IQNA

আল-আজহার অবজারভেটরি:

"মানবিক শহর" প্রকল্প একটি বৃহৎ বন্দিশিবির গঠনের প্রচেষ্টা

19:19 - July 19, 2025
সংবাদ: 3477727
ইকনা- আল-আযহারের উগ্রপন্থা বিরোধী ওয়াচডগ একটি বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েল কর্তৃক গাজা উপত্যকার রাফা শহরে নির্মিতব্য তথাকথিত "মানবিক শহর" প্রকল্পটি একটি সুসংগঠিত প্রয়াস, যার লক্ষ্য হলো গাজার স্থানীয় বাসিন্দাদের স্থানচ্যুত করে তাদের জন্য এক ধরনের বড় ধরনের সমষ্টিগত বন্দিশিবির প্রতিষ্ঠা করা।

এটি ইসরায়েলি দখলদারদের একটি সুপরিকল্পিত অপারেশন, যার মাধ্যমে তারা গাজার জনগণকে জোরপূর্বক সরিয়ে সেখানে বসতি স্থাপনের নতুন বাস্তবতা চাপিয়ে দিতে চায়। ফাঁস হওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পরিকল্পনার অধীনে প্রায় ৬ লাখ ফিলিস্তিনিকে কঠোর নিরাপত্তা চেকপয়েন্টের মধ্যে আটকে রাখা হবে, তাদের চলাচলের স্বাধীনতা হরণ করা হবে, এবং মানবিক সহায়তা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একটি মানবিক অবরোধ সৃষ্টি করা হবে।

এই পরিস্থিতি জনগণের ওপর চাপ প্রয়োগ করে তথাকথিত "স্বেচ্ছায় অভিবাসন"-এর মাধ্যমে বাস্তবে জোরপূর্বক দেশছাড়া করাকে সহজ করবে।

পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

ওয়াচডগ সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েল আগামী ৬০ দিনের মধ্যে একটি নতুন সেফ জোন গঠনের জন্য সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির সুযোগ নেবে। এটি একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় পরিচালিত গাজাবাসীদের সংগঠিতভাবে বিতাড়নের সূচনা হতে পারে এবং এটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

এছাড়া তারা বলেছে, এই "মানবিক" প্রকল্পের নামে জনগণকে প্রতারিত করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজকে আহ্বান জানায় যেন তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে ইসরায়েলের বসতি সম্প্রসারণ ও জাতিগত নির্মূলের প্রকৃত উদ্দেশ্য উন্মোচন করে।

"স্বেচ্ছায় অভিবাসন" আসলে জোরপূর্বক বিতাড়ন:

ওয়াচডগ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, বাস্তবতা হলো এই তথাকথিত "স্বেচ্ছায় অভিবাসন" কোনোভাবেই স্বেচ্ছা নয়বরং এই অভিবাসন হচ্ছে বোমা বর্ষণ, ক্ষুধা, ও গৃহ ধ্বংসের মাধ্যমে বাস্তবায়িত একটি বাধ্যতামূলক জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া।

প্রকল্পের বাস্তবতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব:

ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় এক বৈঠকে সেনাবাহিনী জানায় যে এই "মানবিক শহর" নির্মাণে এক বছরেরও বেশি সময় লাগবে এবং এর ব্যয় হবে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ব্যয় এবং দীর্ঘ সময়সীমা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি একটি নতুন, কম ব্যয়বহুল ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ দেন।

সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য এই পরিকল্পনাকে অকার্যকর বা পুরোপুরি বাতিলের লক্ষ্যে একটি অবাস্তব চিত্র উপস্থাপনের প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখছেন। প্রকল্পের আর্থিক দিকও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যেখানে প্রাথমিক ব্যয় ইসরায়েলকেই বহন করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুদ্ধের পর আরব দেশগুলোর সহায়তা পাওয়ার কিছু আশাবাদ থাকলেও, বিশেষজ্ঞরা এটিকে অত্যন্ত অনিশ্চিত মনে করছেন।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা:

এই প্রকল্পের আওতায় আধা মিলিয়ন ফিলিস্তিনিকে ত্রিপলিতে একটি অস্থায়ী তাঁবু শহরে রাখা হবে এবং তাদের গাজার উত্তরে ফিরে যাওয়ার অধিকার থাকবে না। এই পরিকল্পনা অভ্যন্তরীণভাবে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিভাগ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে, যারা একে জোরপূর্বক বিতাড়নের একটি উদাহরণ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।


আল-আযহার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা এই মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা, যা মধ্যপ্রাচ্যে আরও বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে, তা আন্তর্জাতিকভাবে উন্মোচন ও প্রতিহত করে। 4295123#

 

captcha