আরব বিশ্লেষক আবদুলবারি আতওয়ান, মঙ্গলবার তার প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনাবলী এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন: ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অবশ্যই ইতিহাসে সেই প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্মরণ করা হবে যিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড সৈন্য পাঠিয়ে আমেরিকাকে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসকে অভিবাসীদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন, যাদের বেশিরভাগই ল্যাটিন আমেরিকার দেশ থেকে এসেছে। ট্রাম্পের দৃষ্টিতে, তাদের অপরাধ হল ট্রাম্প এবং তার সরকার কর্তৃক অভিবাসীদের বিরুদ্ধে জারি করা আইনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ।
তিনি আরও বলেন: ট্রাম্প তার বন্ধু, মিত্র এবং শিক্ষক অর্থাৎ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পথ অনুসরণ করছেন, যে কিনা তার মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের সাথে গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে। এমনকি ট্রাম্পের সেই আইনগুলোর প্রতিও কোন শ্রদ্ধা নেই যা আমেরিকাকে একটি বড় শক্তি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। বর্ণবাদী প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে সহাবস্থানের রীতির প্রতিও তার কোনও শ্রদ্ধা নেই। আতওয়ান আরো লিখেছেন: বৃহৎ ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের রাজধানী লস অ্যাঞ্জেলেস একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, সর্বত্র ট্যাঙ্ক ঘুরাঘুরি করছে এবং সৈন্যরা বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে অভিযান চালিয়ে প্রতিটি অভিবাসীকে খুঁজে খুঁজে বের করছে এবং অমানবিক ও নিষ্ঠুরভাবে তাদের আটক করে তাদেরকে বহিষ্কার করছে। ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যকে ঘৃণা করেন এবং সেখানে বর্ণবাদী ও রাজনৈতিক বিদ্বেষ চরিতার্থ করছেন। কারণ এটি একটি উদারপন্থী এবং বামপন্থী রাজ্য যার বাসিন্দারা সর্বদা ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে ভোট দেয়। এই রাজ্যটি ডেমোক্র্যাটদের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি এবং এর বেশিরভাগ বাসিন্দাই কৃষ্ণাঙ্গ ল্যাটিন আমেরিকান। এই রাজ্যের গভর্নর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন জনপ্রিয় ডেমোক্র্যাটিক ব্যক্তিত্ব এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
তিনি আরও বলেন: “এই লোকেরা যুক্তরাষ্ট্রেরই নাগরিক এবং তাদের ওপর হামলাকারীরা হচ্ছে সেই একই শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী যারা ইউরোপ থেকে এসে রেড ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছিল যারা ছিল এই দেশের আদি বাসিন্দা। ঠিকই একইভাবে গাজা এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহু যা করছে, একই আচরণ করা হচ্ছে সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনের বিরুদ্ধেও। ট্রাম্পের মতো এই বর্ণবাদী শাসক আমেরিকার সবচেয়ে স্বৈরাচারী, বর্ণবাদী এবং অত্যাচারী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। ইউক্রেন থেকে মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং দক্ষিণ এশিয়ায়সহ বিশ্বের বেশিরভাগ যুদ্ধের পিছনে তারাই রয়েছে।”
বিশ্লেষক বলেন: “ট্রাম্প এবং তাকে উস্কানিদাতা ইহুদিবাদী মাফিয়ার এই নীতিগুলো অবশ্যই আমেরিকার পতন ও নিরাপত্তাহীনতা ডেকে আনবে এবং সেদেশে গৃহযুদ্ধের আগুন জ্বালাবে। লস অ্যাঞ্জেলেসে এই দমনমূলক আচরণ যুক্তরাষ্ট্রকে সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে।”
আতওয়ান জোর দিয়ে বলেন: ক্যালিফোর্নিয়া নিজেই একটি মহাদেশ এবং এর অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সেনাদের আক্রমণ অবশ্যই রাজ্যটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কাঠামো থেকে পৃথক করার পথ প্রশস্ত করবে যার ফলস্বরূপ, ওই রাজ্যটি স্বাধীনতা এবং একটি পরাশক্তিতে রূপান্তরিত হবে যারা পরবর্তীতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। এটাও অসম্ভাব্য নয় যে এর দক্ষিণ প্রতিবেশী টেক্সাস এখনই বা আরো পরে ক্যালিফোর্নিয়ার পথ অনুসরণ করবে।
বিশ্লেষক তার লেখার শেষাংশে বলেছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার মুক্ত নাগরিকরা এমন সময় ট্রাম্পের বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে, যখন আরব শাসকরা দেউলিয়া মার্কিন অর্থনীতিকে বাঁচাতে ট্রিলিয়ন ডলার নিয়ে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করছে এবং ট্রাম্পকে ঘুষ দিচ্ছে।
পার্সটুডে