IQNA

বিহারে ভেসে ওঠা মসজিদ শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়

0:02 - December 03, 2022
সংবাদ: 3472922
তেহরান (ইকনা): ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বিহারের চিরাইলা গ্রামের নুরি মসজিদের আশপাশ এলাকায় খরা ও বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব কিভাবে সেখানকার অধিবাসীদের বাস্তুচ্যুত করেছে সেই গল্প উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। ৩৪ বছর আগে বাঁধ নির্মাণের পর শৈশবের স্মৃতিবিজরিত মসজিদসহ পুরো গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়। 
ভারতের বিহার অঞ্চলের চিরাইলা গ্রামের নুরি মসজিদ ঘিরেই বেড়ে উঠেছেন ৫০ বছর বয়সী মুহাম্মদ আফতাব হোসাইন। শৈশবে অন্যদের মতোই ক্রিম রঙের এ মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেন তিনি। মসজিদ খালি থাকলে গ্রামের শিশুদের সঙ্গে তিনিও গম্বুজ আকৃতির এ মসজিদে চিৎকার করতেন। চিৎকারের প্রতিধ্বনি তাদের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দিত।
 
কিন্তু ৩৪ বছর আগে বাঁধ নির্মাণের পর শৈশবের স্মৃতিবিজরিত মসজিদসহ পুরো গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়। এরপর পাশের হারদিয়া গ্রামে গিয়ে বসতি গড়েন সবাই।
কিন্তু এ বছরের উচ্চ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের অভাবে পানির স্তর নেমে যায়। গত সেপ্টেম্বরে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার পর এবারই প্রথম ভেসে উঠে মসজিদটি। এরপর থেকেই শুরু হয় কৌতূহলী পর্যটকদের ভিড়। পাটনা থেকে দক্ষিণে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার দূরত্বে ফুলওয়ারিয়া বাঁধ এখন সবার গন্তব্য। প্রতিদিন দর্শনার্থীরা তা দেখতে আসে। প্রথমদিকে মসজিদের মূল স্থাপনা দেখতে কাদা মাড়িয়ে অনেকে এর মূল ভবনে আসে। অনেকে তা পরিষ্কার করার চেষ্টা করে। একজন মসজিদের বাইরে আজানও দেয়। তবে ভেসে ওঠার পর বৃষ্টির কারণে আবারও তাতে পানির স্তর অন্তত দুই মিটার (সাত ফুট) বৃদ্ধি পায়। ফলে মসজিদের মূল কাঠামো ফের পানিতে ঢাকা পড়ছে।
 
চিরাইলা গ্রামের সাবেক বাসিন্দা আফতাব হোসাইন বলেন, ‘আমরা জানতাম যে মসজিদটি এখানেই আছে। বাঁধ নির্মাণের পরই মসজিদটি পুরোপুরি ডুবে যায়। মসজিদটি নিয়ে এখন সবার মধ্যে বেশ আগ্রহ। কিন্তু মসজিদটি আমাদের গ্রামের হারানো জীবনের কথাও মনে করিয়ে দেয়। ’ অনেক দর্শনার্থীর কাছে তা অস্বাভাবিক দৃশ্য মনে হলেও হোসাইন বলেন, ‘আমাদের কাছে মসজিদটি অলৌকিক কিছু নয়। ’
 
চিরাইলার আরেক বাসিন্দা বিলাল আহমাদ জানান, ‘পুরনো মসজিদের আবির্ভাব গ্রামবাসীর হারিয়ে যাওয়া জীবনধারা ও সময়কে স্মরণ করিয়ে দেয়। গ্রামের সবার স্মৃতির শিকড় মসজিদের সঙ্গে বাঁধা। আমরা এই গ্রামেও একই ধরনের মসজিদ তৈরি করতে চেয়েছি; কিন্তু সেই বিস্ময় আবার তৈরি করা সম্ভব নয়। ’
 
জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, মসজিদ ভেসে ওঠার বিষয়টি ভারতের দরিদ্রতম রাজ্যের ভয়াবহ খরা পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। হোসেনের মতো অনেকের জন্য তা বাস্তুচ্যুত হওয়ার দুঃসহ স্মৃতির বাহক। কারণ আশির দশকের মধ্যভাগে চিরাইলাসহ ডজনখানেক গ্রামের বাসিন্দারা তাদের বাড়ি-ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।
 
শ্রমিক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে হুসাইন বলেন, যে রাজমিস্ত্রিরা এর নকশা করেছিলেন, তাঁরা সুরকি চুনার (চুন মিশ্রিত পোড়া মাটির ইট থেকে তৈরি) কাজ জানতেন। ওগুলো দিয়েই মসজিদটি মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী করে তৈরি করা হয়। কাজটি বেশ শ্রমসাধ্য ও দক্ষতার পরিচয়ও বটে। হোসেনসহ অনেকের বিশ্বাস, ১৬ থেকে ১৯ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলিম রাজবংশ মোগলদের ভারত শাসনের পর মসজিদটি  নির্মাণ করা হয়েছে। অবশ্য মসজিদের তিনটি গম্বুজ, আটটি মিনার ও খিলান মোগল আমলে নির্মিত ভারতের বিভিন্ন ভবনের সঙ্গে মিল রয়েছে।
 
দুঃসহ স্মৃতিচারণা করে হোসাইন বলেন, ‘চিরাইলা গ্রাম থেকে হারদিয়ার দূরত্ব সাত কিলোমিটার। ১৯৮৫ সালে চিরাইলাসহ ডজনখানেক গ্রামের অধিবাসীকে হারদিয়ায় চলে যেতে বাধ্য করা হয়। আমাদের কেউ যেতে না চাইলেও এক মাসের মধ্যে সবাইকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এমনকি কর্তৃপক্ষ হুমকি দেয় যে গ্রাম না ছাড়লে বন্যায় পুরো সবাই তলিয়ে যাবে। ’ একসময় পুরো গ্রাম ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু পবিত্র হিসেবে মসজিদটি অক্ষত রাখা হয়।
captcha