে সৌদি পররাষ্ট্র নীতিতে এই পরিবর্তন ফিলিস্তিনিদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে দাবি করেছে হামাস সহ ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের জন্য আন্দোলন রত অন্যান্য সংগঠণগুলো।

তারা আপোষের পরিবর্তে দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামের পথকেই বেছে নিয়েছেন। ইসরাইলের দখলদারিত্বের প্রতিবাদ জানাতে গত শুক্রবার থেকে গাজায় ইসরাইলি সীমান্তের কাছে সমাবেশ করা শুরু করে এবং এখনও তা অব্যাহত আছে। ফিলিস্তিনিদের এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত হওয়া ছাড়াও প্রায় ১৬০০ ব্যক্তি আহত হয়েছে। মুসলিম বিশ্বসহ পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিগুলোও ওই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। তবে সৌদি আরব সেই সময় নিন্দা না জানিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলো। প্রিন্সের এই বক্তব্য ফিলিস্তিনিতে জাতি তথা আরব জাতির সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আরটিভি

captcha