IQNA

আর্জেন্টিনায় ইসলামের ইতিহাস

22:34 - June 23, 2025
সংবাদ: 3477589
ইকনা- আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি বৃহৎ দেশ। এর পশ্চিমে চিলি, উত্তরে বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ে, উত্তর-পূর্বে ব্রাজিল ও উরুগুয়ে এবং দক্ষিণে দক্ষিণ মহাসাগর। দেশটির আয়তন প্রায় ২৭ লাখ ৮০ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার। ২০২৩ সালের হিসাবে জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি, যাদের বেশির ভাগ শহরাঞ্চলে বাস করে।

রাজধানী বুয়েনস এইরেস দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম শহর। আর্জেন্টিনার অর্থনীতি কৃষি, খনিজ সম্পদ ও পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। ধর্মীয় দিক থেকে দেশটি প্রধানত খ্রিস্টান। আর্জেন্টিনার জনগণের ৯২ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক।

তবে ইসলাম, ইহুদিসহ অন্যান্য ধর্মেরও লোক আছে দেশটিতে।

আর্জেন্টিনার ইতিহাস প্রাক-কলম্বিয়ান যুগে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুরু হয়, যারা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্ম পালন করত। ১৬ শতাব্দীতে স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক করার মাধ্যমে খ্রিস্টধর্ম প্রধান ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে আর্জেন্টিনার ভূখণ্ডে ইসলামের কোনো উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল না।

ইসলামের প্রথম উপস্থিতি আর্জেন্টিনায় ১৫ শতাব্দীতে স্প্যানিশ অভিযানের সময় শুরু হয়। মোরিস মুসলিম, যারা উত্তর আফ্রিকার মুসলমান ছিল। তারা স্পেনীয় অভিযাত্রীদের সঙ্গে আমেরিকায় আসে। তারা স্পেনে স্প্যানিশ ইনকুইজিশ বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠানের নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আর্জেন্টিনায় বসতি স্থাপন করে। এ সময়ে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কর্ডোভার নাম করা হয় স্পেনের কর্ডোভা শহরের নামানুসারে, যা মুসলিম শাসনামলে ইসলামী সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল।

১৯ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং ২০ শতাব্দীর শুরুতে, আর্জেন্টিনায় সিরিয়া ও লেবানন থেকে আরব অভিবাসীদের একটি বড় ঢেউ আসে। এই অভিবাসীদের মধ্যে খ্রিস্টান, মুসলমান ও ইহুদিরা ছিল, তবে খ্রিস্টানরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। আনুমানিক এক-চতুর্থাংশ অভিবাসী মুসলমান ছিল। এই অভিবাসন ইসলামের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বুয়েনস এইরেস বন্দরের কাছে এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে আরব সম্প্রদায়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।

আর্জেন্টিনার ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান মুসলমানদের ধর্ম প্রচার ও উপাসনালয় নির্মাণের স্বাধীনতা প্রদান করে। ১৯৮০-এর দশকে বুয়েনস এইরেসে প্রথম দুটি মসজিদ নির্মিত হয়। ১৯৯৬ সালে সৌদি আরবের সহায়তায় কিং ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার উদ্বোধন করা হয়। ইসলামিক অর্গানাইজেশন অব লাতিন আমেরিকা (IOLA), যার সদর দপ্তর আর্জেন্টিনায়, লাতিন আমেরিকায় ইসলামী কার্যক্রম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৯২ সালে বুয়েনস এইরেসে ইসরায়েলি দূতাবাসে এবং ১৯৯৪ সালে AMIA কেন্দ্রে বোমা হামলা আর্জেন্টিনার ইতিহাসে বৃহত্তম সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই ঘটনাগুলো মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর বিতর্ক সৃষ্টি করে, যদিও এগুলোর সঙ্গে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের সরাসরি সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়নি। এই ঘটনাগুলো ধর্মীয় সহনশীলতার ওপর প্রশ্ন তুললেও আর্জেন্টিনা সরকার ও সমাজ ধর্মীয় ঐক্যের দিকে মনোনিবেশ করেছে।

আর্জেন্টিনার মুসলিম সম্প্রদায় মোট জনসংখ্যার প্রায় ২.৫ শতাংশ। সংখ্যায় তারা প্রায় ১১ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৪ জন। এই সম্প্রদায় মূলত আরব বংশোদ্ভূত, তবে আফ্রিকান, তুর্কি এবং স্থানীয় ধর্মান্তরিত মুসলমানরাও রয়েছে। আর্জেন্টিয়ার বেশির ভাগ মুসলমান সুন্নি। মুসলিম সম্প্রদায় আর্জেন্টিনার সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষা কার্যক্রম এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক উদ্যোগের মাধ্যমে ইসলামী সংস্কৃতি প্রচার করে। মুসলিম শিশুদের মধ্যে ইসলামী শিক্ষা প্রসারে আরব আর্জেন্টিনিয়ান ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হয়।

বর্তমানে আর্জেন্টিনার বিভিন্ন শহরে ১৫০টিরও বেশি ইসলামিক সেন্টার আছে। এর তত্ত্বাবধানে অসংখ্য মাদরাসা, স্কুল ও কলেজ পরিচালিত হয়। ১৯৯৬ সালে সৌদি বাদশাহর সহায়তায় কিং ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নামে দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ স্থাপিত হয়। প্রথমে এর মূল আয়তন ছিল ২০ হাজার স্কয়ার মিটার। ১৯৯২ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনিমে সৌদি সফরের পর ওই মসজিদের জন্য ৩৪ হাজার স্কয়ার মিটার জায়গার ব্যবস্থা করেন। অত্যাধুনিক মসজিদ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। মসজিদের আওতায় পাঠাগার, দুটি স্কুল ও বিশাল গার্ডেন রয়েছে।

(Wikipedia & CIA World Factbook)

captcha